অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর নেওয়ার জন্য আক্রান্তদের আবেদনকে সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে প্রচার
উত্তরপ্রদেশের পুলিশ টুইট করে জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী উভয়েই মুসলিম সম্প্রদায়ের, তাই এর পিছনে কোনও সাম্প্রদায়িক ব্যঞ্জনা নেই।
শরীর থেকে গলগল করে রক্ত ঝরছে, এমন একটি পুরুষ ও স্ত্রীলোকের ছবির অস্বস্তিকর ভিডিও এবং আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর নেওয়ার জন্য তাদের কাতর আবেদন ভাইরাল করা হয়েছে এই ভুয়ো দাবি সহ যে, তারা নাকি এক হিন্দু দম্পতি যাদের মুসলিমরা আক্রমণ করেছে মহিলাটিকে ধর্ষণ করার চেষ্টার পর।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ অবশ্য বুমকে জানিয়েছে, অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তরা একই সম্প্রদায়ের, সুতরাং ঘটনাটির মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক রঙ খোঁজা অর্থহীন।
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা: “ইতোঞ্জা থানার অধীনে গতকাল শান্তির ধর্ম ইসলামের চার-পাঁচজন প্রহরী এই মহিলাকে ধর্ষণ করতে আসে। তার ভাই তাদের বাধা দিলে তারা ভাই-বোন উভয়কেই বেধড়ক মারধর করে। হিন্দুরা জাগো, তা না হলে তোমাদের বিনাশ নিশ্চিত। পুলিশ আহতদের সাহায্য করতে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে পারত, কিন্তু তারা তা করেনি।”
৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে আক্রান্ত পুরুষটির সঙ্গে পুলিশের হিন্দিতে কথোপকথনের একটি বয়ান রয়েছে। পুরুষটি বলছে, মহাশয়, এখানে কি ন্যায়বিচার পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই? উত্তরে একজন বলছে—কেন, এখানে তোমরা মেডিকেল চেক-আপ করিয়ে নাও। আক্রান্ত পুরুষটি তখন প্রথমে একটি রিপোর্ট নথিভুক্ত করতে বললে পুলিশ জবাবে বলছে—তোমরা আগে একটা লিখিত অভিযোগ জমা দাও! ভিডিওর শেষ দিকে আক্রান্ত ব্যক্তি ইসলাম ও ইউনুস নামে দুজনের কথা বলছে, যারা তাদের উপর হামলা চালিয়েছে।
ভিডিওটি বেশ অস্বস্তিকর এবং ভেবেচিন্তে দেখবেন:
বাংলাতেও ভাইরাল হয়েছে একই ভিডিও সহ পোস্টগুলি। সঙ্গে একইরকমের সাম্প্রদায়িক রঙ চড়ানো হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে, এখানে ও এখানে।
তথ্য যাচাই
ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের ইতোঞ্জা শহরের ঘটনা এটি। বুম লখনউ পুলিশের জনসংযোগ অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ঘটনাটি একই সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে বিবাদের জেরে ঘটেছে।
লখনউয়ের পুলিশ বিভাগের মুখপাত্র জানান—“আমরা আমাদের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলে পুরো ঘটনাটি বিশদে টুইট করেছি, সেখান থেকেই আপনারা যা জানার জেনে যাবেন। আক্রান্ত দুজনেই মুসলিম সম্প্রদায়ের এবং তাদের নাম শাহরুখ ও শবনম।”
অফিসারটি আরও জানান, এখনও বিবাদের নেপথ্য কারণ কী, আমরা জানতে পারিনি।
একজন টুইটার ব্যবহারকারী ভিডিওটি টুইট করে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তার জবাবও টুইটেই দিয়েছে।
টুইটে লেখা—ইতোঞ্জা থানার অধীন এলাকায় অল্পবয়সীরা তাদের বাড়ির সামনে খেলাধুলো করছিল, যাকে কেন্দ্র করে একই সম্প্রদায়ের (মুসলিম) দু’দল লোকের মধ্যে বচসা বাধে। ভিডিওটি সেই ঘটনারই, যার জেরে অভিযোগ জানাতে রাত ১টা ২৫ মিনিটে শাহরুখ ও শবনম থানায় আসে। সঙ্গে-সঙ্গেই অভিযুক্তদের ধরার জন্য একটি দল গঠন করা হয় এবং গোটা ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিও বিকেটি-কে।
টুইটে এটা স্পষ্ট যে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত, উভয়েই অভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের। টুইটে আরও জানানো হয়েছে যে, অভিযোগকারীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করার জন্য একজন কনস্টেবলের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
টুইটে লেখা হয়েছে—এসএসপি-এলকেও কলানিধি নৈথানকে সমগ্র বিষয়টি অবহিত করেছেন বিকেটি-র সার্কেল অফিসার এবং অভিযোগকারীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করার দায়ে কনস্টেবল রাহুলের(২০১৬-র ব্যাচ) বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সব জুনিয়র অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে-কোনও আহত ব্যক্তির সঙ্গে যথাযথ মানবিক আচরণ করতে এবং প্রতিটি থানার অফিসারদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অধস্তনদের এটা ভাল করে বুঝিয়ে দিতে।
পরে অন্য একটি টুইটে লখনউ পুলিশ ঘোষণা করেছে যে, অভিযুক্ত সকলকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
ধৃত চারজন হলো—উসমান, শাকিল, ইউনুস এবং ইসলাম।