ভাইরাল হওয়া বেত্রাঘাতের এই ছবিটি ভারতে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের ছবি নয়
১৯৭৮ সালে পাকিস্তানে জিয়ার সামরিক শাসনকালে সংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়নে বেত্রাঘাতের ছবি এটি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের বিরুদ্ধে সেসময় সরব হয়েছিলেন তারা।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক ব্যক্তিকে পুলিশের বেত্রাঘাত করার ছবিকে ভারতে মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে। ছবিটিতে এক ব্যক্তিকে কাঠের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত সেনাবাহিনীর লোকজন দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাতে লাঠি নিয়ে ওই ব্যক্তিকে বেত্রাঘাত করছে।
স্টেডিয়ামের মত মাঠে ঘটা এই ঘটনা অনেক লোকজন দর্শক হিসাবে দেখছেন।
ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ‘‘#আল্লাহ_রক্ষা_করো। ভারতের মুসলমানদের উপর কঠিন জুলুম, নির্যাতন চলছে!!!!! হে আল্লাহ ভারতের মুসলমানদের রক্ষা কর। #আমিন।’’
প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত ১৬,০০০ জন শেয়ার করেছে ও লাইক করেছে ৪০৯ জন। পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স সার্চ করে জেনেছে ছবিটি পাকিস্তানের। ১৯৭৯ সালে জিয়া বিরোধী এক সাংবাদিকককে করাচির কারকি স্টেডিয়ামে বেত্রাঘাতের ছবি এটি। ১৩ মে ১৯৭৮ সালে মাসুদুল্লা খান, নাসির জায়েদি, ইকবাল জাফরি ও মুন্নু ভাই ওরফে খাওয়ার নাইম হাসমিকে বেত্রাঘাত করা হয়েছিল গণমাধ্যেমের স্বাধীনতার স্বপক্ষে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার জন্য।
পাকিস্তানে অসাংবিধানিক স্বৈরতান্ত্রিক সামরিক সরকারের রাজ ৩৫ বছর কায়েম ছিল। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এবং শাস্তিপ্রদান করা হয়েছিল সাংবাদিকদের।
২০১২ সালে মে মাসে করাচি ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টদের আয়োজিত এক সভায় ওই চারজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। এব্যাপারে প্রকাশিত দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে ওই বেত্রাঘাতের ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। ছবির সূত্র হিসেবে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
খাওয়ার নাইম হাসমি বলেন তাকে ১৪ অগস্ট ১৯৭৮ গ্রেফতার করা হয়েছিল কথিত ‘‘মাজার-এ-কয়েদ’’ বা মহম্মদ আলি জিন্নার স্মৃতিবিজরিত সমাধিশৌধ বিকৃত করার অপরাধে। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সালের বন্দিদাশা মনে করে তিনি জানান— তাকে জোর করে বিবস্ত্র করে বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। সামরিক আধিকারিকরা তাদের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ওই বেত্রাঘাতের দৃশ্য উপভোগ করত। ২০১৬ সালে লাহোর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক স্মরণসভায় ওই সাংবাদিকরা অংশ নেন। ডনের প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
বুমের পক্ষে বেত্রাঘাত হওয়া ছবিটিতে ব্যক্তিটির পরিচয় যাচাই করা সম্ভব হয়নি।