নাগরিকত্ব বিল পাশ হল লোকসভায়: আপানি যা জানবেন
৭ ঘন্টা টানা সংসদ বিতর্কের পর লোকসভায় মঙ্গলবার মাঝরাতে ৩১১ ভোটে পাশ হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।
মঙ্গলবার রাত ২:০৫ সময়ে লোকসভায় পাশ হয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী(ক্যাব) বিল, ২০১৯। ৩১১ জন পক্ষে ও ৮০ জন বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। পরের ধাপ রাজ্যসভায় পাশ হলেই আইনি কার্যকারিতা পাবে। বুধবার বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা হয়েছে।
সোমবার অধিবেশনের শুরুতে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে বিলটি পেশ করেন। নাগরিক সমাজ, বিরোধী দলগুলি বরাবরই বিলটির বিরোধিতা করেছে কারণ প্রস্তাবিত এই বিলটি ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের বদল করে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবে।
এই বিল অনুযায়ী পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আগত ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া ৬ টি ধর্মীয় সংখ্যালঘু উদ্বাস্তুদের আর অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা হবে না, পরিবর্তে দেওয়া হবে ভারতের নাগরিকত্বের সুবিধা।
It is well known that those minorities who chose to make Pakistan, Bangladesh and Afghanistan their home had to constantly live in the fear of extinction.
— Amit Shah (@AmitShah) December 9, 2019
This amended legislation by Modi govt will allow India to extend them dignity and an opportunity to rebuild their lives.
''এই বিলটি .০০১ শতাংশ এই দেশের সংখ্যালঘু বিরোধী নয়,'' অমিত শাহ বিলটি সংসদের কক্ষে পেশ করে বলেন। টানা ৭ ঘন্টা ধরে বিলের উপর চলা বিতর্কে বিশৃঙ্খলা পাশাপাশি স্বাধীনতার সময়ের বিভিন্ন চরিত্র সভারকার, অম্বেদকার, গান্ধী এবং জিন্না প্রমুখের মতাদর্শের বিচিত্র প্রসঙ্গ ওঠে, ফ্যাসিজিম এর সঙ্গে তুলনা করে হায়দরাবাদের আসাদউদ্দিন ওয়েইসির নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(ক্যাব) এর কপির পাতা ছিঁড়ে ফেলেন সংসদের মেঝেতে।
বিলকে স্বাগত জানিয়ে বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীসভার সদস্যরা।
Delighted that the Lok Sabha has passed the Citizenship (Amendment) Bill, 2019 after a rich and extensive debate. I thank the various MPs and parties that supported the Bill. This Bill is in line with India's centuries old ethos of assimilation and belief in humanitarian values.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 9, 2019
Congratulations to the entire nation on the passage of Citizenship (Amendment) Bill 2019 in Lok Sabha. Under the stewardship of PM @narendramodi and HM @amitshah the nation is fulfilling our ancient traditions of supporting the oppressed.
— Piyush Goyal (@PiyushGoyal) December 9, 2019
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, তেলাঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি এবং বাম ফ্রন্ট বিলের যৌক্তিকতার বিরোধিতা করেছে ও রাজ্যসভায় বিরোধিতা করার কথা বলেছে। বিজিপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলি, যেমন অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেস, ওড়িশার বিজু জনতা দল, তামিলনাড়ুর এআইডিএমকে বিলটিকে সমর্থন জানায়। ঘটনা পরম্পরায় বিজেপি জোটে ছেড়ে এখন কংগ্রেস-জোটে থাকা শিব সেনা বিলটির স্বপক্ষে ভোট দেয়। আশা করা যায় সরকার বিলটি রাজ্যসভায় পাশ করাতে এই সব দলের সহায্য নেবে কারন রাজ্য সভায় ২৫০ জনের মধ্যে বিজেপির সদস্য ৮০।
বিলটির সম্পর্কে আপানার যা জানা প্রয়োজন বুম জানাচ্ছে আপনাকে।
বিলিটি কী ব্যাপারে?
