ভুয়ো খবরের কাগজের ক্লিপিং টুইট করেন আরবিআই বোর্ডের সদস্য এস গুরুমূর্তি
বুম দেখে যে, শেয়ার-করা ক্লিপিংটি জাল; খবরের কাগজের ক্লিপিং তৈরির যন্ত্র দিয়ে তা তৈরি করা হয়
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পার্ট-টাইম ডিরেক্টর এস গুরুমূর্তি একটি ভুয়ো খবরের কাগজের ক্লিপিং টুইটারে শেয়ার করেন। 'ইন্ডিয়ান পলিটিশিয়ান অ্যারেস্টেড' বা 'ভারতীয় রাজনীতিক গ্রেপ্তার' শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয় একটি ওয়েবসাইটে। খবরটি নাকি ছাপা হয়েছিল 'দ্য বস্টন গ্লোব' কাগজে।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে নিশানা করে ওই ক্লিপিং-এর ছবিটি টুইট করেন গুরুমূর্তি। সঙ্গে ক্যাপশনে লেখেন, "দয়া করে এই খবরটি পড়ুন। কে এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে?"
গুরুমূর্তি আরএসএস-এর ভাবাদর্শী ব্যক্তি। টুইটার ব্যবহারকারীরা তাঁর ভুল ধরিয়ে দেওয়ায় উনি নিজের টুইটটা সরিয়ে নেন।
টুইটটা দেখতে এখানে ।
ভুয়ো ক্লিপিংটার তারিখ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০০১। তাতে লেখা হয়, "একজন ভারতীয় নেতার কাছে নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্য আর হিসেব বহির্ভূত টাকা পাওয়া গেলে বিমান বন্দরের সুরক্ষা বাহিনী তাঁকে আটক করে। আমাদের সূত্র জানাচ্ছেন, তিনি ভারতের এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হস্তক্ষেপ করলে, তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়, জানাচ্ছে এএফপি।"
বিজেপি এমএলএ হর্ষ সাঙ্গভিও ক্লিপিংটি টুইট করেন। আর ক্যাপশনে লেখেন, "একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছেলেটি কে? নামটা অনুমান করতে পারছেন?"
আমাদের হেল্পলাইনে (৭৭০০৯০৬১১১) আমরাও ছবিটি পাই। জানতে চাওয়া হয় যে, ক্লিপিংটি আসল কিনা। সত্যিই কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাদক দ্রব্য নিয়ে যাওয়ার জন্য রাহুল গান্ধীকে আটক করা হয়েছিল, এবং এও কি সত্যি যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর হস্তক্ষেপেই রাহুল গান্ধী ছাড়া পান?
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল হওয়া খবরের কাগজের ক্লিপিংটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে খবরের কাগজের ক্লিপিং তৈরি করার এক সরঞ্জামের লিংক বেরিয়ে আসে।
ওয়েবসাইট 'ফোডে.কম'-এর সাহায্যে তা করা যায়। যে কাগজের ক্লিপিং প্রয়োজন, সেটির মাস্টহেড ব্যবহার করে সেই কাগজের ক্লিপিং তৈরি করে ফেলা সম্ভব।
খবরের কাগজটির নাম এবং ভাইরাল ছবিটিতে যা লেখা ছিল, তা ব্যবহার করে আমরাও অবিকল ওই রকম এক ক্লিপিং পেয়ে যাই।
ক্লিপিং-এর ছবি তৈরি হওয়ার পর দেখা যায়, সেটির ডানদিকের কোণে, একই ছাপা অংশ ফুটে উঠেছে। তা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়, আগের ক্লিপংটি তৈরি করার ক্ষেত্রেও ওই সরঞ্জামই ব্যবহার করা হয়।
সূত্রের ওপর ভিত্তি করে 'দ্য হিন্দু'-তে প্রকাশিত একটি লেখারও সন্ধান পায় বুম। 'রাহুল গান্ধীকে কি এফবিআই আটক করেছিল?' এই শিরনামে লেখাটি ছাপা হয়েছিল সেপ্টেম্বর ২৯, ২০০১ সালে। তবে আটক করার কোনও কারণের উল্লেখ ছিল না তাতে।
"সেপ্টেম্বর ১১-র সন্ত্রাসবাদী হামলার পর, মার্কিন সুরক্ষা সংস্থাগুলি কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। তাই ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী ও বিরোধী পক্ষের নেতা সোনিয়া গান্ধীর ছেলে মি. রাহুল গান্ধীকে বস্টন বিমানবন্দরে ঘন্টাখানেকের জন্য আটক করে। এখানকার সূত্র মারফৎ তা জানা গেছে,"—দ্য হিন্দু।
আর্কাইভের জন্য এখানে ক্লিক করুন।