মিশরে ঘটা হামলার পুরনো ছবিকে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার ছবি বলে ভাইরাল
ভাইরাল হওয়া এই ছবিগুলি নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সাম্প্রতিক গণহত্যার ফোটোগ্রাফ নয়, এগুলি মিশরে মসজিদ ও চার্চে ঘটা হামলার পুরনো সব ছবি
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/03/final-featured-4.jpg)
মিশরে হামলার পর-পর কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে, এগুলি নিউজিল্যান্ডের মসজিদে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক গুলিচালনার পরিণাম, যাতে ৪৯ জন প্রার্থনাকারী নিহত হন ।
পশ্চিমবঙ্গ মুসলিম বুদ্ধিজীবী মহল নামে একটি বাংলা পেজ এই ছবি পোস্ট করে ক্যাপশন দিয়েছে—“এগুলিই নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে শহিদ হওয়া নিহতদের ছবি” । এই লেখার সময় পর্যন্ত পোস্টটি ২৭৫ জন শেয়ার করেছে এবং ৭০০ জন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ।
পোস্টটি দেখতে এখানে এবং তার আর্কাইভ সংস্করণ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/03/ফাইনাল-1-1-700x455.jpg)
অনেক পেজ-এই আরও দুটি ছবি ভাইরাল হয়েছে প্রায় একই রকম ক্যাপশন দিয়ে, যেমন-- “শহিদদের লাশ নিউজিল্যান্ডের মসজিদে” কিংবা “এই রক্ত আমার, এই রক্ত ১৫৭ কোটি মুসলমানের, এই হামলায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গভীরভাবে শোকাহত, মুসলমানদের রক্ত কোনোদিন বৃথা যাবে না” । এই ক্যাপশগুলি বাংলাতেই লেখা । সেই সঙ্গে ইংরাজিতে ক্যাপশনও আছে, যার অর্থ—“বিশ্বের সব মানুষ এদিকে দেখুন । পবিত্র মসজিদে এই রক্তপাত এবং রক্তাক্ত দেহগুলি প্রাণহীন পড়ে আছে l এর পরও চুপ করে থাকলে বিপর্যয় আরও বাড়বে” ।
সংশ্লিষ্ট পোস্টটি এখানে এবং তার আর্কাইভ বয়ান এখানে ।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/03/শী-1-2.png)
তথ্য যাচাই
বুম এই ফোটোগুলির খোঁজখবর চালিয়ে দেখেছে, এই তিনটিই মিশরে গির্জা ও মসজিদে হামলার পুরনো ছবি ।
প্রথম ছবিঃ
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/03/আগাইন-1-1.jpg)
উপরের ছবিটি মিশরের, ২০১৩ সালের, যখন নিরাপত্তা রক্ষী এবং সেনারা রাজধানী শহর কায়রোয় প্রতিবাদী দুটি শিবিরে হানা দেয় ।
সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৩ সালের অগস্টে সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাতা-এল সিসির নেতৃত্বে সেনাবাহিনী রাবা আল আদাওয়াইয়া স্কোয়ারে প্রতিবাদীদের দুটি শিবিরে হামলা চালায় । ছবিটির অনুসন্ধান চালিয়ে আমরা দেখি, একই ছবি সে সময় আলামি , গেট্টি ইমেজেস , এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসও ছেপেছিল ।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/03/x.jpg)
আলামির ছবির ক্যাপশনে ব্যাখ্যা করা হয়—“২০১৩ সালের ১৪ অগস্ট, বুধবার ইসলামি প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুর্সির নিহত সমর্থকদের মৃতদেহগুলি একটি অস্থায়ী মর্গে পাশাপাশি লাইন দিয়ে শোয়ানো আছে কায়রোর নসর নগর মহল্লায়, যেখানে পুলিশ সাঁজোয়া গাড়ি ও বুলডোজার চালিয়ে ঢুকে পড়েছিল l প্রেসিডেন্টের সমর্থকদের দুটি শিবির এভাবে গুঁড়িয়ে দেবার পরই সারা মিশর জুড়েই প্রবল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা দমন করতে কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চলে যত্রতত্র ।”
দ্বিতীয় ছবিঃ
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/03/54194693_2234534876609227_5021261860779851776_n-700x378.jpg)
এই ছবিটিরও অনুসন্ধান করে বুম দেখেছে, এটি ২০১৭ সালের, যেখানে মিশরের জঙ্গিরা একটি মসজিদে হামলা চালিয়েছিল । সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী মিশরের সিনাই প্রদেশের একটি সুফি মসজিদে কট্টরপন্থী সুন্নি ইসলামি জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ৩০০ জন মুসলিমকে হত্যা করে । মিশরের জঘন্যতম হামলার অন্যতম বলে এটিকে গণ্য করা হয় এবং সে সময় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ঘটনাটি ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করেছিল । সেই রিপোর্ট দেখুন এখানে এবং এখানে (Insert Link: ) ।
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/03/এক্সয়ক্সক্স.jpg)
তৃতীয় ছবিঃ
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/03/দিয়ে.jpg)
এই ছবিটি অনুসন্ধান করে আমরা দেখলাম, এটি ২০১৭ সালে মিশরের একটি গির্জায় বোমা-হামলার ছবি । খবরে প্রকাশ, ইসলামি স্টেট-এর জঙ্গিরা এক রবিবার, পাম সানডে-র দিন মিশরের দুটি গির্জায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় । ভাইরাল হওয়া ছবিটি তান্তা এলাকায় সেন্ট জর্জ কপ্টিক চার্চে বিস্ফোরণের পরের, যাতে ২৭ জন প্রার্থনাকারী নিহত হন ।
নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সাম্প্রতিক হামলাটি সে দেশের এ পর্যন্ত সবচেয়ে নৃশংস হামলার ঘটনা, যাতে ৪৯ জন নিহত এবং ৫০ জন কমবেশি আহত হন।বিবিসি-র রিপোর্ট অনুসারে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এক বন্দুকবাজ দুটি মসজিদে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলি চালায় ।