সোশ্যাল মিডিয়ায় #মুকেশনীতাঅনিলকেবাঁচালো ট্রেন্ড চালু হয় প্রচুর টুইটের ফলে
বুম দেখেছে যে একাধিক টুইটার ইউজার MukeshNitaSaveAnil হ্যাশট্যাগটিকে ট্রেন্ড করাতে সাহাজ্য করেছে, সেই দিনে ২০ থেকে ৩০ বার টুইট করে
ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি যে দিন তাঁর ছোট ভাই অনিল আম্বানির সুইডেনের টেলিকম যন্ত্রাংশ নির্মাতা এরিকসন কোম্পানির কাছে হওয়া বিপুল দেনার অনেকটা মিটিয়ে দিলেন, তার পর দিন থেকেই #মুকেশনীতাসেভঅনিল হ্যাশট্যাগটি টুইটারে ব্যাপকভাবে চালু হয়ে গেল ।
সুপ্রিম কোর্ট ওই দেনা শোধ করার জন্য ১৯ মার্চ যে সময়সীমা ধার্য করে দিয়েছিল, তার চব্বিশ ঘন্টা আগেই অনিল আম্বানির রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স সোমবার ৪৮০ কোটি টাকা মিটিয়ে দিল ।
এই দেনা যথাসময়ে শোধ দিতে না পারলে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান অনিল আম্বানিকে তিন মাস জেল খাটতে হতো । এ সম্পর্কে আরও জানতে হলেএখানে পড়ুন ।
১৮ মার্চ এক প্রকাশ্য বিবৃতিতে কনিষ্ঠ আম্বানি তাঁর দাদা-বৌদিকে এ জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন—“আমার এই সমূহ বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতার এমন প্রদর্শনীর জন্য শ্রদ্ধেয় দাদা মুকেশ ও নীতাকে অশেষ ধন্যবাদ l তাঁদের এই মহানুভবতায় আমি ও আমার পরিবার গভীরভাবে আপ্লুত ।”
সোমবারই এই ঋণশোধের বিষয়টি ব্যাপকভাবে জানাজানি হয় । তবে কয়েকজন টুইটার ব্যবহারকারী জানান, তাঁরা বিভিন্ন টুইটার অ্যাকাউন্টে হ্যাশট্যাগ #MukeshNitaSaveAnil টুইটটি একই বিষয়ে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছেন ।
বুম দেখেছে, মেঘনাদ নামে এক পেশাদার এবং কলাম-লিখিয়ে টুইটগুলি দেখিয়ে দেওয়ার পর টুইটার কর্তৃপক্ষ সেগুলি সাসপেন্ড করেছে ।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মুখপাত্র এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন ।
বুম-এর তদন্তঃ #MukeshNitaSaveAnil
বুম টুইটারে অভিন্ন বাক্য সাজিয়ে অনুসন্ধান করতেই দেখা গেছে, মুকেশনীতাসেভঅনিল হ্যাশট্যাগ দেওয়া সবকটি টুইটেই একই বাক্য কপি-পেস্ট করা হয়েছে ।
আম্বানি পরিবার প্রমাণ করলো যে তারা পরিবারের যত্ন নেয় এবং পারিবারিক মূল্যবোধকে সম্মান করে—এ ধরনের বাক্যই বারবার মুকেশ-নীতার ছবি সহ টুইট করা হচ্ছে ।
এই ধরনের পুনরাবৃত্ত দ্বিতীয় বাক্যটি হলোঃ মুকেশ আম্বানি অনিল আম্বানির দেনা শোধ করে দিলেন…
একই ধরনের এমন টুইটও বেশ কয়েকটি পাওয়া গেছে, যাতে লেখা—মুকেশ আম্বানি অনিল আম্বানির দেয় টাকা শোধ করে দিলেন এবং আমি তাঁর এই স্বভাবের খুব ভক্ত…
তৃতীয় বাক্যটি হলোঃ আম্বানিরা প্রমাণ করে দিলেন যে পরিবারের প্রতি এই দায়বদ্ধতাই যথার্থ ভারতীয় মূল্যবোধ…
প্রভাবশালী টুইটার ব্যবহারকারীরাই কি হ্যাশট্যাগটি চালু করলেন?
বুম দেখেছে, বেশ কিছু স্বঘোষিত প্রভাবশালী অ্যাকাউন্ট হ্যাশট্যাগটি টুইট করেছে।
একটি সুপ্ত অ্যাকাউন্টের ব্যস্ততা
বুম দেখেছে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে ফৈয়াজ খান (@Shaadiboyz) নামের একটি অ্যাকাউন্ট ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র দু বার টুইট করেছে ।
কিন্তু ২০১৯-এর ১৯ মার্চ ঘুমিয়ে থাকা ওই অ্যাকাউন্টটিই ওই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে মুকেশ আম্বানির প্রশংসা করে ৩৫ বার টুইট করেছে, যেগুলির ভাষা ও বক্তব্য অন্যান্য টুইটার অ্যাকাউন্টের মতোই।
ঋতব্রত দত্ত (@i_ritabrata) নামে আর এক টুইটার মুকেশ-নীতার ছবি দিয়ে ৩৮ বার টুইট করেছেন ।
পূজা নামে তৃতীয় একটি টুইটার অ্যাকাউন্টও একই ছবি ও বিবরণ দিয়ে ৩১ বার টুইট করেছে ।
বুম দেখেছে, তথাকথিত প্রভাবশালী টুইটার অ্যাকাউন্টগুলি একই দিনে একই টুইট অসংখ্যবার ওই হ্যাশট্যাগ সহ পোস্ট করেছে ।আর এটাই ওই হ্যাশট্যাগের চালু হওয়ার নেপথ্য কাহিনি ।
টুইটগুলি মানুষেরই করা বলে মনে হয়, কেননা কোনও যান্ত্রিক বট (bot) সেগুলি করলে তা বোঝা যেত ।