না, বোমা ঘাতকের শেষযাত্রায় বেল্টে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ হয়নি
বুম খুঁজে পেয়েছে সিরিয়ায় এক শবযাত্রার সময় একটি গাড়ি-বোমার বিস্ফোরণ হয়েছিল। ভিডিওটি সেই ঘটনার।
২০১২ সালের বিচলিত করার মতো এক ভিডিও ফুটেজ আবার নতুন করে মিথ্যে দাবি সমেত চালানো হচ্ছে। ওই বছর সিরিয়ায় একটি শেষকৃত্যের মিছিল চলার সময় একটি গাড়ি-বোমার বিস্ফোরণ হয়।
সেই ঘটনার ভিডিও এখন চালানো হচ্ছে এই বলে যে, এক আত্মঘাতী বোমারুর শবযাত্রায় তার কোমরে বাঁধা বোমা ফেটে যায়। কিন্তু বুম দেখে, ওই সময় একটি গাড়ি-বোমা ফাটলে বিস্ফোরণটি ঘটে। মৃত ব্যক্তিটি এক সিরিয় নাগরিক। সরকারি সেনাদের গুলিতে তিনি মারা যান বলে দাবি করা হয়।
টুইটার ব্যবহারকারী ‘শ্যামল গাঙ্গুলী চৌকিদার’ (@শ্যামলগাঙ্গুলীএক) ১৪ জুন ২০১৯ তারিখে ওই ভয়াবহ ভিডিওটি টুইট করেন। সঙ্গে ক্যাপশনে বলেন: “এক আত্মঘাতী বোমারুকে ইজরায়েলি বাহিনী গুলি করে মারে। মুসলমানরা তার দেহ তুলে নিয়ে যায় এবং ওই ‘নির্দোষ মুসলমানের’ হত্যার প্রতিবাদ করতে থাকে। তারা জানত না যে ওই বোমারুর শরীরে তখনও আত্মঘাতী বেল্ট বাঁধা ছিল। আর সেই দেহই তারা বয়ে নিয়ে চলেছিল। তারপর যা ঘটে তা এই ভিডিওয় আছে।”
ভিডিওটির দৃশ্যগুলি বিভৎস। তাই বুম সেটিকে এই লেখার সঙ্গে দিচ্ছে না।
ওই একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করলে দেখা যায়, অনেক পোস্টেই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য-যাচাই
ভিডিওটির প্রধান ফ্রেমগুলির সাহায্যে বুম গুগুলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। এর ফলে, ওই একই ধরনের ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায় ইউটিউবে। সেটি পোস্ট করেছিল ‘সিরিয়ান অবজারভেটারি অফ হিউম্যান রাইটস’। ওই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল, “2012 6 30 ريف دمشق زملكا لحظة تفجير موكب التشييع“। তার অর্থ, “দামাস্কাসের শহরতলিতে, একটি শবযাত্রার সময় ৩০/৬/২০১২।
ইউটিউবের ভিডিওটি ভাইরাল-হওয়া ভিডিওর তুলনায় একটু ছোট। কিন্তু দুটোই একই শবযাত্রা সংক্রান্ত।
‘দামাস্কাস ফিউনারেল বম্বিং’, এই শব্দগুলি দিয়ে গুগুলে সার্চ করলে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন সামনে আসে। সেগুলির মধ্যে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর একটি রিপোর্টে ইউটিউবের ভিডিওটি ব্যবহার করা হয়। ঘটনার বিবরণে বলা হয়, “দামাস্কাসের শহরতলিতে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে। তার মধ্যে আছে অশান্ত শহর জামালকা। সেখানকার সরকার-বিরাধী বিক্ষোভকারীরা বলেন শনিবার একটি শবযাত্রা রেকর্ড করেন এক ভিডিওগ্রাফার। মৃত ব্যক্তিটির নাম আবদুল আল হালাবি। আগের দিন তাকে হত্যা করা হয়।”
‘এলএ টাইমস’-এ খবরটি বেরয় ৩০ জুন ২০১২ তারিখে। তাতে বলা হয়, “মিছিলটি একটি মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি গাড়ি-বোমা ফাটে। ঘটনার পরের মুহূর্তে ধুলোর কারণে অস্পস্ট এক ভিডিওতে ডজন খানেক ছিন্নভিন্ন দেহ আর হালাবির মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার স্ট্রেচারটি রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।”
‘সিএনএন’ও ওই মর্মান্তিক ঘটনাটি রিপোর্ট করে। তাতে বলা হয়, “বিরোধী কর্মীরা বলেন গাড়ি-বোমাটি সরকারই ফাটায়। ওই বিস্ফোরণে ৮৫ জন নিহত হন আর আহত হন ৩০০ জনেরও বেশি। তাঁদের বেশিরভাগেরই আঘাত গুরুতর।