বিলটির উদ্দেশ্য পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আগত ধর্মীয় নিপিড়নের শিকার হওয়া ৬ টি ধর্মীয় সংখ্যালঘু উদ্বাস্তুদের সহজে নাগারিকত্ব পাওয়া সুনিশ্চিত করবে।
হিন্দু
জৈন
শিখ
বৌদ্ধ
খ্রিস্টান
পার্সি
বিলের প্রাবধান অনুযায়ী ভারতে আসা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া এই সব গোষ্ঠীকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা হবে না যদি তারা ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবরের আগে ভারতে আসেন। এই বিলটি আইনে কার্যকর হলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এই সব গোষ্ঠী ভারতের নাগরিকত্ব পাবে দ্রুততার সঙ্গে ৬ বছরের মধ্যে যা আগে পেতে ১২ বছর সময় লাগত।
বিলের লক্ষ্য ও কারণ হিসেবে বিলটিতে বলা হয়েছে:
''পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের সংবিধান একটি বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়। এর ফলশ্রুতিতে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, খ্রিস্টান ধর্মাবম্বীর মানুষরা এই সব দেশে ধর্মীয় ভিত্তিতে নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রতিদিনের জীবনে নিপীড়নে ভীত, যেখানে তাদের ধর্ম পালন, আচার, প্রচারে বাধা প্রাপ্ত ও নিষেধাজ্ঞা পেয়ে চলেছে। তাদের মধ্যেই অনেকে ভারতে চলে আসে আশ্রয়ের জন্য এবং ভারতে রয়ে যাচ্ছে তাদের ভ্রমনের নথির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও অথবা সম্পূর্ণ নথি বা কোনও নথি না থাকলেও।''
এই বিলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা বলছেন—সাংবিধানিকভাবে একজনকে ধর্মের ভিত্তিতে আগের আইন অনুযায়ী বৈষাম্য করা যাবে না, সংবিধানের ১৪ ও ১৫ ধারা অনুযায়ী; কারণ এখানে প্রধান অমুসলিম ধর্মগুলির উল্লেখ রয়েছে। সমালোচনা উঠছে সংখ্যাগুরু মুসলিম প্রতিবেশী দেশগুলির নাম আনাতে। এবং যথার্থ একটি বিল ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষের হিতাকাঙ্খায় আনা হলে এই ধরনের উদ্বাস্তুদের ধর্ম দেখা ঠিক নয় যা সংসদে বলা হয়েছে তার বিভিন্ন সংশোধন চাওয়া হয়েছে। এবং পাশ না করানোর কথা বলা হচ্ছে।
এই বিলটি ভারতের সব অংশে লাগু হবে শুধুমাত্র অসম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্গত ত্রিপুরাকে বাদ দিয়ে। এবং ওই সব এলাকায় ইনারলাইন পারমিট(আইএলপি) প্রয়োজন জনজাতির জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে। অমিত শাহ লোকসভায় বলেছেন মনিপুরকে ক্যাবের আওতা থেকে বাদ রাখা হবে। এর মাধ্যমে প্রকারন্তরে সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল, অসম ও ত্রিপুরার কয়েকটি এলাকা বাদ দিয়ে ক্যাব-এর আওতার বাইরে রাখা হবে।
এই বিলটির আরও লক্ষ্য ভারতের ওভারসিজ সিটিজেনদের ওপর সরকারে নিয়ন্ত্রন জোরদার করা। নাগরিকত্ব আইন লঙ্ঘন করলে বিদেশি ওভারসিজ সিটিজেনদের কার্ড বাতিল করার বিষয়টি থাকছে এই বিলে। যদিও এই বিল সেরকম ক্ষেত্রে বিদেশিদের তাদের অবস্থা বিবেচনার সুযোগ দেবে।
ক্যাব ও এনআরসির মধ্যে সংযোগ
অসমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন জাতীয় নাগরিক পঞ্জী(এনআরসি) তালিকা সংস্করণের প্রক্রিয়ায় ক্যাব গতি দেবে। যা ৩১ অগস্ট শেষ হয়েছে। এনআরসিতে ভারতীয় নাগরিকদের তালিকা পেশ করা হয়েছে যা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে তাদের নাগরিকত্বের নথিগত প্রমান দেয়। এই বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় দেখা যায় ১৯ লক্ষ মানুষ এনআরসি থেকে বাদ পড়েছেন যাদের মধ্যে অনেক হিন্দু রয়েছেন এবং তাদেরকেও বিদেশী ঘোষণা করা হয়ছে। ক্যাব এনআরসিতে বাদ যাওয়া বাকিদের তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করবে। ধারনা করা যায় অসম এনআরসিতে বাদ যাওয়া বাঙালি হিন্দুদের তালিকা প্রকাশ করবে।
ক্যাবের পরবর্তী ধাপ এনআরসি প্রক্রিয়া, যেমনটি অমিত শাহ বলেছেন যে, একটি এনআরসি প্রক্রিয়া সারা ভারতে করা হবে ২০২৪ সাল নাগাদ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের হঠাতে। এবং ক্যাব সেই সিদ্ধান্ত নিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া হতে কতদূর পিছনো হবে? কী কী নথি দেখাতে হবে নাগরিকদের নাগরিকত্ব পেতে গেলে আর কত সাল পর্যন্ত পিছতে হবে? এই প্রশ্নগুলিরই বিশদ উত্তর পাওয়া জরুরি যখন দেশজুড়ে এনআরসি প্রক্রিয়া কার্যকর হবে।
ভারতে কতজন উদ্বাস্তু আছে?
কেন্দ্রীয় সরকার তার জন্য আবার সময় চেয়েছে এবং উল্লেখ করেছে ভারতে উদ্বাস্তুদের উপস্থিতি নিয়ে কোনও সরকারী তথ্য নেই কারণ তার পরিসংখ্যান রাখা কষ্টসাধ্য।
২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী রাজ্য সভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজিজু লিখিত জবাবে বলেছেন:
''নির্ভরযোগ্য কোনও সমীক্ষা না থাকায় শিখ ও হিন্দু উদ্বাস্তু যারা আফগানিন্তান এবং পাকিস্তান থেকে গত তিন বছরে এসেছে তাদের কোনও সঠিক তথ্য নেই''
২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর একই ধরণের জবাবে বলা হয়েছে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং ভরতে উদ্বাস্তুদের সংখ্যার ক্ষতিয়ান রাখা সম্ভব ছিল না কারণ তারা দেশে প্রবেশ করে ''চোরাগোপ্তা এবং গোপনীয় ভাবে।'' এখানে পড়া যাবে এই জবাব।
দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশন ফর রিফিউজিস এর তথ্যে সংখ্যাটা ''সংশয়ী মানুষ'' এর সংখ্যা ভারতে ২০১৮ সালে ছিল ২,০৭,৮৪৮ জন, যাদের মধ্যে
১১,৯৫৭ জন শরনার্থী
১৯৫, ৮৯১ জন উদ্বাস্তু
সরকার রাজ্য সভায় ১০ জুলাই ২০১৯ রাজ্য সভায় বলেছেন ২,৪৪৭ জন বৈধ শরনার্থী রয়েছে এই ৬ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যারা পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে এসেছে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। পড়ুন এখানে।
বিলটি পড়া যাবে এখানে।