অমৃতসরের দুর্ঘটনার ট্রেন চালকের ভুয়ো 'আত্মহত্যার' ছবি, ভিডিও ভাইরাল
অমৃতসরের ট্রেন চালকের মৃত্যু সম্পর্কে ভাইরাল হওয়া মেসেজগুলি মিথ্যে। বুম যাচাই করে দেখেছে যে ব্যবহৃত ছবি, ভিডিও আসলে পাঞ্জাবে অন্য একটি বিচ্ছিন্ন আত্মহত্যার
একটি ব্রিজ থেকে ঝুলে থাকা এক দেহের ছবি আর ভিডিও অমৃতসরের রামলীলার দুর্ঘটনায় জড়িত ট্রেনের ইঞ্জিনের চালকের আত্মহত্যার দৃশ্য বলে দাবি করে শেয়ার করা হচ্ছে। কিন্তু না সেই ইঞ্জিন চালক আত্মহত্যা করেছেন, না ওই দুর্ঘটনার সঙ্গে ছবিগুলির কোনও সম্পর্ক আছে। অক্টোবর ১৯ অমৃতসরের ধোবি ঘাটে অনুষ্ঠিত দসেরার উৎসব এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পরিণত হয়। রেল লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে বহু মানুষ যখন রাবনের মূর্তি আগুনে পুড়তে দেখায় মগ্ন ছিলেন, তখনই এক ধেয়ে আসা ট্রেন তাদের পিষে দিয়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় ৬১ জন মারা যান, জখম হন ৭২ জন। ঘটনা সম্পর্কে ট্রেনের ইঞ্জিন ড্রাইভারের বয়ান সমেত আত্মহত্যার ছবিগুলি শেয়ার করা হচ্ছে। এই বিষয়ে একাধিক সংবাদ মাধ্যম তাদের রিপোর্টে অমৃতসরের পুলিশ কমিশনার এস শ্রীবাস্তবের বক্তব্য প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন যে ট্রেন চালকের আত্মহত্যা সম্পর্কে যে গুজব ছড়িয়েছে তা সম্পূর্ণই মিথ্যা। টুইটর ছবিগুলি শেয়ার করেন। এই ব্যাপারে অন্যরা ভুল ধরিয়ে দিলেও উনি একটি ভিডিও পোস্ট করেন যাতে এক পুলিশ অফিসারকে একটি আত্মহত্যার স্থান পরিদর্শন করতে দেখা যায়।
The driver of the DMU train Arvind Kumar has NOT committed suicide said Police commissioner Amritsar S. Srivastava.
— Chitleen K Sethi (@ChitleenKSethi) October 22, 2018
The following is the statement he gave to the railway authorities, not a suicide note: pic.twitter.com/lbi3scfB2p
এবার অনেকজন ও ফেসবুক ব্যবহারকারি ওই ছবি শেয়ার করেন এবং সঙ্গে জুড়ে দেন ভুল তথ্য, যাতে বলা হয় ওই ট্রেন চালক আত্মহত্যা করেছেন।
Saw a crowd of ppl around track. Immediately applied emergency brakes while continuously blowing horn. Still some ppl came under it.Train was about to stop when people started pelting stones & so I started the train for passengers' safety:DMU train's driver.#AmritsarTrainAccident pic.twitter.com/2dihtcO9Ri
— ANI (@ANI) October 21, 2018
বুম নিশ্চিত হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তি ট্রেন চালক নন, বরং হরপাল সিং নামে অন্য এক ব্যক্তির। উনি পাঞ্জাবের তার্ন তারান জেলার ভিখিউইন্ডির বাসিন্দা। হরপাল সিং অমৃতসর জেলার বোহরু গ্রামে ২০ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন। বোহরু থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর রাশপাল সিং বুমকে বলেন মৃত হরপাল সিং অনেকদিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন। "উনি ইলেক্ট্রিশিয়ান ছিলেন, কিন্তু বিগত চার বছর কোনও কাজ ছিলনা তাঁর। মানসিক অসুস্থতার কারণে মাঝে মাঝে খিঁচুনি হত। তার চিকিৎসাও হচ্ছিল," রাশপাল সিং জানান। তিনি আরও জানান যে ওই ব্যক্তি গত দু'বছরে বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতি বারই তাঁর পরিবারের লোকজন ও বন্ধুরা তাঁকে বাঁচায়। "ঘটনার দিন হরপাল সিং নিজের বাইকে করে বাড়ি থেকে বোহরুর উদ্দেশে রওনা দেন। পথে একটা ব্যারেজের সামনে থামেন এবং আত্মহত্যা করেন।" রাশপাল সিং আরও বলেন যে ছবিগুলি, ভিডিও আর তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া বার্তা - ওই ব্যক্তিই অমৃতসরে দুর্ঘটানায় জড়িত ট্রেনটির চালক - ভাইরাল হওয়ার পর থেকে হরপাল সিং-এর পরিবারকে উত্যক্ত করা হচ্ছে। "মেসেজ আর ফোনে হুমকি পেতে শুরু করলে পরিবারটি আমাদের কাছে নিরাপত্তা চান। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে আমাদের অনুরোধ যে তাঁরা যেন গুজব না ছড়ান। ভিডিওর মৃত ব্যক্তিটি অমৃতসরের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ট্রেন চালক নন। উনি বোহরুর এক বাসিন্দা যিনি অনেক বছর কর্মহীন ছিলেন।" ছবির সঙ্গে যে চিঠি শেয়ার করা হয়েছে সেটি ইঞ্জিন চালক অরবিন্দ কুমারের লিখিত বয়ান। তাতে বলা হয়েছে যে, উনি হর্ন বাজিয়ে ছিলেন, এমার্জেন্সি ব্রেকও ব্যবহার করে ট্রেনটিকে প্রায় থামিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু শেষমেশ যাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবে থামেন নি, কারণ লোকে ট্রেন লক্ষ করে পাথর ছুঁড়ছিল। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা কুমারের বয়ানের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের মতে ট্রেনটি আদৌ গতি কমায় নি এবং পাথর ছোঁড়ার কোনও ঘটনাও ঘটে নি। প্রাক্তন বিধায়ক ও পাঞ্জাবের মন্ত্রী নভজ্যোৎ সিং সিধুর স্ত্রী ডঃ নভজ্যোৎ কৌর সিধু দুর্ঘটনার ঠিক আগে ওই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন। রাজ্যের বিরোধী দল শিরোমণি অকালি দল মন্ত্রীর পদত্যাগ ও উৎসবের উদ্যোক্তা এবং কৌরের বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করার দাবি করেছে।