পশ্চিমবঙ্গের পুরনো গণপিটুনির ঘটনা মিথ্যে সাম্প্রদায়িক দাবি সহ মাথাচাড়া
ছবিগুলি ২০১৭ সালের এক ঘটনার। যেখানে একজন মানসিক প্রতিকূলতাযুক্ত মহিলাকে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মেরে ফেলা হয়। সাম্প্রদায়িক আবর্ত নিয়ে আবার মাথাচাড়া দিয়েছে।
দুটি ছবি ফেসবুকে মিথ্যে দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু মহিলারা আর নিরাপদ নন। ছবি দুটির একটিতে মানসিক প্রতিকূলতাযুক্ত একজন মহিলার ট্রাক্টরের বাঁধা ছবি ও অন্যটিতে তার মাথা মোড়ানোর চেষ্টা করেছে এক ঝাঁক জনতা।
এই বিভ্রান্তিকর পোস্টটিতে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যের হিন্দু সম্প্রদায় আক্রান্ত হচ্ছে। পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, “কি হচ্ছে বাংলার হিন্দু ধর্মের মানুষের সাথে??? মমতা ব্যানার্জি কি নেই???”
ছবিটি দেখতে ভীতিকর এবং ওই মহিলাকে খারাপ ভাবে আক্রান্ত। তাকে ট্রাক্টরে বেঁধে মাথা মোড়ানোর চেষ্টা করছে।
ওই পেস্টিটির আর্কাইভ লিঙ্ক দেখা যাবে এখানে। বুম সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছবিটি এখানে না দেওয়ার।
একটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানা যায় ছবিটি ২ বছরের পুরনো এবং বিন্দুমাত্র সাম্প্রদায়িক যোগ নেই।
ছবিগুলি মাঝ বয়সি এক মহিলা ওতেরা বিবির যাকে ছেলেধরা সন্দেহে মেরে গণপিটুনিতে খুন করা হয়। ২০১৭ সালের জুন মাসে ওই মানসিক প্রতিকূলতাযুক্ত মহিলা ওতেরা বিবিকে হেনস্থা, বিবস্ত্র, মাথা মোড়ানো এবং শেষমেষ ঠেঙিয়ে মেরে ফেলা হয়। তার আগে ওই এলাকায় পাশের জেলা ঝাড়খন্ড থেকে ছেলেধরা টুকেছে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
এই নৃশংস ঘটনা সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। ওই গণপিটুনির ঘটনার প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে, এখানে ও এখানে।
হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল। “মঙ্গলবার ভোর তিনিটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। যখন একজন গ্রামবাসী ওতেরাকে দিলীপ ঘোষের বাড়িতে কিছু একটা হাতে করে ঢুকতে দেখে। রটে য়ায় ওই মহিলা হাতে ক্লোরোফর্ম নিয়ে দিলীপ বাবুর নাবালক মেয়ে খুশিকে গুম করতে এসেছিল। এক দল লোক তার ঘরে এসে তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।”
“গ্রামবাসীরা বেধরকভাবে ওই মহালাকে পেটাতে শুরু করে। তিনি কিছু বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি। বস্তুত তার অসংলগ্ন কথাবার্তা সন্দেহ কুন্ডলী পাকায় যে, সে একজন বাংলাদেশি পাচারকারী। কিছু যুবক মহিলাকে বিবস্ত্র করে এবং কিছুটা মুড়িয়ে দেয় তাকে। তারপর তারা তাকে ট্রাক্টরে বেঁধে তিন ঘন্টা ধরে ঠেঙায়,” একজন বাসিন্দা হিন্দুস্তান টাইমসকে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একথা বলে।
ভারতে ২০১৭ সাল থেকে বিশেষত হোয়াটসঅ্যাপে ছেলেধরার গুজব বাস্তবজগতেও পর্যায়ক্রমে পাশবিক হয়ে উঠছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এরকম ঘটনার শিকার হচ্ছে সন্দেহের বশে। এবং পুলিশি তদন্তে ছেলেধরার কোনও প্রমান মিলছে না।