ইউপিতে শিক্ষকদের ইসলাম গ্রহণের হুমকির ভিডিও পার্লামেন্টে জয়শ্রীরাম স্লোগানের প্রতিবাদ বলে ভাইরাল
একটি ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, তাব্রেজ আনসারি হত্যার ন্যায়বিচার না হলে এক দল হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু ভিডিওটির সঙ্গে ঝাড়খন্ডের ওই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই
দু বছর আগের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, উত্তর প্রদেশে চুক্তিতে নিয়োজিত শিক্ষকরা তাঁদের দাবিদাওয়া না মেটান হলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু অনলাইনে ওই ভিডিও এক মিথ্যে বক্তব্য সমেত শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, পার্লামেন্টে জয়শ্রীরাম স্লোগানের প্রতিবাদে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করেছেন তারা। জুন ২০১৯-এ এক উন্মত্ত জনতা তাব্রেজকে পিটিয়ে হত্যা করে।
ভিডিওতে যে বিক্ষোভকারীদের দেখা যাচ্ছে, তারা আসলে উত্তর প্রদেশের ‘শিক্ষা মিত্র’ (চুক্তিতে নিযুক্ত শিক্ষক)। তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।
ভিডিওটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "পার্লামেন্টে জয়শ্রীরাম স্লোগানের প্রতিবাদে হিন্দুধর্ম ত্যাগ ১৬০০হিন্দুর, আমি চিন্তা করতে পারছি না - আমাদের দেশের ভবিষ্যত কি হবে ?? #এক্সান এর #রিএক্সান হয়ে কি শেষ হতে চলেছে ভারত ?? #উত্তর_প্রদেশে #১৬০০_ছোটোজাতির_হিন্দু_পরিবারগুলো #ইসলামের অন্তর্ভূক্ত হয়ে মুসলিম হতে চলেছে ,দিল্লির পার্লামেন্টের মধ্যে #জয়_শ্রীরাম স্লোগান দেওয়ার প্রতিবাদে।"
এমনকি হিন্দিতেও ভিডিও টি ভাইরাল, এই দাবি সহ, “তাব্রেজ যদি ন্যায়বিচার না পায়, তা হলে আমরা ১৬০০ হিন্দু পরিবার, যার সদস্য সংখ্যা ৮০০০, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করব — শোনো, এটাই প্রকৃত রামভক্তদের কথা।”
(হিন্দিতে লেখা হয়: अगर तबरेज को इंसाफ़ नहीं मिला तो हम हिन्दू 1600 परिवार है तकरीबन 8000 लोग है हम इस्लाम कबूल कर लेंगे – सुनिये इस हमारे सच्चे रामभक्त की बात।)
জুন ১৮ তারিখে, ঝাড়খন্ডের সরাইকেলা জেলায়, এক উন্মত্ত জনতার হাতে গণপিটুনির শিকার হন তাব্রেজ আনসারি। জুন ২২ তাঁর মৃত্যু হয়। সেই থেকে তাঁর নামে নানান ভুয়ো ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে। তাব্রেজ আনসারি সম্পর্কে আরও একটি ভিডিও ভুয়ো বলে চিহ্নিত করে বুম । এখানে দেখা যাবে সেটি।
এক ব্যক্তিকে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে ৪০ মিনিটের ওই ভিডিওতে। তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “আমরা এর নিন্দা করছি। এবং এবার আমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করব। শিক্ষা মিত্রদের পরিবারের সকলেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে। মৌলবির সঙ্গে কথা বলে দিনক্ষণ ঠিক হলেই আমরা ধর্মান্তরিত হব এবং আল্লা-হু-আকবর ধ্বনি তুলব। এখানে আমরা ১৬০০ জন আছি আর সারা জেলায় আমাদের ৭০০০ মানুষ আছেন। আমরা সকলেই ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হব।”
ভিডিওটি এখানে এবং তার আর্কাইভ সংস্করণ এখানে দেখা যাবে।
তথ্য-যাচাই
‘শিক্ষা মিত্র’ ও ‘ইসলাম’, এই দুটি প্রধান শব্দ দিয়ে সার্চ করি আমরা। তার ফলে বেশ কিছু ইউটিউব লিঙ্ক এবং অন্যান্য খবর দেখতে পাই। সেগুলিতে ওই একই ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করা হয়েছিল।
আমরা নিশ্চিত হই যে, ঘটনাটি উত্তর প্রদেশে ঘটেছিল এবং ভিডিওটি জুলাই ২০১৭-য় তোলা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের বিরুদ্ধে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। উত্তর প্রদেশের সরকারি স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে তাঁদের ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’ উচ্চতম আদালত নাকচ করে দেওয়ায়, তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত ও তার প্রতিক্রিয়া জানতে এখানে, এখানে ও এখানে ক্লিক করুন।
ভাইরাল ভিডিওটিতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, আরও একটি ভিডিওতেও আমরা তাঁকেই দেখতে পাই। সেখানে তিনি মনোহর সিং বলে নিজের পরিচয় দেন। এবং শিক্ষা মিত্রদের সমস্যাগুলির সম্পর্কে কথা বলেন।
শিক্ষা মিত্র কারা?
শিক্ষা মিত্ররা হলেন পার্শ্ব-শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষকের ঘাটতি মেটাতে এবং প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য উত্তর প্রদেশ সরকার তাঁদের নিয়োগ করে। পূর্ণ-শিক্ষকদের তুলনায় তাঁদের মাইনে অনেক কম। আর তাঁদের নিয়োগ করা হয় সাময়িক চুক্তির ভিত্তিতে।
আগে ১২ ক্লাস পাস-করা ব্যক্তিদের শিক্ষা মিত্র হিসেবে নিয়োগ করা যেত। কিন্তু ২০১০ সালে শিক্ষার অধিকার আইন চালু হওয়ার পর ইউপি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, শিক্ষা মিত্রদের দু বছরের বিশেষ বিটিসি (বেসিক ট্রেনিং সার্টিফিকেট) প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করবে। ‘ইন্ডিয়া টুডে’র এক লেখায় বলা হয়, “সহকারী শিক্ষক হিসেবে তাঁদের নিয়ম মাফিক নিযুক্তির আগেই, ২০১৫ সালে ১.৬ লক্ষ শিক্ষা মিত্রকে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ‘অ্যাডজাস্ট’ করে নেওয়া হয়”।
কিন্তু সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে, এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই ‘উন্নত’ নিযুক্তি বাতিল করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট শুরুতে হাই কোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। কিন্তু পরে শিক্ষা মিত্রদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিযুক্তির বিরুদ্ধে রায় দেয়।
এর ফলে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষা মিত্ররা। তাঁরা দাবি তোলেন যে, ইউপি সরকারকে তাঁদের চাকরি রক্ষা করতে হবে।