বাংলাদেশে ছেলেধরা সন্দেহে রোহিঙ্গাদের গণপিটুনিতে খুনের ছবি ভুয়ো দাবি সহ ফেসবুকে ভাইরাল
২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বালুখালি উদ্বাস্তু ক্যাম্পে ঘটে ওই ঘটনাটি। ছেলেধরা সন্দেহে রোহিঙ্গাদের দ্বারা গণপিটুনিতে খুন করা হয় ওই ব্যক্তিকে।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/06/rohinga-snatcher-mob-lynching-featured.jpg)
ফেসবুক পোস্টে একটি ভুয়ো খবরের সংবাদ প্রতিবেদন শেয়ার করা হচ্ছে যার শিরোনাম, ‘‘দলবেঁধে আশ্রয়দাতাদের মোরে উল্লাস রোহিঙ্গাদের, স্থানীয়রা কোনঠাসা।’’
ওই প্রতিবেদনে একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তিকে লাথি মারতে উদ্ধত। মারমুখী জনতাকে দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন যুবক ও নাবালকও রয়েছে।
পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব NRC চালু করতেই হবে।’’
এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত পোস্টটি ১৬৩ জন লাইক ও ১২৭ জন শেয়ার করেছে। পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/06/rohinga-snatcher-fb-post.png)
বুম রিভার্স সার্চ করে জেনেছে ছবিটি ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালের বাংলাদেশের বালুখালি রোহিঙ্গা উদবাস্তু ক্যাম্পের। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রায় ২০ জন রোহিঙ্গাদের একটি দল ওই ব্যক্তিকে খুন করে। গাছে বেঁধে বেধড়ক মারা হয় তাকে। সংবাদসংস্থা এপি’র একজন চিত্রসাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তিনি ওই হিংসাত্মক দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেন। এব্যাপারে বিস্তারিত পড়া যাবে ডেইলি মেল ও দ্য সান-এ।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/06/screenshot-www.dailymail.co_.uk-2019.06.29-14-36-29.png)
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/06/screenshot-www.thesun.co_.uk-2019.06.29-14-34-13.png)
ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করা প্রতিবেদনটি ১৫ মার্চ ২০১৯ সময়এখন নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে শিরোনাম লেখা হয়েছে, ‘‘দলবেঁধে আশ্রয়দাতাদের মেরে উল্লাস রোহিঙ্গাদের, স্থানীয়রা কোনঠাসা।’’
প্রতিবেদনে কোনও নির্দিষ্ট স্থানের উল্লেখ নেই। কক্সবাজার লেখা থাকলেও নেই কোনও নির্দিষ্ট স্থানের নাম। নেই কোনও পুলিশ আধিকারিকের বয়ান। কোথায় কাকে রোহিঙ্গারা মেরেছে তার কোনও স্পষ্ট উল্লেখ নেই। প্রতিবেদনে ব্যবহার করা ছবিটি যে পুরনো নেই তার উল্লেখও।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/06/screenshot-somoyekhon.com-2019.06.29-14-28-02-700x628.png)
এনআরসি প্রসঙ্গে
ন্যাশানাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্স (এনআরসি) বা নাগরিকপঞ্জী হল ভারতীয় নাগরিকদের নথি। ১৯৫১ সালে তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে দেশের মধ্যে কেবলমাত্র অসম জেলায় এটি সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।
পুলিশ কমিশনার ও মহকুমা আধিকারিকের দপ্তরে থাকবে এই নথি। ১৯৫১ সালের তালিকায় যাদের নাম আছে কিংবা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আগত যাদের ফরেন ট্রাইবুনালে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে নথিভুক্ত বলে নাম আছে, সংশ্লিষ্ট নথি সহ তাদের এই নাগরিক পঞ্জীতে নাম তোলা বাধ্যতামূলক।
১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের মধ্যরাত পর্যন্ত যাদের অসম রাজ্যে ভোটার কার্ড আছে কিংবা যারা ওই সময়ের মধ্যে ভারতের অন্য রাজ্য থেকে ওই রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছেন তাদের এবং তাদের উত্তরসূরীদের অন্য রাজ্যে আগে বসবাসের স্থায়ী প্রমানপত্র পেশ করতে হবে। বিস্তরিত পড়া যাবে এখানে।
ভারতে নাগরিকত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। কেন্দ্রীয় সরকার এর নীতিমালা, নিয়ামবলী ও তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করে।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই দ্বিতীয় তথা চুরান্ত খসড়া নাগরিকপঞ্জীর তালিকা বার করা হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রথম খসড়া তালিকা পেশ করা হয়েছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ অধিবাসীর নাম ওই তালিকায় বাদ পড়েছে।
বর্তমান স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী তথা ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সম্পাদক অমিত শাহ ২০১৯ সালের জানুয়রি মাসে মালদায় এক জনসভায় পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু, বৈদ্ধ ও শিখ উদবাস্তুদের ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই’ বলে আশ্বাস দেন।
অবশ্য, অসমের বরাক উপত্যকায় মুসলিম ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক বাঙালি হিন্দুও বাদ পড়েছে ওই তালিকা থেকে। তালিকায় নাম নেই শিলচরের বিজেপি বিধায়ক ও অসম বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকারের পত্নীরও।