পুলওয়ামা হামলাঃ যুদ্ধে হতাহতদের জন্য তহবিল রয়েছে বটে, তবে তা অস্ত্র কেনার জন্য নয়
ফিরে এসেছে সেনা-কল্যাণ তহবিলে মুক্তহস্তে দান করার আবেদন নিয়ে ভাইরাল হওয়া বার্তা, যে তহবিল দিয়ে নিহত বা আহত সৈন্যদের উপকারও করা যাবে, আবার অস্ত্রশস্ত্রও কেনা যাবে
পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারির জঙ্গি হানার পর সেনা কল্যাণ তহবিলে দান করার আবেদন সম্বলিত পুরনো বার্তা সোশাল মিডিয়ায় ফিরে এসেছে । নাগরিকদের কাছে ওই তহবিলে উদার হস্তে দান করার অনুরোধ জানিয়ে বার্তাটি ভাইরাল করা হয়েছে, যে-তহবিলের অর্থ আবার বাহিনীর জন্য অস্ত্রশস্ত্র কেনার কাজে ব্যবহার করা হবে ।
বার্তাটির একটি অংশ (যেখানে যুদ্ধে নিহতের পরিবারবর্গ কিংবা আহতদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য সেই তহবিল ব্যবহার হওয়ার কথা রয়েছে) সত্য হতে পারে । কিন্তু অন্য অংশটি (যেখানে সেই তহবিল দিয়ে বাহিনীর জন্য অল্ত্রশস্ত্র কেনার কথা বলা হচ্ছে) সম্পূর্ণ মিথ্যা ।
ভাইরাল হওয়া বার্তাটি সিন্ডিকেট ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট নম্বরও দিয়েছে এবং তাতে টাকা জমা দেওয়ার খুঁটিনাটি পদ্ধতিও জানিয়েছে । সেই সঙ্গে দেশের সেনাবাহিনী, আধা-সেনা এবং সিআরপিএফের প্রতি নাগরিকদের সংহতি ও সহমর্মিতা জানাতেও অনুরোধ করেছে ।
বুম অতীতেও এই পোস্টটির তথ্য-যাচাই করেছিল এবং এবারও এটি বেশ কয়েকটি ফেসবুক পোস্টে এবং টুইটারে আত্মপ্রকাশ করেছে ।
এমনকী সিন্ডিকেট ব্যাংকও তহবিলের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি বিবৃতি জারি করেছে ।
তথ্য যাচাই
বুম ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল একই ধরনের দাবি নিয়ে হাজির বেশ কয়েকটি ফেসবুক পোস্টের পর্দা ফাঁস করেছিল l এ সংক্রান্ত রিপোর্টটি এখানে দেখুন ।
সে সময় আমরা দেখেছিলাম, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সরকারি টুইটার পেজ-এ একটি ব্যাখ্যা দিয়ে জানানো হয়, ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধে হতাহতদের কল্যাণ তহবিল নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করবে ।
সেই তহবিলে জমা পড়া দান নিহত সৈন্যদের বিধবা স্ত্রী, অন্যান্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা নির্ভরশীল পরিবার-সদস্যদের কল্যাণের জন্য ব্যয় করা হবে । এটা করা হয়েছিল ২০১৬ সালে সিয়াচেন গ্লেসিয়ারে এক তুষার-ধসে অনেক সেনার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর, যখন নাগরিকরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিহত সেনাদের প্রতি তাঁদের সহানুভূতি ও সংহতি জানাতে দানের ডালি নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন ।
সেই অ্যাকাউন্টটি কি এখনও খোলা আছে
বুম-এর হোয়াট্স্যাপ হেল্পলাইনে (৭৭০০৯০৬১১১) অনেকে জানতে চেয়েছেন, যুদ্ধে নিহতদের কল্যাণের জন্য খোলা সেই অ্যাকাউন্টটি এখনও চালু রয়েছে কিনা । সত্যটা জানতে বুম সেনাবাহিনীর জনসংযোগ অধিকর্তা কর্নেল আমন আনন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে l তিনি বুমকে জানান—“এটা একটা স্বেচ্ছামূলক বন্দোবস্ত l যাঁরা চান, তাঁরা ইচ্ছে করলে এই তহবিলে দান করতে পারেন । এ ধরনের একটা অ্যাকাউন্ট আছে বটে, তবে সেটা সরকারিভাবে বিশেষ সামনে আনা হয়নি, যাতে জনসাধারণকে দান করতে বলা হবে । এটা পুরোপুরিই স্বেচ্ছামূলক ।”
অ্যাকাউন্টটি এখনও সক্রিয় কিনা জানতে চাইলে আমন আনন্দ বলেন, হ্যাঁ এটি একটি সক্রিয় অ্যাকাউন্ট এবং যাঁরা চান, তাঁরা এতে দান জমা করতে পারেন ।
আমন আরও জানান, হিন্দি চলচ্চিত্রের অভিনেতা অক্ষয় কুমারের উদ্যোগ “ভারত কে বীর”-ও নিহত সিআরপিএফ জওয়ানদের পরিবারবর্গের জন্য তহবিল সংগ্রহে নেমেছে ।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে অক্ষয় কুমার টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে একটি মোবাইলঅ্যাপ বা ওয়েবসাইট তৈরির প্রস্তাব করেন, যেটা নিহত সৈন্যদের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে দান করা তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে । তারপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাহায্য নিয়ে ভারত কে বীর ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয় ।
১৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি হানার পর ওয়েবসাইটটিতে পুলওয়ামায় নিহতদের নাম ও ছবি অন্তর্ভুক্ত করে সেটি আপডেট করা হয়েছে।
কর্নেল আমন আনন্দ জানালেন, অক্ষয় কুমারের তৈরি ওয়েবসাইট অ্যাকাউন্টেও দানের অর্থ জমা দেওয়া যায় ।