দক্ষিণ ভারতে এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণকে কি জনতা পিটিয়েছিল? একটি তথ্য-যাচাই
মূল ভিডিওটি পরীক্ষা করে বুম দেখেছে, লোকটি জনতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নেচে উঠেছিলেন।
তামিল সমাজ-সংস্কারক পেরিয়ারকেসম্মান জানানোর এক অনুষ্ঠানে এক বৃদ্ধের স্বতঃপ্রণোদিত নাচের ভিডিও অনলাইনে ভুলব্যাখ্যা সহ ছড়ানো হয়েছে যে, জনতা ওই বৃদ্ধ ব্রাহ্মণকে হেনস্থা করছে।
১০সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, ভিড়ের একেবারে মাঝখানে এক বৃদ্ধহাতজোড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তারপর তিনি সামনে ঝুঁকে অভিবাদনের ভঙ্গি করছেন, আরপুরো সময়টাই জনতা আনন্দে তাঁকে উত্সাহ দিচ্ছে এবং তাঁকে ঘিরে নাচানাচি করছে।
বেশ কয়েকজন টুইটার ও ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করেছে। কিন্তু তার ক্যাপশনে সম্পূর্ণ ভুল তথ্য দিয়ে লিখেছে, জনতা নাকি ওই বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের পৈতে ছিঁড়ে দেয়, জামাকাপড় খুলে নেয় এবং তাঁকে নাচতে বাধ্য করে।
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এই লেখার আগে পর্যন্ত টুইটটি ৩০০০ জন পুনঃটুইট করেছে এবং এটি ২৬০০ 'লাইক' পেয়েছে।
ফেসবুকেও ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে:
তথ্য যাচাই
এর আগেই ইউটার্ন নামে একটি তামিল তথ্য-যাচাই ওয়েবসাইট ভিডিওটি যাচাই করেছিল।
বুম দেখেছে, মূল ভিডিওটি 'কারুপ্পর কোট্টম' নামে একটি চ্যানেল ইউ-টিউবে আপলোড করে ২০১৯-এর ২৪ জুন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি যেখানে মাত্র ১০ সেকেন্ডের, মূল ভিডিওটি সেখানে ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের।
এই দীর্ঘতর মূল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নৃত্যপর বৃদ্ধকে ঘিরে থাকা লোকেদের হাতে কালো পতাকা, যাতে পেরিয়ারের মুথচ্ছবি আঁকা।
বুম ইউ-টিউবের কারুপ্পর কোট্টম চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ভিডিওটি যে ঘটনার, সেটি কাঞ্চীপুরমে ২০১৯ সালের ১ মে-র ঘটনা।
"ওই দিন, মে দিবসে শংকর মঠ মন্দিরের কাছে পেরিয়ারের মূর্তির সামনে পিপলস ফোরাম একটি সমাবেশের আয়োজন করেছিল। প্রথম যখন এই বৃদ্ধ লোকটি সেখানে এসে পেরিয়ারের মূর্তির দিকে তাকিয়ে থাকেন, তখন অনেকেই একটু অবাক হয়েছিলেন। তারপর যখন তিনি নাচতে শুরু করেন, তখন সমবেত জনতা তাঁকে ঢাকঢোল বাজিয়ে উৎসাহিত ও অভিনন্দিত করতে থাকে।"
মূল ভিডিওটি দেখলে স্পষ্ট হয় যে, বৃদ্ধটি স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই নাচতে শুরু করেন এবং কেউ তাঁকে জোর করে নাচতে বাধ্য করেনি।
ভিডিওটির ১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের মাথায় দেখা যায়, বৃদ্ধটি বাজনদারদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন, তার পরেই তিনি ওই জায়গা ছেড়ে চলে যান।