না, ইন্ডিয়া গেটে ৬১,৩৯৫ জন মুসলিম স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম খোদাই করা নেই
ইন্ডিয়া গেট একটি যুদ্ধ স্মারক, যা তৈরি হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ ভারতীয় বাহিনীর সেনাদের সম্মান জানাতে।
ফেসবুকের কিছু গ্রুপের বিভিন্ন পেজগুলিতে দাবি করা হয়েছে:
১) ইন্ডিয়া গেটের গায়ে ৯৫,৩০০ স্বাধীনতা-সংগ্রামীর নাম খোদাই করা আছে
২) এদের মধ্যে ৬১,৩৯৫ জন মুসলিমের নাম আছে
ফেসবুকে হিন্দিতে এই দাবিগুলি চালাচালি হচ্ছে। এনডিটিভি-র রবীশ কুমারের ছবি দিয়ে তৈরি এমনই একটি পোস্ট নীচে দেওয়া হল:
ছবিগুলি খোঁজখবর নিয়ে বুম দেখেছে, অতীতেও এমন ছবি সহ পেজ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট হয়েছিল।
তথ্য যাচাই
ইন্ডিয়া গেটের ইতিহাস
পোস্টগুলিতে যেমন দাবি করা হয়েছে, ইন্ডিয়া গেটের নির্মাণের ইতিহাস কিন্তু সে রকম নয়। স্বাধীনতা-সংগ্রামে নিহতদের সম্মান জানাতে এই গেট তৈরি করা হয়নি। এটা একটা যুদ্ধ-স্মারক, যা তৈরি হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ ভারতীয় সৈন্যদের সম্মান জানাতে।
বস্তুত ইন্ডিয়া গেট-এর গায়েই লেখা রয়েছে—
এই স্মৃতিসৌধটি উত্সর্গ করা হল ভারতীয় বাহিনীর সেই সব সৈন্যদের সম্মান জানাতে যাঁরা ফ্রান্স ও ফ্লান্ডার্স-এ, মেসোপটেমিয়া ও পার্সিয়ায়, পূর্ব আফ্রিকা, গ্যালিপোলি এবং নিকট ও দূর প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রাণ দিয়েছেন এবং আরও সেই সব সৈন্যের পবিত্র স্মৃতিকে সম্মান জানাতে যাঁদের নাম এখানে লেখা রয়েছে, যাঁরা ভারতে, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে এবং তৃতীয় আফগান যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
সৌধটির চূড়ায় ইন্ডিয়া কথাটি লেখা রয়েছে, আর তার পাশেই খোদাই করা আছে এই লিপি:
১) MCMXIV—যা হল ইংরাজি ১৯১৪ সংখ্যার রোমান প্রকরণ
২)MCMXIX—যা ইংরাজি ১৯১৯ সংখ্যাটির রোমান প্রকরণ
এই দুটি সালই হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়পর্ব।
গেটের চূড়ায় খোদিত লিপিতে স্পষ্ট এই বার্তা নীচের ছবিতেও বোঝা যাচ্ছে।
১৯২১ সালে ডিউক অফ কনট এই গেটটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন এবং এটির নকশা তৈরি করেন এডোয়ার্ড লুটিয়েন্স। তার এক দশক পরে এটির উদ্বোধন করেন ভাইসরয় লর্ড আরউইন। ১৯৪৭ সালে হাসিল হওয়া স্বাধীনতার অনেক আগেই এই সব ঘটনা ঘটে যায়, যার অর্থ সৌধটি স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের সম্মানে উত্সর্গীকৃত হতে পারে না।
ইন্ডিয়া গেটের দেওয়ালে উৎকীর্ণ নামগুলি
এটি যেহেতু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত, তাই ভারত সে সময় ব্রিটিশ কমনওয়েল্থ-এর অঙ্গ ছিল। তাই সৌধটিতে কেবল নিহত ভারতীয় সৈন্যদের নামই নয়, পাশাপাশি যুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ এবং অস্ট্রেলীয় সেনাদের নামও রয়েছে। মোট নাম রয়েছে ২৩১৬টি, যাদের সম্পর্কে কমনওয়েল্থ ওয়ার গ্রেভস কমিশনে (সিডবলিউজিসি)বিশদ তথ্য পাওয়া যাবে। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা দুটি বিশ্বযুদ্ধেই নিহত কমনওয়েল্থভুক্ত দেশগুলির সেনাদের কবর শনাক্ত করা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত। সংস্থাটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০১৫-১৬ সালে ভারত সংস্থাটির তহবিলে অর্থ দিয়েছে। সংস্থাটি ইন্ডিয়া গেটে খোদাই করা নিহতদের নাম উল্লেখ করলেও তাদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছে। এটা সংস্থার ঘোষিত নীতিরও অনুসারী, যা হল:
নিহতদের সামরিক পদাধিকার, জাতি বা ধর্মবিশ্বাস বিষয়ে কোনও বিভেদ করা যায় না
সোশাল মিডিয়ায় উপরের ছবিগুলি দিয়ে যে অপপ্রচার চলছে, তা ভুয়ো প্রমাণ করতে বুম নিম্নোক্ত তথ্যসূত্র ব্যবহার করেছে:
- দিল্লি ট্যুরিজম-এর সরকারী ওয়েবসাইট।
- সিডবলিউজিসি-র তথ্য, যা এখানে দেখতে এবং ডাউনলোড করতে পারেন।
সুতরাং ৯৫,৩০০টি নাম ইন্ডিয়া গেটের গায়ে খোদাই করা আছে এবং তাদের অধিকাংশই মুসলিম, এ কথার কোনও তথ্যগত ভিত্তি নেই।