অনাথ থেকে পুলিশ অফিসার? না, এটি তামিল অভিনেত্রী নিবেথা পেথুরাজ
একজন অভিনেত্রী ও এক পাকিস্তানি অনাথের ছবি ব্যবহার করে গালগল্প বানানো হচ্ছে
গরিব থেকে বড়লোক হওয়ার এ এক অন্য রকমের গল্প । ভাইরাল হওয়া একটি ফেসবুক পোস্টে এক অভিনেত্রীকে তামিলনাড়ু পুলিশ বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ অফিসার হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে । ১৫০০ জনের শেয়ার করা ওই পোস্টে নিবেথা ও একটি দরিদ্র মেয়ের ছবি কোলাজ করা হয়েছে । নীচে ক্যাপশন—বহু বছরের কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের পর মেয়েটি সাফল্য অর্জন করেছে । এক সময় যে অনাথ ছিল, আজ সেই নিবেতা পেথুরাজ তামিলনাড়ুর পুলিশ অফিসার । আমরা তাঁকে অভিবাদন করি!
নীচের পোস্টটি দেখুনঃ
পোস্টটির আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।
শুধু বাংলায় নয়, পোস্টটি ইংলিশ এও ভাইরাল হয়েছে। যদিও এখানে নিবেথাকে একজন উচ্চপদস্থ অফিসার বলে দাবি করা হচ্ছে না। কিন্তু এই দুটি ছবি ব্যবহার করে একটি আদর্শ উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে পোস্টের মাধ্যমে। পোস্টটিতে উল্লেখ করা আছে যে - বর্তমান পরিস্থিতি দিয়ে কখনও নিজের কিংবা অন্যের বাচ্চাকে 'বিবেচনা' করা উচিৎ নয়। তাদের সাথে ভালো ভাবে আচরণ করুন, কারণ তারা হচ্ছে ভবিষ্যৎ। ভগবান তাদের ভালো চায়, অথচ মানুষ খারাপ! এখানে এক ঝলক দেখুন। আর্কাইভ এখানে।
তথ্য যাচাই
নিবেথা একজন পেশাদার মডেল এবং তামিল নাডুর অভিনেত্রী এবং তিনি কখনও কোনও সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেছেন, এমন তথ্য নেই । পোস্টে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ২০১৮ সালে তাঁর অভিনীত তামিল চলচ্চিত্র থিমিরু পুড়িচভন থেকে নেওয়া । সিনেমাটি এক পুলিশ অফিসারকে নিয়ে, যে দুষ্কৃতীদের হুমকি উপেক্ষা করে শহরটাকে পাল্টাতে চায় । নিবেথা ছবিটিতে পুলিশ ইনস্পেক্টর ম্যাডোনার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন । নিবেথার চলচিত্রের ছবির এক অংশ এখানে দেখুন।
বাচ্চা মেয়েটির তথ্য যাচাই
এদিকে ছোট্ট গরিব মেয়েটির ফোটোগ্রাফ অতীতেও নানান পোস্টারে ব্যবহৃত হয়েছে । অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, মেয়েটির ছবি একাধিক ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা হয়েছে। একটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় যে ছবি টি আসলে একজন ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার সোহেল কারমানির তোলা। ছবিটি তাঁর চিলড্রেন অফ সাহিওাল সিরিজের একটি অংশ।
কারমানির ফ্লিকার অ্যাকাউন্ট এও বাচ্চা মেয়েটির ছবি আমরা পেয়েছি। অ্যাকাউন্টে বিস্তারিত তথ্য অনুযায়ী ফটোটি ২৮ মার্চ, ২০১৫ সালে নেওয়া হয়েছে। এবং ২০০৪ নয়, যেমন একটি জাল পোস্টে দাবি করা আছে।
বুম কারমানির সাথে যোগাযোগ করে ছবি টির সত্য যাচাইের জন্যে। তিনি বলেন, "আমি সত্যি অবাক হয়েছি যে এই ছবিটি একাধিক ভারতীয় ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি আমার তোলা ছবি । আমি একজন নিউ ইয়রক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। আমি ছবিটি ২০১৫ সালে, পাকিস্তানের সাহিওালে নিয়েছিলাম।"
মেয়েটি সাহিওাল, পাঞ্জাবের, একটি বস্তির মেয়ে। সে ভবঘুরেদের মেয়ে। আমার মনে হয় ওরা আর ওই এলাকায় থাকে না। আমি ওর ছবি মার্চ ২৮, ২০১৫ সালে তুলেছিলাম। আর পোস্ট গুলি অনুযায়ী ছবিটি ২০০৪ সালের, যেটি সম্পূর্ণ ভাবে ভুয়ো।
সোহেল কিরমানি
একটি পাকিস্তান এন জি ও তে শিশুটির ছবি সহ তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে - হিরা, সেখানে বলা যে হিরা থাকে পাকিস্তানের পেশোয়ারে ।
ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা আছে যে শিশুটির জন্ম হয়েছিল ২০০৯ সালের অগাস্টে এবং পাকিস্তানের ওয়েবসাইট আন্তর্জাতিক মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সংস্থায় তাকে নথিভুক্ত করা হয় তার ভরণপোষণ ও লালনপালনের তহবিল সংগ্রহের জন্য । বুম যদিও আলাদা ভাবে ওয়েবসাইটের কোনও তথ্য যাচাই করতে পারেনি। এবং সোহেল কিরমানিও ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য কে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এখানে আর্কাইভ লিঙ্ক দেখুন।
"মেয়েটির নাম হিরা নয়। সে পেশাওারে থাকা একজন পাশ্তুন নয়। সে আসলে পাঞ্জাবি," তিনি বুম কে বলেন। "আমি অবাক হয়ে গেছি যখন বুম আমাকে এই লিঙ্কটি পাঠায়। অদ্ভুত ভাবে সাইট থেকে ইউজার কে সরাসরি পেব্যাক মেশিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।"
প্রতিবেদনটি সোহেল কিরমানির সাথে কথা বলার পর আপডেট করা হয়েছে।