ঢাকার অফিস-বাড়িতে ঘটা মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও মুম্বইয়ের ঘটনা বলে চালানো হচ্ছে
ঢাকার একটি জ্বলন্ত বহুতল বাড়ির আগুন থেকে বাঁচতে লোকেরা ঝাঁপ দিয়ে নীচে পড়ে মারা যাচ্ছে, এই মর্মান্তিক ঘটনার ভিডিও মুম্বইয়ের ঘটনা বলে ভাইরাল হয়েছে
একটি বহুতল বাড়ির জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে প্রাণ বাঁচাতে এক-এক করে চারজন লোক নীচের রাস্তায় মরণঝাঁপ দিচ্ছে, দমকলের কর্মীরা চারিদিকে ছোটাছুটি করছে আর লোকেরা অসহায়ভাবে ভিড় করে তাকিয়ে দেখছে—এই দৃশ্যটি মুম্বইয়ের নয়, বাংলাদেশের ঢাকার ।
চার মিনিট ১৭ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপটি ভারতে হোয়াট্স্যাপ ও অন্যান্য সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই ব্যাখ্যা সহ যে, এটি মুম্বই মহানগরীর মফঃস্বল এলাকা আন্ধেরির ঘটনা ।
একই ঘটনার অপেক্ষাকৃত কম সময়ের, ৩০ সেকেন্ডের, একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকেও শেয়ার হয়ে চলেছে—
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, আগুনে আটকে পড়া বাসিন্দারা প্রাণভয়ে কেবল লাইনের তার ধরে নীচে নেমে আসতে চেষ্টা করছে । অন্যান্য অনেকে আবার জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার বাড়িয়ে দেওয়া দড়ি ধরে নেমে আসতে সচেষ্ট l তবে অন্তত চারজন লোক ওই অত উঁচু থেকে ঝাঁপিয়ে নীচে পড়ে মারা গেছে ।
লোকেরা যে বাংলায় কথা বলছে, ভিডিওতে সেটা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে ।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙে তারপর তল্লাশি চালায়, কিন্তু তাতে বিশেষ কিছু লাভ হয় না ।
তারপর আমরা সোশাল মিডিয়ার সবকটি মঞ্চে ভাইরাল হওয়া বার্তার মূল কয়েকটি শব্দ ‘আন্ধেরি’, ‘রাহেজা মল’, ‘মুম্বই’, ‘আগুন’ এই শব্দগুলি সাজিয়ে ভিডিওর খোঁজ করি ।
২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল ওই একই ভিডিও ইউ-টিউবে আপলোড হয় এই বলে যে, ঘটনাটি মুম্বইয়ের ।
তবে ভিডিওটির ‘মন্তব্য’ অংশে একজন উল্লেখ করেন যে ঘটনাটি আসলে ঢাকার । এরপর আমরা গুগল-এ গিয়ে ‘ঢাকার অগ্নিকাণ্ড’ বলে অনুসন্ধান চালালে একটা ছবি পাই, যা ভিডিওটির সঙ্গে মেলে ।
স্টক ছবির ওয়েবসাইট শাটারস্টক থেকে আমরা কাছাকাছি দেখতে একটি ছবি পাই, যাতে KINDRED ও BATA লেখা দুটি দোকানের সাইনবোর্ড জ্বলজ্বল করছে, যেগুলি ভিডিওতেও রয়েছে । শাটারস্টকের অন্যান্য ফোটো থেকেও স্পষ্ট হয়ে যায় যে আমরা আসলে একই ছবি পাচ্ছি ।
এরপর আমরা এই ছবিটির উপর দ্বিতীয়বার খোঁজখবর চালাই আর তখনই কয়েকটি সংবাদ-প্রতিবেদনের দিকেও আমাদের নজর পড়ে ।
বনানীর অগ্নিকাণ্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ঢাকার বনানী এলাকায় ২২ তলা বিল্ডিং এফ-আর টাওয়ারে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জন নিহত হয় (যাদের মধ্যে ৬ জন নীচে লাফ দিয়ে পড়ে মারা যায়) এবং ৭০ জন আহত হয় । বাংলাদেশের রাজধানীতে অবস্থিত এই বহুতলটি ছিল একটি অভিজাত বাণিজ্যকেন্দ্র ।
আটকে পড়া অফিসযাত্রীরা আর্ত চিত্কারে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছিলেন আর পাশেরই কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে ক্রমশ লোকের ভিড় বাড়ছিল ।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র ডেইলি স্টার রিপোর্ট করে যে, দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে আগুন লাগে এবং ২২টি দমকলের গাড়ি, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সঙ্গে মিলে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আগুন আয়ত্তে আনতে পারে ।