মুম্বইয়ের সাংবাদিক নীতিকা রাও কি সরকারের সমালোচনা করার জন্য প্রহৃত হয়েছেন?
বুম নীতিকা রাওয়ের সঙ্গে কথা বলেছে l তিনি জানিয়েছেন, সরকারের সমালোচনা করার জন্য নয়, তিনি প্রহৃত হয়েছেন এক প্রোমোটারের পাঠানো গুণ্ডাদের হাতে
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/06/Nitika-Rao-Featured-image.jpg)
গুরুতর আহত এক মহিলার একগুচ্ছ ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যাতে দাবি করা হয়েছে, তিনি মুম্বইয়ের এক মহিলা সাংবাদিক নীতিকা রাও, যিনি ভারতীয় বায়ুসেনার হারিয়ে যাওয়া বিমানটির বিষয়ে সরকারকে প্রশ্ন করার পরিণামে নিগৃহীত হয়েছেন ।
বুম মহিলাটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাঁকে মারধর করেছে এক প্রোমোটারের পাঠানো গুণ্ডারা, যেহেতু তিনি মহারাষ্ট্রের থানে জেলার কল্যাণ এলাকার কৃষকদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন করছিলেন ।
কোনও সংবাদ প্রতিবেদনর তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন, এ কথা তিনি অস্বীকার করেছেন । তাঁর মতে তাঁর মার খাওয়ার কারণ তাঁর সাংবাদিকতা নয়, একজন সমাজকর্মী হিসাবে তাঁর ভূমিকার জন্যই এই নিপীড়ন ।
জুন মাসের ৯ তারিখ থেকে আহত নীতিকা রাওয়ের ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে থাকে, যাতে দাবি করা হয়, সরকারকে প্রশ্ন করার অপরাধেই তাঁর এই নিগ্রহ ।
সতর্কীকরণঃ স্পর্শকাতর ছবি।
এ সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্টটি এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । হয় সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে, নয়তো তার প্রাইভেসি সেটিং পাল্টে ফেলা হয়েছে ।
তবে অনেক পোস্টেই ভারতীয় জনতা পার্টি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করা হয়েছে, রাওকে যে ‘দক্ষিণপন্থী উগ্রবাদীরা’ আক্রমণ করেছে, তাদের কড়া শাস্তি দেওয়া হোক ।
পাঞ্জাব ও চণ্ডীগড় সাংবাদিক ইউনিয়নও একটি ফেসবুক পোস্ট মারফত ঘটনাটিকে নিন্দা করেছে ।
কে এই নীতিকা রাও
বুম ফেসবুক, টুইটার ও লিংকড-ইন তন্ন-তন্ন করে খুঁজে দেখেছে, নীতিকা রাও নামে কোনও সাংবাদিক মুম্বই কিংবা অন্য কোনও শহরে নেই । অবশেষে হিন্দিতে ফেসবুক সন্ধান করে আমরা ২০১৭ সালের একটি পোস্টের খোঁজ পাই, “বিহার নিউজ এক্সপ্রেস, সুরেশ গুপ্ত” নামে । সেই পোস্টের দাবি, অখিল ভারতীয় পত্রকার সুরক্ষা সমিতি তার মহারাষ্ট্র শাখার প্রধান হওয়ার জন্য নীতিকা রাও নামে এক সাংবাদিককে সম্বর্ধনা দিচ্ছে ।
পোস্টের ছবির মহিলার সঙ্গে ভাইরাল হওয়া নিগৃহীতার মুখের সাদৃশ্য লক্ষ্য করে বুম সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ খালেদ কাইস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে, যিনি স্বীকার করেন, কয়েকদন আগে তাঁদের মহারাষ্ট্র শাখার প্রধানা নীতিকা রাও প্রহৃত হয়েছেন । এর পরই বুম কল্যাণ-এর হাসপাতালে চিকিত্সারত রাওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে । তিনি জানান—“চার দিন আগে এক প্রোমোটারের গুণ্ডারা আমাকে মারধর করে । ভাইরাল হওয়া পোস্টের ছবিগুলি আমারই, তবে হারানো বিমান নিয়ে সরকারকে প্রশ্ন করার জন্য আমি আক্রান্ত হইনি ।”
রাও জানান, বর্তমানে তিনি কল্যাণ এলাকায় কর্মরত একজন সমাজকর্মী এবং ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক ।
“কল্যাণের কিছু কৃষককে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া একটি গৃহনির্মাণ সংস্থার কথার খেলাপের বিরুদ্ধে কৃষকদের অধিকার রক্ষায় আমি লড়াই চালাচ্ছিলাম । চাষিদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করে নেওয়ার পর প্রোমোটার আর তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে চাইছিল না । আমি কৃষকদের অধিকার রক্ষায় লড়ছিলাম এবং কয়েকদিন আগে ওই প্রোমোটারের মুখোমুখিও হই । চার দিন আগে ওই প্রোমোটার তার বাহুবলীদের পাঠিয়ে আমাকে নিগ্রহ করে, আমি মুখে ও হাতে গুরুতর চোট পেয়েছি ।”
রাও অবশ্য ওই প্রোমোটর সম্পর্কে বিশদে কোনও তথ্য দিতে চাননি, তার বিরুদ্ধে পুলিশে কোনও অভিযোগও জানাননি । ৮ জুন আবদুল মহফুজ খানের শেয়ার করা একটি পোস্টেও বুম ঘটনাটির উল্লেখ পেয়েছে । ঘটনার পর যাঁরা রাওয়ের ছবি পোস্ট করেন, সমিতির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক মহফুজ খান তাঁদের অন্যতম ।
পোস্টটির উপর মন্তব্যে মহফুজ খান হিন্দিতে ঘটনাটি বিশদে বিবৃত করেন এবং জানান, “এটা প্রোমোটারদের কাছ থেকে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার সংক্রান্ত একটি আন্দোলন, যা করতে গিয়ে নীতিকা ম্যাডাম এমনকী প্রোমোটারের কাছ থেকে ঘুষেরও প্রস্তাব পান । কিন্তু তিনি তাঁর লক্ষ্যে অবিচল থাকেন আর তাই পোমোটারের গুণ্ডারা তাঁর এই হাল করে ছেড়েছে ।”
![](https://bangla.boomlive.in/wp-content/uploads/sites/3/2019/06/Abdul-Mahfooz-Khan-comment2-700x467.jpg)
গত ৩ জুন ভারতীয় বায়ুসেনার একটি এএন-৩২ বিমান ১৩ জন আরোহী সহ নিখোঁজ হয়ে যায় । ৮ দিন পর অরুণাচল প্রদেশে সেটির খোঁজ মেলে । বিমানটির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনও জানা যায়নি ।