আরএসএস মহিলার ইসলামের প্রতি ঘৃণাসূচক বক্তৃতা বাংলাদেশে ভাইরাল কেন?
৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে গেরুয়া শাড়ি পরা মধ্যবয়স্ক এক মহিলাকে ইসলামের প্রার্থনা পদ্ধতি নামাজ আদা করার সঙ্গে হিন্দু ধর্মের পূজা-পদ্ধতির তুলনা করতে দেখা যাচ্ছে
একটি আলোচনাচক্রের আরএসএস মহিলার একটি বক্তৃতার ভিডিও বাংলাদেশের ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিবরণী সহ । ভিডিওটিতে আরএসএস সমর্থক ওই মহিলা ইসলামের প্রার্থনা পদ্ধতি নিয়ে নিন্দামূলক বিশ্লেষণ করছিলেন, যেটি এডিট করে বাংলাদেশের ইসলাম অনুগামীদের কাছে পেশ করা হয়েছে । ফেবু তামাশা নামে একটি গ্রুপে--যার অনুগামীদের সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ এবং যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের বাসিন্দা—ভিডিওটি শেয়ার করেছে এমনভাবে, যাতে মনে হয়, মহিলাটি আদতে ইসলাম-অনুরাগী ।
এখানে পোস্টটি দেখুন। এবং আর্কাইভ এখানে।
৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে গেরুয়া শাড়ি পরা মধ্যবয়স্ক এক মহিলাকে ইসলামের প্রার্থনা পদ্ধতি নামাজ আদা করার সঙ্গে হিন্দু ধর্মের পূজা-পদ্ধতির তুলনা করতে দেখা যাচ্ছে-- “ওদের আজান আমাদের হিন্দু প্রার্থনার মতো নয় । ভাববেন না যে আমরা যেমন প্রার্থনার সময় মন্দিরে ঘন্টা বাজাই, ওরা সেভাবে প্রার্থনা করে । ওরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ে । ওদের কাছে আল্লা এবং মহম্মদ ছাড়া আর কেউ নেই । নামাজ একটা আলাদা ব্যাপার । ওরা সামনে ঝুঁকে নিচু হয়ে প্রার্থনা করে ।"
ভিডিওটির ৩ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে , মহিলাটির গলার স্বর অনেকটা পাল্টে যাচ্ছে এবং ইসলামের প্রতি আগের বিরূপতাও তত থাকছে না । তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে—“আমাদের গরু নিয়ে ওদের কোনও সমস্যা নেই । আমাদের মা-বোনেদের ব্যাপারেও ওদের কোনও সমস্যা নেই ।” এরপর তিনি রমজান মাসে মুসলিমরা কেন উপবাস করে, সেই প্রসঙ্গ আলোচনা করছেন । “রোজা ঠিক নবরাত্রির মতো নয় । এটা ওরা পালন করে নিজেদের শরীরকে শক্তিশালী করতে ।” বক্তৃতার ফাঁকে-ফাঁকে তাঁকে মন্ত্রের মতো উচ্চারণ করতে শোনা যাচ্ছে—“লা ইল্লাহা ইল্লাল্লাহা…” ।
“তাঁদের কাছে কেবল একজনই আল্লা আছেন । গত ১৪০০ বছরে তাঁরা আর কাউকে সে আসনে বসাননি । তাঁদের একমাত্র লক্ষ হল, এই পৃথিবীতে যাতে আল্লার বিধান অনুসৃত হয় । আমরা ধর্মের কলঙ্ক । আমরা জানিই না আল্লা কী? আমরা শুধু আল্লা ও ঈশ্বরকে একই আসনে বসিয়েছি ।”
সাজানো ভিডিওটিতে আল্লার মহিমাকীর্তনকারী আজানের উচ্চারণ এমন-এমন জায়গায় গুঁজে দেওয়া হয়েছে, যাতে মনে হয়, মহিলাটি আল্লার প্রশংসাই করছে । ক্যাপশনেও লেখা হয়েছে—“আমাদের হিন্দু ভগিনীর কথা শুনলে আপনারা সবাই আশ্চর্য হবেন ।”
তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, মূল ভিডিওটি ২০১৮ সালের এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল সেই সময়ে। ইউ-টিউবে আপলোড করা মূল ভিডিওটি ৯ মিনিট ৫ সেকেন্ডের, যাতে মহিলাটি বারংবার ইসলামকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে এবং তার অনুগামীদের নিন্দা করেছে । ভিডিওটি অনেক বার আলোচিত হয়েছে এবং ইসলাম-বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য ধিক্কৃত হয়েছে । অনেক ধর্মীয় নেতা ও তাঁদের অনুগামীরা সোশাল মিডিয়ায় এটি নিয়ে আলোচনা করেছেন ।
এখানে ইউটিউবে ভাইরাল ভিডিওটি দেখুন
বুম এই মহিলাটির পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি । মূল প্রতিবেদনটি এখানে পড়ুন।