মধ্যপ্রদেশের এক আদিবাসী মহিলাকে মারধোর করার ভিডিও মিথ্যে দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে
মধ্যপ্রদেশ পুলিশ বুমকে জানায় যে, মহিলার পরিবারের সদস্যরাই ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। ধর্ম বা রাজনীতির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
এক দলিতকে বিয়ে করার জন্য এক আদিবাসী মহিলাকে তাঁর পরিবারের লোকজন নির্মমভাবে মারধোর করছে। এই অস্বস্তিকর ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। কিন্তু মিথ্যে দাবি সহ ঘটনাটিতে ধর্ম আর রাজনীতির রঙ লাগানো হয়েছে।
বুম দেখে ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশে ঘটেছে এবং ধর্ম বা রাজনীতির সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। যে লোকগুলি ওই মহিলাকে মারছে, তারা সকলেই তাঁর পরিবারের সদস্য।
ভিডিওর সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "দেখুন, কী ভাবে ৮-১০ লোক এক মহিলাকে মারছে। একটা ৫০ টাকার গেরুয়া গামছা গলায় জড়ালেই যা ইচ্ছে তাই করার ছাড়পত্র পাওয়া যায়। এটাই কি মোদীর 'নিউ ইন্ডিয়া'। ভারতে এখন এই ধরনের ঘটনা রোজই ঘটছে। এই সব লোকগুলি মানুষ নয়, শয়তান।"
(হিন্দিতে লেখা হয়, "किस तरह 8-10 लड़के मिलकर एक लड़की को मार रहे हैं 50₹ का भगवा गमछा गले में डालकर आपको कुछ भी करने की आजादी है। क्या यही है मोदीजी का #NewIndia? भारत में ऐसी घटना हर रोज कहीं न कहीं हो रही है ऐसे लोग इंसान नहीं शैतान हैं।")
ফেসবুক পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একই দাবি সহ ভিডিওটি টুইটার ও ফেসবুকে প্রচুর শেয়ার করা হয়।
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির প্রধান ফ্রেমগুলি দিয়ে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ৩০ জুন প্রকাশিত 'দ্য হিন্দু'র একটি প্রতিবেদনের হদিস পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়, মধ্যপ্রদেশের ধর জেলা থেকে ৯০ কিমি দূরে এক জায়গায় ঘটনাটি ঘটে।
খবরে বলা হয়, মহিলা আদিবাসী। এক দলিত পুরুষের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করলে, তাঁর পরিবারের লোকেরা তাঁকে মারে।
ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বুম স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ধর জেলার বাগ পুলিশ স্টেশনে আমরা ফোন করি। কারণ, সেখানেই কেসটি নথিভুক্ত করা হয়েছিল। নগর ইন্সপেক্টর কমলেশ শৃঙ্গার বুমকে বলেন:
''গটবরি গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। আদিবাসী মেয়েটি বিবাহিত। কিন্তু বিবেক নামের এক দলিত পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। নিজের বিবাহিত জীবনে অসুখী হওয়ার ফলে, সে ওই দলিত তরুণের সঙ্গে ২৫ মে পালিয়ে যায়। মেয়েটির ভাই মহেশ নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনা রিপোর্ট করে বাগ পুলিশ স্টেশনে। এক মাস পরে মেয়েটির সন্ধান পাওয়া যায়। ২৫ জুন সে তার পরিবারের সঙ্গে আবার মিলিত হয়।''
কমলেশ শৃঙ্গার, নগর ইন্সপেক্টর, বাগ থানা
নগর ইন্সপেক্টর আরও বলেন যে, মেয়েটির পরিবার তাকে বিবেকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলে। কিন্তু ওই প্রস্তাবে রাজি হয়নি সে। ফলে, তার পরিবারের সদস্যরা মেয়েটির ওপর খুবই চটে। তাকে বিবেকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে মেয়েটিকে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় তারা। সেখানেই তাকে মারধোর করা হয়। ওই ঘটনার জন্য সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তার মধ্যে মহিলার ভাইও আছে।
শৃঙ্গার বলেন, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তৎপর হয়। এবং ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছিল, গ্রেপ্তার করা হয় সেই সাতজনকে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের মধ্যে মহিলার ভাইও আছে। অভিযুক্তদের ভারতীয় দন্ডবিধির ২৯৪, ৩২৩, ১৪৭, ১৪৮, ৩৫৪ডি ও ৩০৭ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। শৃঙ্গার বুমকে বলেন, মহিলাটি এখন ভাল আছেন।