শ্লীলতাহানির দু বছরের পুরনো ভিডিও ভুয়ো ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরল
ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলির দাবি, শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে এক কাশ্মীরি মহিলার l আসলে ঘটনাটি উত্তরাখণ্ড প্রদেশের কাশীপুর শহরের
একদল পুরুষের হাতে এক মহিলার শ্লীলতাহানির দু বছরের পুরনো ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে এই দাবি সহ যে, এটি প্রকাশ্য দিবালোকে এক কাশ্মীরি মহিলাকে নিগ্রহ করার ছবি । ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে বাংলায় বার্তা দেওয়া হয়েছে— “হিন্দু সন্ত্রাসবাদীরা প্রকাশ্যে এক কাশ্মীরি মহিলাকে ধর্ষণ করে তার ভিডিও তৈরি করে ছেড়েছে । সরকারের উচিত এই হিন্দু সন্ত্রাসবাদীদের কড়া শাস্তি দেওয়া l কাশ্মীরকে স্বাধীন হতে দেওয়া হোক । কাশ্মীরিরা একটা সুন্দর জীবন পাক” ।
বুম অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, ভিডিওটির সঙ্গে তার ক্যাপশনটির কোনও সম্পর্ক নেই ।
বাংলা ফেসবুক পেজ অপরাধ জগতের খবর -এ এই পোস্টটি গত ২৪ ঘন্টায় ১১০০০ বার শেয়ার হয়েছে ।
ভাইরাল হওয়া এই ফেসবুক পেজটির আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।
ভিডিও টি অন্য আরেকটি ফেসবুক পেজেও ভাইরাল হয়েছে। এখানে আর্কাইভ লিঙ্ক দেখুন।
তথ্য যাচাই
ভিডিওর সঙ্গের ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে যে মহিলাটি কাশ্মীরি । কিন্তু যে ভাষায় কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে, তা কাশ্মীরি ভাষা নয় । ভিডিওটির মন্তব্য অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি দু বছরের পুরনো ঘটনা ।
ভিডিওর শেষ দিকে এক ব্যক্তিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে । সে বলছে— মেয়েটিকে গণধর্ষণ করা হয় এবং সেই অপকর্মের ছবি ভিডিও তুলে গোটা কাশীপুরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় । ঘটনাচক্রে কাশীপুর শব্দটা সে যে ভাবে উচ্চারণ করছে, তাতে মনে হয় যেন কাশ্মীর উচ্চারণ করা হচ্ছে ।
যখন আমরা ইন্টারনেটে কাশীপুরে মহিলার শ্লীলতাহানিঃ অনলাইনে আপলোড করা এই শব্দগুলি সাজিয়ে খোঁজ চালাই, তখন ২০১৬-র ওই ঘটনার বেশ কয়েকটি লিংক মেলে । সে সময় মিডিয়া যে ঘটনাটি ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করেছিল, তা বোঝা যায় ।
এ রকমই কিছু রিপোর্ট দেখতে এখানে এবং এখানে ক্লিক করুন ।
নিউজ ২৪-এর একটি সংশ্লিষ্ট রিপোর্টও এখানে দেখতে পারেন, তবে দেখার সময় দর্শকরা সতর্ক থাকুন ।
সংবাদপত্রগুলির রিপোর্টে যেখানে একদল পুরুষের দ্বারা এক মহিলার শ্লীলতাহানির কথাই আছে, নিউজ ২৪-এর রিপোর্টে সেখানে গণধর্ষণের কথা বলা হয়েছে ।
সত্যটা কী?
যখন বুম কাশীপুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ভিডিওটা দেখাই, তখন কাশীপুর থানার অফিসার জানান—“এটা একটা পুরনো ঘটনা । অভিযুক্তরা সকলেই এখন জেল খাটছে । আর কাশীপুরে অন্তত এই ভিডিও এখনও ভাইরাল হয়নি ।” তিনি আরও জানান, অপরাধের শিকার মহিলাটি একজন মুসলিম এবং অপরাধীরা সকলেই স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ।
উত্তরাখণ্ডের কাশীপুর শহরে ২৪ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি ঘটেছিল । মেয়েটি যখন তার ভাইকে খুঁজতে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে যায়, তখন কিছু লোক তার শ্লীলতা হানি করে আর কয়েকজন যুবক তার ছবি তুলে রাখে । দুর্বৃত্তরা যখন মেয়েটির শ্লীলতাহানি করছে, তখন আশপাশে অন্তত জনা কুড়ি লোককে নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে । পরে ভিডিওটি অনলাইনে আপলোড করা হয় ।
পুলিশ অবশ্য ২৫ সেপ্টেম্বরই ৭ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ।