বিহারে মহিলার নগ্ন ছবি পাকিস্তানের হিন্দুদের উপর আক্রমণ বলে ভাইরাল
বিহারে এক মহিলাকে জনতার নগ্ন করে ঘোরানোর এক বীভৎস ভিডিওর একটি ছবি এই ভুয়ো দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে যে, পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর প্রত্যকেদিন অত্যাচার হচ্ছে।
বিহারে এক মহিলাকে জনতার নগ্ন করে ঘোরানোর এক বীভৎস ভিডিওর একটি ছবি এই ভুয়ো দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে যে, পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর প্রত্যকেদিন অত্যাচার হচ্ছে।
ছবিটি অত্যন্ত ভয়ংকর। খুব কৌশলের সঙ্গে ছবিটির ডান দিকে এডিট করে একটি পাকিস্তানের পতাকা পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
পোস্টের আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন। এবং সংশ্লিষ্ট পোস্ট এখানে দেখুন।
পূর্বে ছবিটির একটি অন্য ব্যাখ্যা দিয়ে ভাইরাল হয় - দলিত-খ্রিস্টানদের উপর আরএসএস যুবকদের আক্রমণ।
তথ্য যাচাই
আসলে বিহারের ভোজপুর জেলায় উন্মত্ত জনতা এক ঘৃণ্য হামলায় এক মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তা দিয়ে হাঁটাচ্ছে, এমন একটি অস্বস্তিকর ভিডিও হোয়াট্স্যাপ সহ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ছবিটি তারই একটি অংশ।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক অসহায় মহিলা সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় সকলের চোখের সামনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন আর তাঁর পিছনে-পিছনে পুরুষরা (যাদের মধ্যে অল্পবয়সী ছেলেরাও রয়েছে)তাঁকে টিটকারি দিচ্ছে, মাঝে-মধ্যে চড়-থাপ্পড়, এমনকী লাথিও মারছে ।সেই সঙ্গে এই লজ্জাজনক অপকর্মটি তারা মোবাইল ফোনে রেকর্ডও করে চলেছে ।
ভিডিওটি ভুয়ো নয়, সত্যি, কিন্তু তার যে বিবরণী প্রচার করা হচ্ছে, তাতে সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে অনাবশ্যক তার সঙ্গে জড়ানো হয়েছে ।
ভিডিওটির অস্বস্তিকর দৃশ্য না-দেখানোর জন্য এবং মহিলাটির ব্যক্তিগত সম্মান নষ্ট না-করার অভিপ্রায়ে বুম এই রিপোর্টে ভিডিওটি অন্তর্ভুক্ত করেনি ।
ঘটনাটি ২০১৮ সালের ২২ অগস্টের দ্য হিন্দু সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ভোজপুর জেলার সদর দফতর আরা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বিহিয়া নগরে রেললাইনের পাশে ১৯ বছরের একটি ছেলে বিমলেশ সাউয়ের মৃতদেহ পড়ে থাকা থেকেই গোলমালের সূত্রপাত ।কয়েকটি সংবাদ-রিপোর্টে অবশ্য ছেলেটির নাম বিমলেশ শাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
মৃত ছেলেটির গ্রাম দামোদরপুরের লোকেরা এরপর জড়ো হয়ে চতুর্দিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, দোকানপাট ভাঙচুর করতে থাকে । তাদের অভিযোগ, বিমলেশকে আগে গলা টিপে মেরে তারপর রেললাইনে তার দেহ ফেলে রাখা হয় এটিকে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে চালানোর জন্য । তাদের আরও অভিযোগ, ওই রেললাইনের আশপাশের বাড়িগুলিতে দেহব্যবসা চলে এবং স্থানীয় লোকেরাও তাতে যুক্ত ।
আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে জনতা রেললাইনের দু পাশের বাড়িগুলিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে । আর তারপরই ওখানকার বাসিন্দা এক মহিলাকে নাগালে পেয়ে টেনে-হিঁচড়ে বের করে আনে এবং তাঁকে উলঙ্গ করে প্রকাশ্য রাস্তা দিয়ে হাঁটায়, চড়-চাপড় মারতে থাকে ।ওই মহিলার পরিচয় জানা যায়নি ।পরে তাঁর কী অবস্থা হয়েছিল, সে সম্পর্কেও বিশেষ কিছু জানা যায় না, যদিও সে সময়কার কিছু রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তিনি পুলিশের নিরাপত্তায় আছেন ।
সংবাদ-রিপোর্টে আরও জানানো হয় যে, পুলিশ ভিডিওর ছবি থেকে ওই অপকর্মে সরাসরি জড়িত ১৫ জন দুষ্কৃতীকে শনাক্ত করে এবং গ্রেফতারও করে । ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস রিপোর্ট করেছিল যে, কর্তব্যে অবহেলার দায়ে বিহিয়া থানার আই-সি সহ ৮ জন পুলিশ কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয় ।
ভোজপুরের পুলিশ সুপার আওকাশ কুমারের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি ।ভবিষ্যতে তাঁর বক্তব্য পাওয়া গেলে বুম তার রিপোর্ট হালতামাম করবে।