জলন্ধরে কি পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছিল? একটি তথ্যযাচাই
স্থানীয় পুলিশ বুমকে জানিয়েছে, ওগুলি ছিল ধর্মীয় নিশান, পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নয়।

ভারতীয় মুসলিমদের ব্যবহৃত একটি ধর্মীয় পতাকার ভাইরাল ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে—পাঞ্জাবের জলন্ধরে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা গেছে।
বুম পাঞ্জাব পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, স্থানীয় পুলিশ ওই ভিডিওটি পাওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখেছে, পতাকাটি আদৌ পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নয়, ভারতীয় মুসলমানদের ব্যবহার করা একটি ধর্মীয় ধ্বজা।
বুম স্থানীয় সংবাদপত্র পাঞ্জাব কেশরী-র একটি রিপোর্টও দেখেছে, যাতে ওই ভিডিওতে দেখানো পতাকার অনুরূপ দুটি পতাকার স্থিরচিত্র ছাপা হয়, এবং সেগুলিও পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার ছবি নয়।
‘ধর্মান্তর নয়’—এই টুইটার হ্যান্ডেলের ছাড়া ভুয়ো দাবির ভিডিওটির ক্যাপশন, “পাকিস্তানি পতাকা-—পাঞ্জাবের জলন্ধরে, যার বিজয় কলোনি নামের এলাকাটিতে খ্রিস্টান মিশনারিরা গিজগিজ করছে।”
এই ‘ধর্মান্তর নয়’ নামের টুইটার হ্যান্ডেলটি অতীতেও ভুয়ো খবর শেয়ার করেছে, বুম যার পর্দাফাঁস করেছে।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর কি হিন্দু পরব উদযাপন নিষেধ করেছে? একটি তথ্যযাচাই
একটি পাকিস্তানি সংবাদ-চ্যানেল জি নিউজ নেটওয়ার্কও টুইটারের ভিডিওটির দাবিকে সত্য বলেই বিশ্বাস করেছে এবং লিখেছে, “কর্তারপুর করিডর উদ্বোধনের জন্য পাকিস্তানের প্রতি কৃতজ্ঞতাবশত পাঞ্জাবের শিখরা পাক জাতীয় পতাকা উড়িয়েছেন।”
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, কয়েকটি পতাকা ধর্মীয় (সবুজের মধ্যে সাদায় আঁকা চাঁদের কলা, কিন্তু সেগুলিতে পাক জাতীয় পতাকার মতো সাদা বর্ডার দেওয়া নেই)। আর অন্যান্য পতাকাগুলো ইদ-এ-মিলাদ উপলক্ষে ওড়ানো ধর্মীয় পতাকা>
বিজয় কলোনিতে উড়তে থাকা যে পতাকাগুলোর ছবি পাঞ্জাব কেশরী সংবাদপত্র ছেপেছে, সেগুলিও ভারতীয় মুসলমানদের ব্যবহার করা ধর্মীয় পতাকাই।

আমরা পাঞ্জাব কেশরীতে ছাপা পতাকাগুলি খতিয়ে দেখেছি, প্রতিটি পতাকাই মুসলিমদের ধর্মীয় ধ্বজ, কেবল একটি মিলাদ-উন-নবী উপলক্ষে তোলা, যা পয়গম্বরের জন্মদিন ৯ নভেম্বরকে পালন করেছে।

বুম সহকারী পুলিশ কমিশনার ধরম পালের সঙ্গেও কথা বলেছে, যিনি জানিয়েছেন, এগুলির কোনওটিই পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নয়।
তিনি জানান, একটি সম্প্রদায়ের তরফে তাদের কাছে ভিডিওটি পেশ করা হয়, যারা এগুলিকে ভুল করে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ভেবেছিল। “কিছু লোক আমাদের কাছে এসে অভিযোগ জানায় যে, বিজয় কলোনিতে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়েছে। আমাদের দল সেখানে গিয়ে যে সব বাড়িতে ওই পতাকা উড়ছিল, সেগুলো নামিয়ে এনে পরীক্ষা করে। তাতে আমরা দেখি যে, পতাকাগুলি পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নয়, ইসলামি ধর্মীয় পতাকা, যেগুলি পয়গম্বরের জন্মদিন উপলক্ষে এই সপ্তাহে ওড়ানো হয়েছিল।
“এরপর আমরা পতাকাগুলি ফিরিয়ে দিই এবং বাসিন্দারা আবার সেগুলো বাড়ির ছাদে উড়িয়ে দেন। কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের কেউ-কেউ এই ঘটনায় অপমানিত বোধ করেন এবং কিছু প্রতিবাদও জানানো হয়। তবে আমরা শান্তিপূর্ণভবে তাদের অসন্তোষ নিরসন করতে পেরেছি।”

একই ভুয়ো খবর স্থানীয় কয়েকটি হিন্দি দৈনিকেও ছাপা হয়, যাতে শিব সেনার পাঞ্জাবের নেতা ইশান্ত শর্মাকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়— “কিছু লোক তাদের বাড়িতে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়েছিল, কিন্তু তা নিয়ে অভিযোগ জানাবার পর তারা কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
বুম এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ কমিশনার ধর্মপালকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, “কেউই এ নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি, কেবল মৌখিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। তা ছাড়া এটা তো ধর্মীয় পতাকা, তার বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ নথিভুক্ত করবোই বা কেন?”