টিভি সিরিয়ালের স্থিরচিত্রকে কাশ্মীরি সাংবাদিকের উপর অত্যাচারের ছবি বলে চালানো হচ্ছে
৩৭০ ধারা বাতিল করার পর কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ে ছড়ানো ভুয়ো খবর ও তথ্যের মধ্যে এটি সাম্প্রতিকতম।
জনৈক টুইটার ব্যবহারকারী একটি হিন্দি টিভি সিরিয়ালের স্থিরচিত্রকে কাশ্মীরি সাংবাদিকের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ছবি বলে দাবি করার পর সেটি ভাইরাল হয়েছে।
সরকার জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করার পর কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ে যত ভুল খবর ও তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, এটি তাতে সর্বশেষ সংযোজন।
টিভি-শো যখন জীবন্ত হয়ে ওঠে
গত ২৭ অগস্ট এক টুইটার ব্যবহারকারী এক ব্যক্তিকে জেলে আটকে রেখে পুলিশের উর্দি পরা চারজনের নিগ্রহ করার ৪টি ছবি টুইট করে। ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, “গতকাল রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ফাহাদ ভাট নামে এক কাশ্মীরি সাংবাদিককে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। এখন তাকে অত্যাচার করা হচ্ছে। আমাজনের জঙ্গল পুড়ে যাওয়া নিয়ে বিশ্বের উদ্বেগের শেষ নেই, কিন্তু কাশ্মীরের জনসাধারণের জন্য তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। কেন?”
টুইটার ব্যবহারকারীর নাম দেওয়া আছে আরবাজ খান এবং টুইটে আরও একটি ছবি যোগ করে দাবি করা হয়েছে, যেন এটি বিবিসি-ও রিপোর্ট করেছে। যে জন্য তার ক্যাপশনে লেখা হয়েছেঃ “ঘটনাটি রিপোর্ট করার জন্য বিবিসি-কে ধন্যবাদ!”
এটা তখন করা হচ্ছে, যখন বিবিসি, আল জাজিরা এবং রয়টার্স-এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ-মাধ্যম কাশ্মীরের অশান্তি নিয়ে তাদের রিপোর্টের জন্য ভারত সরকারের দ্বারা সমালোচিত ও নিন্দিত হয়েছে।
“ভুয়ো”, “খবর” এবং “সত্য”
ছবিটির খোঁজ চালিয়ে আমরা ইউ-টিউবে একটি ভিডিও-র সন্ধান পাই, যার শিরোনাম—“রণবীরকে লক-আপের ভিতর নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে!”
ভিডিওটির মন্তব্য অংশে চোখ চালিয়ে বুম দেখে, নির্যাতিত ব্যক্তিটির নামভূমিকায় রয়েছেন শক্তি অরোরা।গুগল সার্চ করে আমরা শক্তি অরোরা এবং রণবীর এই শব্দদুটি বসিয়ে দেখি, এটি আসলে একটি হিন্দি টিভি সিরিয়ালের অংশ, যার নাম—“মেরি আশিকি তুমসে হি।”
ভিডিওটি আসলে শুটিংয়ের নেপথ্যের ছবি, যাতে অরোরাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যাচ্ছে। তাতেই বোঝা যায়, দৃশ্যটি আসলে সাজানো বা অভিনীত এবং সত্যিকারের পুলিশি নির্যাতনের দৃশ্য নয়।
আমরা আরও দেখি যে, বিবিসির সাংবাদিক সাইমন ম্যাকয়-এর যে ছবিটি টুইটারে জোড়া হয়েছে, সেটি আসলে কেম্ব্রিজের ডিউক ও ডাচেসের তৃতীয় রাজকীয় বংশধরের জন্মের ঘোষণার একটি স্ক্রিনশট, এবং সেটিকে এমনভাবে ছবির সঙ্গে জোড়া হয়েছে, যেন ম্যাকয় কাশ্মীরি সাংবাদিক ফাহাদ ভাটের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর নির্যাতনের খবর সম্প্রচার করছেন!
সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পর ২৫ দিনেরও বেশি হয়ে গেছে কাশ্মীর উপত্যকা কার্যত অবরুদ্ধ। ইন্টারনেট এবং মোবাইল পরিষেবাও কাশ্মীরিদের নাগালের বাইরে রাখা হয়েছে, যার ফলে তাঁরা অবশিষ্ট দেশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে পারছেন না।
এই সময়পর্বে বুম দেখেছে, কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ে ভুয়ো খবর ও গুজবের বান ডেকেছে, বিশেষত কাশ্মীরিদের সঙ্গে বাকি দেশবাসীর সংযোগ স্তব্ধ করে দেওয়ার সুযোগ নিয়ে এই ঘটনা ঘটে চলেছে।