আর্যদের উদ্বাস্তু বলার জন্য জওহরলাল নেহরুকে কি চড় মারা হয়েছিল? একটি তথ্যযাচাই
বুম দেখে যে ১৯৬২ সালে পাটনায় কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চলাকালে এক পদপৃষ্ঠের ঘটনার সময় তোলা হয় ছবিটি।
জওহরলাল নেহরুর একটা ছবি শেয়ার করা হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, "আর্যরা ভারতে উদ্বাস্তু ছিল" বলায় স্বামী বিদ্যানন্দ বিদেহ জওহরলাল নেহরুকে চড় মারেছিলেন।
বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে (৭৭০০৯০৬১১১) ওই দাবির সত্যতা জানতে চেয়ে একটি মেসেজ আসে।
ছবিটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, “৬২’র বিপর্যয়ের পর বিদ্যানন্দ বিদেহর হাতে চড় খান নেহরু। কারণ, নেহরু তাঁর ভাষণে ভারতে আর্যদের উদ্বাস্তু বলে বর্ণনা করেন। সেই কথা শুনে, ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বামী বিদ্যানন্দ মঞ্চে উঠে নেহরুকে চড় মারেন।”
পোস্টটিতে আরও বলা হয় যে, স্বামী নাকি বলেছিলেন, “আর্যরা উদ্বাস্তু ছিলেন না। তাঁরা আমার পূর্বপুরুষ। তাঁরাই ভারতের আদি বাসিন্দা। কিন্তু আপনার (নেহরুর) পূর্বপুরুষরা ছিলেন আরব। তাই আপনার ধমনীতে বইছে আরব রক্ত। আর সেই কারণেই আপনি এই মহান দেশের আদি বাসিন্দা নন...”
ফেসবুক পোস্ট
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকে ভাইরাল
একই ক্যাপশন সমেত ছবিটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়।
তথ্য যাচাই
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দেখা যায় যে, সেটি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের আর্কাইভে আছে। ছবিটির নাম, ‘নেহরু প্রায় পড়ে যাচ্ছিলেন’। ছবিটির তারিখ ছিল ১৯৬২ সালের ১ জানুয়ারি।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, “এক উশৃঙ্খল জনতার মধ্যে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে নেহরুকে তাঁর দেহরক্ষীরা বাঁচালেন। জানুয়ারি ১৯৬২’তে ভারতের পাটনায় কংগ্রেস পার্টির এক সভা চলাকালে ঘটনাটি ঘটে। সে বছরেই পরের দিকে চিন ভারত আক্রমণ করলে নেহরু নতুন এক সমস্যার মধ্যে পড়ে যান।”
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’এর আর্কাইভেও আমরা এই সংকান্ত একটি রিপোর্ট পাই। সেটির তারিখ ৬ জানুয়ারি ১৯৬২। রিপোর্টটির শিরোনামে বলা হয়, “বিশৃঙ্খার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের মুলতুবি। জনতা মঞ্চের দিকে ছুটে যায়, অনেকে জ্ঞান হারায়। শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেন নেহরু। কিন্তু কাজ হয় না।”
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, জানুয়ারি ১৯৬২’তে, বিহারের পাটনায় কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চলা কালে, জনতার মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “একটা পর্যায়ে, উত্তেজিত নেহরু নিজের নিরাপত্তার কথা ভুলে গিয়ে জনতার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেলে তাঁর রক্ষী ও কংগ্রেস নেতারা তাঁকে ধরে ফেলেন। আর সেই কারণে রাগত নেহরু তাঁদের লক্ষ করে ঘুঁষি চালাতে থাকেন।”
ওই ঘটনার ওপর আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৮ জানুয়ারি ১৯৬২ তারিখের ‘দ্য ফ্লোরেন্স টাইমস’ কাগজে। সেই লেখার সঙ্গেও ওই একই ছবি ব্যবহার করা হয়। “শুক্রবার ভারতের পাটনায় এক বিশৃঙ্খল জনতাকে শান্ত করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তাদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেলে, তাঁর রক্ষীরা তাঁকে বাধা দেয়। ভারতীয় কৃষকদের একটি উশৃঙ্খল বিক্ষোভ নেহরুর কংগ্রেস পার্টির সভা পন্ড করে দেয় এবং ২৪ জনকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়।”
আমরা প্রধান শব্দ ‘আর্য’ আর ‘নেহরু’ দিয়ে সার্চ করি। কিন্তু নেহরুর ওই ধরনের কোনও উক্তির উল্লেখ পাওয়া যায় না।
তাছাড়া বিদ্যানন্দ বিদেহ সম্পর্কে সার্চ করলে ‘বেদ সংস্থা’ নামের এক ওয়েবসাইট সামনে আসে। তাতে দাবি করা হয় যে, বিদেহ ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। ওয়েবসাইটটির কথা অনুযায়ী, বিদেহ একজন বেদ এবং যোগ প্রচারক।
মে ২০১৭ থেকে ভাইরাল
ওই একই ছবি ফেসবুকে ২০১৭ সাল থেকেই ভাইরাল। আগে অবশ্য ছবিটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে অন্য কথা বলা হয়েছিল। তখন মিথ্যে দাবি করা হয়েছিল যে, ‘চিনের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ফলে’ এক উত্তেজিত জনতা নেহরুকে মারধর করে।