শিশু-নিগ্রহের ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি সিরিয়ার, গুজরাটের নয়
রাজনীতিবিদ জিগ্নেশ মেবানি এই ভিডিওটাই ট্যুইট করে ক্যাপশন দিয়েছেন—এটি ভালসাদে এক শিক্ষকের দ্বারা এক শিশুকে নিগ্রহ করার ছবি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে এটি ট্যাগ করে এই দলিত নেতা এর জবাব চেয়েছেন।
সিরিয়ায় এক কিশোরকে নির্মমভাবে চাবুক মারার একটি ভিডিওকে এই বলে শেয়ার করা হচ্ছে যে, এটি গুজরাটের ভালসাদে এক শিক্ষকের হাতে ওই কিশোরটির নির্যাতিত হওয়ার ছবি।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, কিশোরটিকে জামাকাপড় খুলিয়ে কেবল অন্তর্বাস পরা অবস্থায় নৃশংসভাবে চাবকানো হচ্ছে। যে মারছে, ছবিতে তাকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু প্রহৃত কিশোরটির পিঠে মার খাওয়ার দাগড়া-দাগড়া লাল ছোপ ফুটে উঠেছে। তার কপাল থেকেও রক্ত পড়ার আভাস মিলছে।
অডিও অংশটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়া ক্লিপটির ক্যাপশন—"আপনাদের হোয়াট্স্যাপের সব সদস্য ও সবকটি গোষ্ঠীর প্রত্যেককে এই ক্লিপটি পাঠান। এটি ভালসাদের আরএম ভিএম স্কুলের এক শিক্ষকের অপকীর্তি। এমন ব্যাপকভাবে ক্লিপটি শেয়ার করুন, যাতে ওই শিক্ষক সাসপেন্ড হন এবং স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।"
পাঠক সতর্কভাবে দেখুন
বুম এই ভিডিওটি আপলোড না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ এতে অপ্রাপ্তবয়স্কের প্রতি হিংসা ও অত্যাচার দেখানো হয়েছে। ইচ্ছা করলে আপনারা সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পোস্টটি এখানে দেখতে পারেন।
দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবানিও একই ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটি ট্যুইট করেছেন। তিনি নিজে ট্যুইটে কোনও দাবি করেননি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সরকারি ট্যুইটার হ্যান্ডেলে এটি জুড়ে দিয়ে জবাব চেয়েছেন।
এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ক্লিপটি রিট্যুইট হয়েছে ৮০০ বারের বেশি। ট্যুইটটি এখানে দেখতে পারেন এবং তার আর্কাইভ বয়ানটি এখানে।
অন্য একটি ট্যুইটে মেবানি ক্লিপটির সত্যতা বিষয়েও জানতে চেয়েছিলেন যা এখন ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। ট্যুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটির অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, এটি সিরিয়ার একটি ঘটনার ভিডিও।
২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে আমরা আরও জানতে পারি যে, ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (এফএসএ) একটি গোষ্ঠী দারা-য় এই কিশোরটিকে অপহরণ করেছিল তার বাবা-মার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য। মূল ভিডিওটি ওই সেনা-গোষ্ঠীই তুলে কিশোরটির বাবা-মাকে পাঠিয়ে দেয়। তাতে কিশোরটিকে কাঁদতে শোনা যাচ্ছে এবং সেটা আরবি ভাষায়।
প্রতিবেদনটির শিরোনাম: ৯ বছরের কিশোরকে অপহরণ করে এফএসএ যোদ্ধাদের ১০ লক্ষ ডলার মুক্তিপণ চাওয়ার ভিডিও।
এ বিষয়ে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
গত বছর ২৭ ফেব্র্রুয়ারি আল-মাসদার নিউজ এই একই ভিডিও ট্যুইট করেছিল:
বুম আরবি ভাষায় আরও একটি প্রতিবেদনের খোঁজ পেয়েছে, যাতে পণবন্দি কিশোরটিকে উদ্ধার করার এবং কিশোরটি সম্পর্কে আরও বিশদ তথ্যের হদিশ রয়েছে। প্রতিবেদনটি এখানে পড়তে পারেন।
৯ বছরের ওই কিশোর আবদেল আজিজ-আল খাতিব শেষ পর্যন্ত এলাকায় সক্রিয় আরও কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সম্মিলিত উদ্ধার অভিযানে মুক্তি পায়। এফএসএ-র কব্জা থেকে মুক্তির পর ওই কিশোরটির একটি ভিডিও গোষ্ঠীগুলি ফেসবুক পেজে প্রকাশ করে।
ফ্রি সিরিয়ান আর্মি বা এফএসএ-র সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী এটি সিরিয়ার বাশার-আল-আসাদের জমানার অবসানের জন্য সক্রিয় একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। ২০১১ সালে সিরীয় ফৌজের দলত্যাগী সৈন্যরা এটি গঠন করে। ২০১১ সাল থেকেই সিরিয়া এক বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধের কবলে পতিত হয়েছে।
ভালসাদের আরএম ভিএম স্কুলের উপর দোষারোপ
মজার ব্যাপার হল, ভারতীয় সোশাল মিডিয়ায় শিশু-নিগ্রহের আরও অনেকগুলি ভিডিও চালু রয়েছে, যেগুলির সবকটিতেই ভালসাদের আরএম ভিএম স্কুলের উল্লেখ রয়েছে: