পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক কেলেংকারি নিয়ে তাঁর ভুয়ো উদ্ধৃতি বাজে কথা, বললেন রঘুরাম রাজন
বুমকে রঘুরাম রাজন জানালেন, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক কেলেংকারি সম্পর্কে সতর্ক করে তাঁর দেওয়া বার্তা বলে সোশাল মিডিয়ায় যা রটেছে, তার কোনও ভিত্তি নেই
রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর থাকা কালে তিনি নীরব মোদি এবং পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের অনিয়ম নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং তদানীন্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমকে সতর্ক করেছিলেন বলে সোশাস মিডিয়ায় যে বার্তা রটেছে, তাকে সম্পূর্ণ ভুয়ো ও ভিত্তিহীন আখ্যা দিলেন রঘুরাম রাজন ।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি খবর হওয়া এবং ভারতীয় ব্যাংক সেক্টরকে নাড়িয়ে দেওয়া পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের ১১,৪০০ কোটি টাকার জালিয়াতি নিয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথ স্কুল অফ বিজনেসে অধুনা অধ্যাপনারত রাজন এ পর্যন্ত মিডিয়ার কাছে মুখ খোলেননি ।
হোয়াট্স্যাপে ঘুরে বেড়ানো রাজনের একটি ছবি ও উদ্ধৃতি বেশ কয়েকজন পাঠক বুমকে পাঠিয়েছেন, যাতে তাঁর মুখে বসানো হয়েছে—“আমি বেশ কয়েকবার নীরব মোদির জালিয়াতি নিয়ে রাহুল গান্ধী এবং চিদম্বরমকে সতর্ক করি । কিন্তু ওঁরা আমায় চুপ থাকতে বাধ্য করেন এবং ২০১৪ সালের মে মাস পর্যন্ত তাঁকে ব্যাংক-ঋণ মঞ্জুর করতে থাকেন । এখন পিএনবি কেলেংকারির জন্য আমাকে দায়ী করা হচ্ছে কেন?”
ই-মেল-এ রাজন বুমকে লিখেছেন—“এটা বিশুদ্ধ বাজে কথা, যার পিছনে প্রচারকারীদের সুস্পষ্ট অভিসন্ধি রয়েছে । আমার এই বক্তব্য আপনারা যে-ই শুনতে চায়, তাকে জানিয়ে দিতে পারেন ।”
বুম সোশাল মিডিয়ায় রাজনের এই উদ্ধৃতিটির খোঁজ করে দেখেছে, অনেক ব্যক্তিই এটা সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন এবং কয়েকজন এটি শেয়ার করেছেন ভুয়ো খবর ও প্রচারের ওয়েবসাইট পোস্টকার্ড নিউজ-এর লোগো সহ ।
ভুয়ো উদ্ধৃতি চিনব কীভাবে
সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী অনেকেই এই ভুয়ো উদ্ধৃতিটি শেয়ার করেছেন, অথচ এটি যে ভুয়ো তা বোঝার বেশ কিছু উপায় ছিল ।
যেমন গুগল-এ খোঁজ করলেই দেখা যেত যে, এই উদ্ধৃতিটির লিংক কোনও প্রতিবেদন বা প্রবন্ধে কিংবা বিশ্বাসযোগ্য কোনও ওয়েবসাইটে নেই । এবং এটা অসম্ভব যে রঘুরাম রাজনের মতো ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পোস্টকার্ড নিউজ-এর মতো কোনও ভুয়ো খবরের ওয়েবসাইটে মুখ খুলবেন । পোস্টকার্ড নিউজ অতীতে কীভাবে বলিউড অভিনেতাদের ভুয়ো উদ্ধৃতি তৈরি করেছে, তা দেখতে বুম-এর এই রিপোর্ট পড়ুন ।
দ্বিতীয়ত, এটাও সম্ভব নয় যে, মিডিয়া ও প্রযুক্তি সঞ্চালনায় কৃতবিদ্য ভারতীয় জনতা পার্টি বিরোধী পক্ষকে কোণঠাসা করার এমন একটা হাতিয়ার স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেবে । আমরা টুইটার ও ফেসবুকে বিজেপির সরকারি হ্যান্ডেল @BJP4India আঁতিপাতি করে খুঁজে দেখেছি, প্রাক্তন আরবিআই গভর্নরকে নিয়ে এমন ভয়ংকর বিতর্কিত একটা বিষয়ে বিজেপির কোনও প্রতিক্রিয়াই নেই ।
তৃতীয়ত, রাজন রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর থাকা কালে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত রাহুল গান্ধী ছিলেন কংগ্রেস দলের সহ-সভাপতি এবং তিনি ইউপিএ সরকারের কোনও মন্ত্রক বা পদ অলংকৃত করতেন না । আরবিআই-এর গভর্নর কোনও ব্যাংক জালিয়াতি বিষয়ে কোনও দলীয় নেতাকে সতর্ক করছেন, এমনটা আগে কখনও ঘটেনি । যদি তিনি তা করেও থাকতেন, তা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা তাঁর পক্ষে আগুনে ঘি ঢালার মতো ব্যাপার হতো ।
সর্বেপরি, এই পোস্টটিতে এত ব্যাকরণগত ভুল রয়েছে, যা কোনও গভর্নরের কাছে প্রত্যাশিত নয় ।
অনেকেই এই ভুয়ো উদ্ধৃতির পোস্টটি পোস্টকার্ড নিউজ থেকে শেয়ার করলেও ঠিক কে বা কারা এটা তৈরি করল, তা বুম এখনও খুঁজে বের করতে পারেনি । ইতিমধ্যে রঘুরাম রাজন ক্রমাগত মিডিয়া ও সোশাল মিডিয়ায় এই বলে সমালোচিত হয়ে চলেছেন যে, তিনি পিএনবি-র এই কেলেংকারির কথা সব আগে থেকেই জানতেন । সাংবাদিক ও উত্তর-সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখক শোভা দে পর্যন্ত বলেছেন—রঘুরাম রাজনের আমলেই তো এমন কেলেংকারি ঘটতে পারল ।
গত সপ্তাহেই যেমন ওয়েবসাইট মানিকন্ট্রেল লেখে —“বুলিয়ন ও জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজনের কাছে ২০১৪ সালের ২৬ জুলাই লিখিত অভিযোগ করেছিলেন যে, পূর্বতন ইউপিএ সরকার ক্ষমতা হারানোর ঠিক পূর্বাহ্নে তার অন্তরঙ্গ পুঁজিপতিদের তুষ্ট করতে সরকারের স্বর্ণনীতি পরিবর্তন করে ফেলে । এবং এ ব্যাপারে তাঁরা দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই রাজনকে আগাম সতর্ক করে দিয়েছিলেন ।
মানিকন্ট্রোল-এর রিপোর্টে আছে—“ইউপিএ সরকার ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পাঁচ দিন আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে মেহুল চোকসির গীতাঞ্জলি জেমস সহ ১৩টি বৃহৎ ও মাঝারি ব্যবসায়ী সংস্থাকে সোনা আমদানির এবং তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করার অনুমতি দেয় তথাকথিত ৮০:২০ প্রকল্প অনুসারে । এটাই সোনার মজুতদারিতে উৎসাহ দেয় এবং ওই ব্যবসায়ীদের কৃত্রিমভাবে খুচরো বাজারে বিক্রয়মূল্য অত্যধিক বাড়িয়ে অতি-মুনাফা অর্জনে সাহায্য করে ।”
তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে ইউপিএ সরকারের এই সিদ্ধান্ত কী ভাবে নীরব মোদী ও মেহুল চোকসিদের ব্যাংক জালিয়াতি করতে সাহায্য করেছে কিংবা এই দুই বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক কী, তা স্পষ্ট হয়নি ।
এই সব অভিযোগ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে বুম রঘুরাম রাজনের কাছে চিঠিও লিখেছে । তাঁর মতামত পেলেই সংশ্লিষ্ট রিপোর্টটি পরিমার্জন করা হবে ।