পীযূষ গোয়েল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস-এর একটি সাজানো ভিডিও পোস্ট করার পর টুইটারে ঝড়
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস-এর একটি সাজানো ভিডিওরেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পর ইন্টারনেটে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়েছে
ভারতের প্রথম ইঞ্জিন ছাড়া মাঝারি উচ্চ গতিতে চলার ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হওয়ার কিছু দিন আগেই রেলমন্ত্রী চলন্ত ট্রেনটির একটি ভিডিও ফেসবুক ও টুইটারে পোস্ট করেছেন ।
ভিডিওটির যে ক্যাপশন তিনি দিয়েছেন, তা থেকেই এ বিষয়ে তাঁর উত্তেজনা স্পষ্টঃ “এটা কি একটা পাখি…নাকি এটা একটা বিমান…দেখুন! ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগে তৈরি প্রথম ভারতীয় ইঞ্জিনবিহীন ট্রেনবন্দে ভারত এক্সপ্রেস কি বিদ্যুত্গতিতে এগিয়ে চলেছে“। রিপাবলিক টিভি গোয়েলের পোস্ট করা ভিডিও-র ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন লিখেছে, যাতে বলা হয়েছে, গতির দিক দিয়ে এই ট্রেনের কাছে কতটা কী আশা করা যায়, রেলমন্ত্রী তারই একটা ঝলক দেখাচ্ছেন ।
তবে ট্রেনটি যত দ্রুতগতিরই হোক না কেন, গোয়েলের ছাড়া ভিডিওতে তাকে যত দ্রুতগতির মনে হচ্ছে, ততটা নয় ।
অভিষেক জয়সওয়াল নামে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, গোয়েলের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলে ওই ট্রেনের যে-টুইট আগেই অভিযেক করেছিলেন, সেটিই টুকে দেওয়া হয়েছে । তবে তার সঙ্গে গতি বাড়ানোর প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলন্ত ট্রেনটিকে আরও গতিময় প্রতিপন্ন করা হয়েছে ।
জনৈক ফেসবুক ব্যবহারকারী আরএফ এজে তাঁর পোস্টেও একই দাবি করেছেন যে, রেলমন্ত্রী তাঁর ভিডিওটাই ট্রেনের গতি দ্বিগুণ বাড়িয়ে টুকে দিয়েছেন । সোশাল মিডিয়ায় প্রাপ্য টুইটার ব্যবহারকারী অভিষেক জয়সওয়াল এবং ফেসবুকের আরএফ এজে-র ছবির তুলনা করে আমরা দেখেছি, দুজনেই আসলে একই ব্যক্তি ।
জয়সওয়াল য়ে ইউ-টিউব ভিডিওটি তাঁর টুইটারে ব্যবহার করেছেন, সেটির নাম “দ্য রেল মেল”, তারিখ ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮। ট্রেন নিয়ে যারা চর্চা করে, সেই “ট্রেন স্পটার”-রাই এই পেজটি চালায় এবং নানা জায়গায় চলা ট্রেনের ভিডিও তুলে এই চ্যানেলে পোস্ট করে ।
“ইন্ডিয়ান রেল মেল” নামেও ইউ-টিউবের একটি ফেসবুক পেজ আছে, যেটি চালান—আর কেউ নন—আরএফ এজে। কিংবা নামান্তরে অভিষেক জয়সওয়াল। অর্থাৎ অভিষেকই এটি প্রথম পোস্ট করেছিলেন । একজন ব্যবহারকারী অভিষেকের ভিডিওটির পাশে গোয়েলের ভিডিওটি পোস্ট করেছেন, যাতে দুটি ভিডিও-র সাদৃশ্য যেমন স্পষ্ট, তেমনই বোঝা যাচ্ছে গোয়েলের ভিডিওটিতে গতির বিষয়টা সম্পাদনা করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ।
বুম খেয়াল করেছে, গোয়েলই প্রথম এই সাজানো, জাল ভিডিওটি পোস্ট করেননি, তার আগের দু সপ্তাহ ধরে আরও অনেকেই এই সম্পাদিত ভিডিওইন্টারনেটে ক্রমাগত পোস্ট করেগেছে ।
মনে হয়, যারা রেলমন্ত্রীর সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলটির দেখাশোনা করে, তারা ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করার প্রয়োজন মনে করেনি, কিংবা যে ব্যক্তিটি ভিডিওটি তুলেছিলেন, তাঁকে তার জন্য কৃতিত্ব দেওয়ার কথাও তাদের মাথায় আসেনি ।
যে মুহূর্তে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যায়, তখন থেকেই পীযূষ গোয়েল সোশাল মিডিয়ায় অন্যের তোলা ভিডিও টুকলি করার দায়ে ব্যাপক তিরস্কারও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হয়েছেন। কেউ একটা গরুর গাড়ির চলার ভিডিও আপলোড করে মন্তব্য করেছেন, মোদী সরকারের আমলে গরুর গাড়ির গতিও দারুণ বেড়ে গেছেঃ
কেউ আবার জাপান ও আমেরিকার ট্রেনের গতির তুলনা করে গোয়েলের মুখে বসিয়েছেন—অত মেহনত করার দরকার কী? ট্রেনের ভিডিও-র গতি ৪ গুণ বাড়িয়ে দিলেই তো হয়!
আবার কেউ ট্রেনটাকে স্থির রেখে প্ল্যাটফর্ম দিয়ে যাতায়াতকারী লোকেদের চলাচলের গতি বাড়িয়ে ভিডিও তৈরি করে ছেড়েছেন।
কেই-কেউ ব্যঙ্গ করেছেন, কর আদায়ের গতিও এ ভাবে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেখানো হোক ।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন হওয়ার কথা ১৫ ফেব্রুয়ারি । এটির গতি হবে ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা ভারতের ট্রেনগুলির মধ্যে দ্রুততম । তবে শেষ পর্যন্ত এই গতিতে ট্রেনটি চালানো যাবে কিনা, তা নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্টে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে, কারণ এই গতিতে চলার মতো রেললাইন এখনও প্রস্তুত নয় ।