মুসলিম স্টুডেন্ট ফ্রন্ট, মুসলিম লিগ বা পাকিস্তানের পতাকা নয়; কী ভাবে কেরলে উদ্ভট বিতর্কের পাট ভাঙল
বুম দেখেছে, যে পতাকাটি ওড়ানো হচ্ছিল, সেটি পাকিস্তানের তো নয়ই, মুসলিম স্টুডেন্ট ফ্রন্টের পতাকার সঙ্গেও তার মিল নেই।
৩০ অগস্ট কেরালার একটি কলেজে মুসলিম স্টুডেন্ট ফ্রন্টের (এমএসএফ) বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর অভিযোগের পরে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
পেরাম্ব্রা পুলিশ মোট ৩০ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করে এবং সংবাদ-চ্যানেলগুলিও রিপোর্ট করে যে, পাকিস্তানের পতাকাই ওড়ানো হয়েছিল, ফলে মুসলিম স্টুডেন্টস ফ্রন্ট একটু আতান্তরে পড়ে যায়।
ছাত্র সংগঠনটি প্রথমে ভুলভাবে পতাকাটি সেলাই করার জন্য দর্জিদের ওপর দোষ চাপায়, তারপর সোমবার তারা দাবি করে যে, ফোটোগুলি সাজানো হয়েছে।
বুম ভিডিও এবং ছবি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, পতাকাটি আদৌ পাকিস্তানের নয়, তবে সেটি মুসলিম স্টুডেন্টস ফ্রন্টের কিংবা ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের পতাকাও নয়।
বিতর্ক
শনিবার পেরাম্ব্রার পুলিশ সেখানকার সিলভার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স কলেজের ৩০ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে এই মর্মে একটি মামলা দায়ের করে যে, তারা কলেজ-চত্বরে একটি সবুজ রঙের পতাকা ওড়াচ্ছিল, যেটি পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার মতো দেখতে। ছাত্ররা সকলেই মুসলিম স্টুডেন্টস ফ্রন্ট নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য, যারা ২২ অগস্ট অনুষ্ঠিত ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছিল, জানাচ্ছে দ্য হিন্দু সংবাদপত্র।
ঘটনাটির ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়ে, বিশেষত ভারতীয় জনতা পার্টির স্থানীয় সংগঠনের সরকারি ফেসবুক পেজে।
বুম ঘটনাটির ভিডিও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছে, পতাকাটি মোটেই পাকিস্তানের নয়। বুম আরও দেখেছে যে, পতাকাটি এমনকী মুসলিম স্টুডেন্টস ফ্রন্ট কিংবা ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের পতাকাও নয়।
৩০ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির ৬ সেকেন্ডের মাথায় পতাকাটিকে খুলে ধরা হচ্ছে এবং সেটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
বুম এই পতাকাটির সঙ্গে তিনটি বিভিন্ন পতাকা মিলিয়ে দেখেছে—পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের পতাকা এবং স্টুডেন্টস ফ্রন্টের পতাকা।
উপরের ছবিটি থেকেই স্পষ্ট, মুসলিম লিগের পতাকাটি পুরো সবুজ, যাতে বর্ধমান বা হ্রাসমান চাঁদের কলা আঁকা রয়েছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওর পতাকার সঙ্গে যার মিল নেই, যার পতাকার নীচে একটা সাদা বর্ডার রয়েছে এবং এক কোণে একটি তারা ও চাঁদের কলা। ভাইরাল ভিডিওর পতাকার সঙ্গে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকারও মিল নেই, কারণ সেটিতে বাঁদিকে সাদা বর্ডার রয়েছে এবং চাঁদের কলা ও তারা পতাকার মাঝামাঝি স্থাপিত রয়েছে।
স্টুডেন্ট ফ্রন্টের পতাকার সঙ্গেও ভিডিওয় দেখানো পতাকাটির বৈসাদৃশ্য স্পষ্ট।
স্টুডেন্টস ফ্রন্টের সরকারি পতাকায় সবুজ ও সাদা অংশ আড়াআড়ি অর্ধেক-অর্ধেক ভাগ করা এবং চাঁদের কলা ও তারাটি রয়েছে সবুজ অংশের বাঁদিকের কোণে। পতাকায় সংগঠনের নামের আদ্যাক্ষর msf-ও ছোট হাতের অক্ষরে সবুজ রঙে লেখা রয়েছে সাদা অংশটির উপর। কলেজে যে পতাকাটি ওড়ানো হয়, তাতে এই আদ্যাক্ষরগুলি ছিল না এবং পতাকায় সাদার চেয়ে সবুজ অংশ বেশি ছিল।
এমএসএফ-এর বিবৃতি
বুম স্টুডেন্ট ফ্রন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রথমে তারা বলে, দর্জির সেলাইয়ের ভুলে ওই রকম পতাকা তৈরি হয়েছিল। পরে তারা জানায়, ভাইরাল ভিডিওয় দেখানো পতাকাটি সাজানো ছবি। সংগঠনের জাতীয় সভাপতি টি পি আসরফ আলি বুমকে জানান, “স্টুডেন্ট ফ্রন্টের পতাকায় সাদা ও সবুজ সমানভাবে ভাগ করা এবং সাদা অংশটিতে সংগঠনের নাম সবুজ রঙে আঁকা। পেরাম্ব্রায় তোলা ভিডিওটির পতাকায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি সবুজ অংশ ছিল, যেখানে ওটি পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার মতো দেখায়। তা ছাড়া, ছাত্ররা ইংরাজিতে এমএসএফ অক্ষরগুলি আঁকতে ভুলে গিয়েছিল।” তাঁর আরও বক্তব্য—“যে দর্জি পতাকাটি সেলাই করে, সে তার কাজে বিশেষ মনোযোগী ছিল না। তা ছাড়া, ওটা কোনও মতেই পাকিস্তানের পতাকা ছিল না। কোনও পতাকায় সবুজ রঙ আর চাঁদের কলা থাকলেই সংবাদ-চ্যানেলগুলো সেটাকে পাকিস্তানের পতাকা ধরে নেয়।”
সোমবার আলি এই প্রতিবেদককে পাঠানো একটি বিবৃতিতে জানান, “ওই সাজানো ছবিগুলি তোলা হয়, যখন ছাত্ররা বিশাল পতাকাটি ধরে ছিল, যেহেতু পতাকা টাঙানোর দণ্ডটি ভেঙে গিয়েছিল। ছাত্ররা কখনওই পাকিস্তানের পতাকা ওড়ায়নি। গোটা ব্যাপারটাই সংঘ পরিবারের একটা পুরনো নোংরা খেলা, যা মুসলিমদের হাতে কোনও সবুজ পতাকা দেখলেই তাকে পাকিস্তানের পতাকা বলে শোরগোল শুরু করে দেয়। পুলিশ অযথা নির্দোষ ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। এসএফআই-ও নোংরা রাজনৈতিক খেলা শুরু করে দিয়েছে। পুলিশের উচিত ভুয়ো অভিযোগ সাজিয়ে করা মামলা প্রত্যাহার করা আর এসএফআই-এরও উচিত রাজনৈতিক নোংরামি থেকে বিরত থাকা।”