বিকৃত কৌতূহল আর ধর্মান্ধতা সহ নিউজিল্যান্ড মসজিদ আক্রমণের ভিডিও জিইয়ে রাখা হচ্ছে ভারতে
অনেকের আশঙ্কা ভিডিওটি একই ধরনের আক্রমণ বা প্রতিহিংসা উস্কে দিতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তি কম্পানিগুলিকে ছুঁচো মারার মত বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে মাত্র
শুক্রবার নিউজিল্যান্ড-এর একটি মসজিদে বীভৎস হত্যাকাণ্ডের ভিডিও এখনও ভারতে অনেক প্রযুক্তি-প্ল্যাটফর্মে রয়ে গেছে। কৌতূহল আর অন্ধ মুসলমান বিদ্বেষ ওই ভিডিওটিকে আপলোড করে রাখতে উৎসাহ দিচ্ছে। যদিও সোশাল মিডিয়ার কম্পানিগুলি সেটিকে সরিয়ে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে, ওই ভিডিওটি আসল কি না। ওই আক্রমণের ২৪ ঘন্টা পরেও, ভিডিওটি আমরা ফেসবুক, ইউটিউব আর টুইটারে দেখতে পাই।
এই প্ল্যাটফর্মগুলি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। অভিযোগ, অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও মার্চ ১৫, ২০১৯ তারিখে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে ঘটতে থাকা হত্যাকান্ডের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার এবং সারা বিশ্বে তা ভাইরাল হতে সাহায্য করেছে তারা।
খবরে প্রকাশ , ওই হত্যালীলার প্রথম ১৭ মিনিট, ফেসবুকে সরাসরি দেখা যায়। তারপরই ফেসবুক ওই ভিডিওটি বন্ধ করে। আঠাশ বছরের বন্দুকবাজ ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্ট-এর ফেসবুক আর ইনস্টাগ্র্যাম অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জন্মসূত্রে ট্যারান্ট অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। হত্যার দৃশ্য সরাসরি ফেসবুকে দেখানোর জন্য সে ‘লাইভ ৪’ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ক্যামেরাটি সে তার কোমরে বেঁধে নিয়েছিল, যাতে চলমান ঘটনার স্পষ্ট ছবি সে তুলতে পারে।
অত্যন্ত মর্মান্তিক ওই ঘটনার দৃশ্য দেখতে দেখতে অনেকে সেগুলিকে কোনও এক ভিডিও গেমের অংশ বলে ভুল করেছিলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই ভিডিওর কপি ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব আর হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাইরাল হতে থাকে।
ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে ওই গণহত্যায় ৪৯ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হন। এক আল নূর মসজিদেই ৪১ জন প্রাণ হারান। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আর্ডের্ন ওই ঘটনাটিকে জঙ্গি হামলা বলে বর্ণনা করেন।
শুক্রবার নিউজিল্যান্ড পুলিশ ভিডিওটি শেয়ার না করার আবেদন করেন এবং বলেন তাঁরা সেটি সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায়, ফেসবুক জানায় যে, হত্যাকান্ডের লাইভ ভিডিও সম্প্রচারিত হচ্ছে বলে স্থানীয় পুলিশ সতর্ক করে দেওয়া মাত্রই তারা পদক্ষেপ নেয়।
অ্যালফাবেট ইঙ্ক’র ভিডিও হোস্ট করার সাইট ইউটিইব জানায় যে, তারা নজরদারি চালাচ্ছে। এবং তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সমস্ত হিংসাত্মক দৃশ্য খুব দ্রুত সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে তারা।
টুইটারে অবশ্য “মস্ক অ্যাটাক” (মসজিদ আক্রমণ) বা “নিউজিল্যান্ড মস্ক অ্যাটাক” টাইপ করলেই ভিডিওটি সহজে সার্চ করা যাচ্ছিল।
অনেকেই মনে করেন ওই ভিডিওগুলি একই ধরনের হামলা বা প্রতিহিংসা উস্কে দিতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেগুলিকে সরানোর ব্যাপারে প্রযুক্তি প্লাটফর্মগুলি ছুঁচো মারার মত বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। কারণ সতর্কতার সঙ্গে সেগুলি সরাতে গেলে মানুষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। প্রায় সব প্ল্যাটফর্মেই, একটি ভিডিও সরানোর যোগ্য বলে বিবেচিত হলেই সেটি সাইট থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়।
বুম কিছু পোস্টের সন্ধান পায়, যেখানে ভিডিওটি মুসলমানদের প্রতি অন্ধ বিদ্বেষ ছড়াতে ইন্ধন জোগাচ্ছে।
বুমের কাছে একটি ‘ফরওয়ারড’ করা মেসেজে বলা হয়, আক্রমণকারী একজন মুসলমান, যে ইসলাম ও অন্য ধর্মের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনি।
আমরা দেখি যে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি আপলোড করেছেন। সঙ্গে ক্যাপশনে বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ইসলাম থেকে মুক্তি পেতে চায়’। এই প্রতিবেদন লেখার সময়, পোস্টটি ৬৬ শেয়ার পায়।
একই ধরনের ইসলাম বিরোধী টুইট সমেত আমরা ভিডিওটি টুইটারেও দেখতে পাই।