বাংলাদেশের ভূত-তাড়ানোর ঘটনার ভিডিওকে কেরলের জবরদস্তি ধর্মান্তরণের ঘটনা হিসাবে শেয়ার
বাংলাদেশের এই ভিডিওটির সঙ্গে হিন্দুদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার কোনও সম্পর্কই নেই
বাংলাদেশে ভূত-তাড়ানোর ঘটনার একটি অস্বস্তিকর ভিডিও ভারতের ফেসবুকে এই ভুয়ো ব্যাখ্যা দিয়ে ভাইরাল হয়েছে যে, এটি কেরল রাজ্যে এক হিন্দু মহিলাকে জোর করে ইসলাম ধর্মে অন্তরিত করার ছবি । মর্মান্তিক এই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক মহিলা হাত-বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে বসে আছেন, সম্ভবত তাঁকে কোনও লৌকিক আচার পালন করানো হচ্ছে । একটি লোক, যাকে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে না, একটা ছুরি নিয়ে মহিলাকে ভয় দেখাচ্ছে ।
ভিডিওটিতে হিন্দিতে মন্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে—“হিন্দু মেয়েদের জবরদস্তি মুসলমান করে নেওয়া হচ্ছে, যেহেতু কেরলে মুসলিমদের তুলনায় হিন্দুদের সংখ্যা কম । হিন্দুরা জেগে ওঠো, তা নাহলে তোমাদের কন্যারা রক্ষা পাবে না ।”
(হিন্দি থেকে অনুবাদ: केरल में #हिन्दू लड़कियो को जबरदस्ती मुस्लिम बनाया जा रहा है क्योकि यहाँ हिन्दुओ की संख्या #मुस्लिमो से कम हो गयी है…। जागो हिंदू जागो नहीं तो पूरे #भारत में भी यही होगा और तुम भी अपनी बेटिया नही बचा पाओगे।)
ভিডিওটি এখানে দেখতে পারেন, আর পোস্টটির আর্কাইভ সংস্করণ এখানে ।
হুঁশিয়ারিঃ ভিডিওটি দেখতে আপনার অস্বস্তি হতে পারে
৩ মিনিটের এই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি লোক পিছন থেকে এক মহিলাকে আটকে ধরে আছে এবং অন্য একজন বাংলায় কথা বলছে । একটু পরেই যে লোকটি বাংলায় কথা বলছিল, সে মহিলাটিকে যেন ছোরা উঁচিয়ে শাসাচ্ছে । তবে কোনও সময়েই মহিলাটিকে সে আক্রমণ করছে না । যা এই ভিডিওর দাবিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে, তা হলো, এক সময় মহিলাটি বাংলায় বলছে—“আমি হিন্দু থেকে মুসলমান হলাম ।”
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটিকে কতকগুলি স্ক্রিনশটে ভেঙে নিয়ে খোঁজখবর শুরু করে । তাতে এ বছরের জানুয়ারি মাসে করা কিছু টুইটের খোঁজ মেলে, যেগুলিতে ভিডিওটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । কয়েকটি টুইটে দাবি করা হয়, ভূত-তাড়ানোর প্রক্রিয়াটি এক হিন্দু মহিলার উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে ।
বুম বাংলাদেশের তথ্য-যাচাইকারী সংস্থা বিডিফ্যাক্টচেক-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে । তারা জানায় যে ভিডিওটি বাংলাদেশেরই এবং পুরনো । তারা বলে, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভূত-তাড়ানো একটি বহুপ্রচলিত লোকাচার ।
সংস্থার প্রতিনিধি কাদরুদ্দিন শিশির বুমকে জানালেন—ভিডিওর এক জায়গায় মহিলাটি বলছেন, ‘বল রে আইতাম না’ । এটা বাংলাদেশের নোয়াখালির আঞ্চলিক ভাষা । তাঁর কথায়—“বাংলাদেশের গ্রামে একটা সাধারণ বিশ্বাস হল, ভূত তাড়ানোর সময়, যাকে ভূতে ধরে, সে ওই ভূতের ভাষাতেই কথা বলে । যে মোল্লা ভূতটিকে ধরেছেন বলে দাবি করছেন, তাঁর মতে সেটি হিন্দু ভূত, তাই তিনি তাকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন” ।
“মহিলাটি মুসলমানই, তা না হলে অত মসৃণভাবে সে আরবি সুরা আওড়াতে পারত না । মহিলাটিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, আমি এবার হিন্দু থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হলাম । কিন্তু আসলে কথাগুলি বলছে মহিলাকে পাকড়াও করা ভূত”, বললেন শিশির ।
আমরা এই ভিডিওটির একটি দীর্ঘতর সংস্করণ খুঁজে পেয়েছি, যেটি ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় । তার ক্যাপশনে লেখাঃ “এটাই ভূত তাড়ানোর শ্রেষ্ঠ ভিডিও l দেখুন কীভাবে একটি হিন্দু জিন (ভূত) ইসলামে ধর্মান্তরিত হচ্ছে” ।
অতীতে এই একই ভিডিও পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে হিন্দু মহিলাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার নমুনা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে ।