জিয়াগঞ্জে নৃশংস খুনের ঘটনা: আরএসএস-বিজেপির নেতারা কোনও রাজনৈতিক যোগ দেখছেন না
বুম মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার এবং আরএসএসের পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং কেউই এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে কোনও রাজনীতি দেখছেন না।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় একই পরিবারের ৩ সদস্যের নৃশংস হত্যার ঘটনায় রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হচ্ছে এবং বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এই ঘটনাকে পিছনে রাজনৈতিক খুন বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু বুম আরএসএসের নেতাদের সঙ্গে এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কথা বললে তারা উভয়েই এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে রাজনীতির ভূমিকার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। দিলীপ ঘোষ এও জানান যে, নিহত বন্ধুপ্রকাশ পাল খুব সম্প্রতিই তাদের সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন।
২০১৯ সালের ৮ অক্টোবর মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের স্কুল-শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালকে(৩৫) তার আট মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রী বিউটি পাল (৩০) ও ৮ বছরের শিশুপুত্র সহ অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাঁর বাড়িতেই কুপিয়ে খুন করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে তাদের মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়। পুলিশ অফিসারকে উদ্ধৃত করে হিন্দুস্তান টাইমস সংবাদপত্র জানিয়েছে, নিহত তিনজনের শরীরেই একাধিক ছুরিকাঘাতের ক্ষত রয়েছে, তবে শিশুটিকে উপরন্তু শ্বাসরোধ করেও হত্যা করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ব্যাপারে এখনও তারা কাউকে গ্রেফতার করে উঠতে পারেনি।
বুম দক্ষিণ বঙ্গে আরএসএস-এর প্রচারপ্রমুখ বিপ্লব রায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে রাজনীতির সংশ্রব বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার কথায়—“পাল কিছু দিন আগে আরএসএসে যোগ দেন। তবে এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, সেই কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সংগঠনের এমন কিছু কর্মকর্তা ছিলেন না, যে জন্য তাকে সপরিবারে নিহত হতে হবে। বরং এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে কোনও ব্যক্তিগত বিরোধের ভূমিকা থাকা সম্ভব।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে নিহতের রাজনৈতিক মতাদর্শের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, “একজন কার্যকর্তা যিনি মাত্র কয়েকটা বৈঠকে যোগ দিয়েছেন, তাকে সেই কারণে হত্যা করার সম্ভাবনা কম। তবে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে।”
বুম মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও এই হত্যাকাণ্ডে রাজনীতি জড়িত থাকার সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিয়েছেন, “আমরা এমন কোনও উদ্দেশ্য খুঁজে পাইনি যে বন্ধুপ্রকাশ আরএসএসে যোগ দিয়েছিলেন বলে তাকে মারা হয়েছে। তার প্রতিবেশীরা কিংবা তার আত্মীয়স্বজনদের কেউও তেমন কোনও ইঙ্গিত দেননি।”
১১ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ একটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে কোনও রাজনীতির ভূমিকা নেই।
তিনটি মৃতদেহ আলাদাভাবে পড়ে থাকার বীভৎস দৃশ্য সেই থেকে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং কোনও-কোনও বিজেপি নেতাও এই বীভত্স হত্যাকাণ্ডের পিছনে বন্ধুপ্রকাশের আরএসএসে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। আরএসএস বিজেপির রাজনৈতিক মতাদর্শের জনক।
নীচে এ বিষয়ে কিছু টুইটের স্ক্রিনশট দেওয়া হলো। বুম ইচ্ছাকৃতভাবেই বীভত্স ছবিগুলি এড়িয়ে গেছে।
সংবাদমাধ্যমগুলি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের জল্পনা বাড়িয়েছে
স্থানীয় আরএসএস নেতৃত্ব এই খুনের পিছনে রাজনীতির ভূমিকা না দেখলেও বেশ কিছু মূল ধারার সংবাদ-চ্যানেল এ ধরনের জল্পনা ছড়িয়েছে। যেমন জি নিউজ বুলেটিন ঘটনাটিকে “মমতার পশ্চিমবঙ্গে” এক আরএসএস কার্যকর্তার হত্যা বলে প্রচার করছে। বুলেটিনটির শিরোনাম দেওয়া হয়, “বাংলায় স্বয়ংসেবকের বলিদান” এবং বন্ধুপ্রকাশের পরিচয় হিসাবে জানানো হয়, তিনি ছিলেন আরএসএসের সদস্য। তবে সংবাদ-চ্যানেলটির পশ্চিমবঙ্গের সংবাদদাতা খুনের পিছনে কোনও রাজনীতির ভূমিকার উল্লেখ করেননি।
টাইমস নাউ সংবাদ-চ্যানেল প্রতিবেদনটির জন্য “আরএসএস কর্মী নিহত” এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছে এবং একটি শ্লেষাত্মক টুইটে দাবি করেছে—“মমতার বাংলায় এক ব্যক্তি, তার গর্ভবতী স্ত্রী এবং শিশুপুত্রকে খুন করা হয়েছে এবং যে ৪৯জন বিশিষ্ট বিদ্বজ্জন ‘গৈরিক সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে মুখর ছিলেন, এখন তারা মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।”
ইতিমধ্যে বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও চিত্র-পরিচালক অপর্ণা সেন একটি টুইটে এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন যাতে দোষীরা চরম শাস্তি পায়।