পার্লে সংস্থার ৮-১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের হুঁশিয়ারি কোনও ভুয়ো খবর নয়
সোশাল মিডিয়ায় পার্লে সংস্থার এই হুঁশিয়ারিকে ভুয়ো খবর আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বুম ওই সংস্থার বার্তাটি খতিয়ে দেখেছে, তারা ঠিক কী বলতে চেয়েছিল।
চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং উচ্চ হারে জিএসটি দিতে হওয়ায় পার্লে প্রডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ৮ থেকে ১০ হাজার কর্মচারীকে ছাঁটাই করতে চলেছে, এই হুঁশিয়ারি সোশাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে।
বেশ কিছু ব্যবহারকারী সংবাদমাধ্যমগুলিকে এই খবর অতিরঞ্জিত করে প্রচার করার দায়ে অভিযুক্ত করেছে, অন্যরা এটিকে সরাসরি 'ভুয়ো খবর' আখ্যা দিয়েছে।
সপ্তাহের শুরুর দিকেই পার্লে-জি বিস্কুট প্রস্তুতকারী সংস্থা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার পরিস্থিতি এবং অতিরিক্ত করের বোঝার প্রেক্ষিতে ৮ থেকে ১০ হাজার কর্মচারীকে ছাঁটাই করার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে। সংস্থার উৎপাদন বিভাগের অধিকর্তা মায়াংক শাহ এই মর্মে বিবৃতিও দেন।
এই খবরটিকে অনেকেই গ্রামাঞ্চলে চাহিদার ঘাটতি এবং সাধারণভাবে অর্থনীতিতে মন্দার সূচক হিসাবে গণ্য করতে থাকেন।
অন্য অনেকে আবার অন্য একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে দাবি করেন যে, ২০১৮ আর্থিক বছরে সংস্থাটি ২১ শতাংশ মুনাফা বাড়িয়েছে, তাই সংস্থার রুগ্ন হয়ে পড়ার গল্পটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ভারতীয় জনতা পার্টির যুব নেতা চারু প্রজ্ঞা দাবি করেন, পার্লে কোম্পানি মাত্র ৪৪৮০ জন ব্যক্তিকে কর্মসংস্থান দেয়, তাই ৮-১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের গল্পটি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়।
কিন্তু চারু প্রজ্ঞা তাঁর দাবির সমর্থনে যে স্ক্রিনশটটি ব্যবহার করেন, সেটি পার্লে কোম্পানির নয়, ব্রিটানিয়া সংস্থার।
তিনি টুইট করেন,"পার্লে-জি কোম্পানির ১০ হাজার কর্মীই নেই। কোম্পানির ২০১৮-১৯-এর বার্ষিক রিপোর্ট যাচাই করে দেখুন! ওদের মাত্র ৪৪৮০ জন কর্মী রয়েছে। মিথ্যে কথা বলারও একটা সীমা থাকা উচিত। নিজের বুদ্ধি প্রয়োগ করো!"
এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত টুইটটি ৩ হাজার বার পুনঃটুইট হয়েছে এবং ৫ হাজারটি 'লাইক' পেয়েছে। টুইটটি ।
পার্লে সংস্থার কর্মীসংখ্যা জানা না গেলেও ব্রিটানিয়া সংস্থার বার্ষিক নিয়োগ ও কর্মরতদের সংখ্যা প্রকাশ্য। সংস্থার ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরের রিপোর্টেই সেই সংখ্যার উল্লেখ রয়েছে।
পার্লে সংস্থা ঠিক কী বলেছিল:
সিএনবিসি-টিভি-১৮-এর সঙ্গে এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে মায়াংক শাহ জানিয়েছিলেন,
"পার্লে কোম্পানি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ১ লক্ষ কর্মী নিয়োগ করে থাকে। আমাদের ১০টি নিজস্ব উৎপাদন ইউনিট আছে, এ ছাড়া সারা দেশে ১২৫টি পরোক্ষ উৎপাদন কেন্দ্র ছড়িয়ে রয়েছে।"
এই ১ লক্ষ কর্মচারী-সংখ্যার বিষয়টি সংবাদসংস্থা রয়টার্স এবং ইকনমিক টাইমস পত্রিকাও উল্লেখ করেছে।
সিএনবিসি-টিভি-১৮-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও মায়াংক শাহ ১ লক্ষ কর্মচারীর কথা এবং চলতি আর্থিক মন্দা ও করের বোঝার কারণে তার মধ্যে ৮-১০ হাজার কর্মী-ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন।
সাক্ষাৎকারে শাহ আরও বলেন, "গোটা বিষয়টিকে তার সঠিক প্রেক্ষিতে দেখতে হবে, প্রেক্ষিত থেকে বিচ্ছিন্ন করে নয়। আমরা কখনও কর্মী ছাঁটাই করিনি, কিন্তু মন্দার জন্য হয়তো সেটা করতে বাধ্য হবো। আর মন্দার কারণ কী ? সম্প্রতি আমরা বিস্কুটের দাম বাড়িয়েছি, তবুও শিল্পে মন্দা এবং চাহিদা হ্রাসের কারণে উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম-দামি বিস্কুট যেগুলো নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাই বেশি উপভোগ করেন, এতদিন সেগুলির উত্পাদন-শুল্কে ছাড় ছিল। এখন ওই সব বিস্কুটেই ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি বসানো হয়েছে, যেটা কোম্পানির মতে খুবই বেশি। অথচ অপেক্ষাকৃত দামি বিস্কুটের উপর জিএসটি বসেছে ৫ শতাংশ। কর-কাঠামো যুক্তিপূর্ণ হওয়া উচিত।"