ভাইরাল ভিডিওর সমর্থনে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘পার্টি কর্মীদের নিজের ভালটা খেয়াল রাখতে বলায় কোনও দোষ নেই’
রাকেশ সিং নামে কলকাতার এক বিজেপি কর্মী একটি ভিডিও তোলেন। তাতে পুলিশ আর টিএমসি গুন্ডাদের মোকাবিলা করার জন্য ৮-ফুট লম্বা লাঠি সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কলকাতার কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আর তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পরের দিন একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় চালাচালি হতে থাকে। ভিডিওটি তোলেন রাকেশ সিং বলে একজন বিজেপি কর্মী।
ওই ভিডিওটিতে, সিং ‘ফাটাফাটি’ নামক এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্যদের উদ্দেশে অমিত শাহর রোড শো’র দিন “ঝামেলা” ও “ঝঞ্ঝাট”-এর আশঙ্কার কথা বলেন। আর সেই সঙ্গে, পুলিশ আর টিএমসির “গুন্ডাদের” মোকাবিলা করার জন্য নিজদের কাছে ৮-ফিট লম্বা লাঠি রাখার পরামর্শ দেন।
বুম পশ্চিমবাংলার বিজেপি সভাপতি দীলিপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রাকেশ সিং-এর তোলা ওই ভিডিওটির কথা উনি জানতেন। উনি বুমকে বলেন, “এটা তো খুবই স্বাভাবিক যে টিএমসি গুন্ডাদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার ব্যবস্থা আমাদের নিজেদেরই করতে হবে। কারণ, পুলিশ আমাদের সাহায্য করবে না। তাই ওই ভিডিওটিতে দোষের কী আছে? তাতে তো নিজেদের ভালটা খেয়াল রাখার কথাই বলা হয়েছে।”
পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার সকালে তাঁর আগরপাড়ার জনসমাবেশে ওই ভিডিওটি চালিয়ে দেখান। উনি বলেন, ভিডিওটি প্রমাণ করে দেয় যে, বিজেপিই অশান্তি শুরু করে।
দেখা যায়, ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের মাথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ভিডিওটি চালান।
অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের (এআইটিএমসি) জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ওব্রায়েন একটি ট্যুইট করেন। আর সেই সঙ্গে বলেন, ১৪ মে শহরে কারা গন্ডগোল শুরু করে, তা ওই ভিডিও থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। তাঁর ট্যুইট নীচে দেখা যাবে।
ভিডিওটি ৫৩ মিনিটের। তাতে সিং একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্যদের অমিত শাহর ১৪ মে’র রোড শোতে যোগদান করার আহ্বান জানান। উনি এমনও বলেন যে, যাঁরা অনুপস্থিত থাকবেন, তাঁদের ওই হোয়টসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বাদ দেওয়া হবে। পরের দিকে, সিং বলেছেন যে, পুলিশ আর টিএমসি গুন্ডাদের মোকাবিলা করার জন্য “ভাই আর বন্ধুরা” যেন ৮-ফিট লম্বা লাঠি নিয়ে উপস্থিত থাকেন।
ভিডিওটি একটি মোবাইল ফোনের সামনের ক্যামেরা দিয়ে তোলা। তাতে সিং বলছেন, “ফাটাফাটি গ্রুপের সদস্যগণ, আপনারা জানেন আপনারা কেন এই গ্রুপে আছেন। আগামী কালের রোড শোতে মারামারি আর সমস্যা হতে পারে। এবং কাল যাঁরা আসবেন না, তাঁদের এই ফাটাফাটি গ্রুপ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। ফাটাফাটি হোয়াটসঅ্যাপে যাঁরা আছেন, সেটি তৈরি করার জন্য যদি তাঁদের ঝামেলায় পড়তে হয়, তাহলেও এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আপনাদের আসতেই হবে। আসার জন্য ফাটাফাটির সব ভাই আর বন্ধুদের সাদর আমন্ত্রণ রইল। ধন্যবাদ। এই জন্য যে আগামী কাল অমিত শাহর প্রোগ্রাম ও রোড শো রয়েছে। এবং সেখানে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। পুলিশ আর টিএমসি গুন্ডাদের সঙ্গে লড়ার জন্য আমাদের ৮-ফিট লম্বা লাঠি ব্যবহার করতে হবে। ধন্যবাদ।”
উল্লেখ্য, সিং এই বছর মার্চ মাসে বিজেপিতে যোগ দেন। তার আগে, সিং প্রদশে কংগ্রেসের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
বুম রাকেশ সিং-এর ফেসবুক প্রোফাইল দেখে। কিন্তু তাতে ওই ভিডিওটি পাওয়া যায়নি।
আমরা সিং-এর সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি বলেন, “ওই ভিডিওটি খুব ছোট একটা গোষ্ঠীর জন্য তৈরি করা হয়। সেটা কী করে ছড়িয়ে পড়ল, তা আমি জানি না। তাছাড়া ভিডিওটির পরিপ্রেক্ষিতটা আলাদা।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে ভিডিওটি বিজেপি কর্মীদের প্ররোচিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল কিনা? কিন্তু, কোনও স্পষ্ট জাবাব দেননি উনি। তবে উনি স্বীকার করেন যে, শাহর রোড শো’র আগে তৈরি করা হয়েছিল ভিডিওটি। সিং আরও বলেন, “একজন টিএমসি এমএলএ আমায় আগেই বলেছিলেন যে, এ রকম একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে। তাই আমি আমার সদস্যদের আত্মরক্ষার স্বার্থে সঙ্গে লাঠি রাখতে বলি।”
সিং এও বলেন যে, ভিডিওটি কাটছাঁট করা হয়েছে। তাঁর কথা অনুযায়ী আসল ভিডিওটি ২.১৩ মিনিটের। তবে তিনি সেটি বুমকে দিতে অস্বীকার করেন। “টিএমসির উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ভিডিওটি কাটছাঁট করা হয়,” বলেন সিং। ভিডিওটি সত্যিই এডিট করা হয়েছে কিনা, বুম তা নিজস্ব উপায়ে যাচাই করে দেখতে পারেনি।
তাছাড়া ওই ভিডিওটি চালানোর জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় “সীমা ছাড়িয়েছেন” বলে অভিযোগ করেছেন সিং। “আমি আশ্চর্য হচ্ছি এই ভেবে যে, একজন মুখ্যমন্ত্রী কী করে ওই ধরনের ভিডিও একটি গণমঞ্চে চালালেন। আমি ওনার বিরুদ্ধে মামলা করব।”