ছবিতে উট খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে কি অ্যালঝাইমার রোগের প্রবণতা বোঝা যায়?
ফোটোশপ করা একটি ছবি থেকে গুজব ছড়াচ্ছে যে—এভাবে নাকি অ্যালঝাইমার রোগের প্রবণতা আগাম বোঝা যায়।
অ্যালঝাইমারের মতো একটি বোধ বা ধারণাগত বিশৃঙ্খলায় কেউ ভুগছে কিনা, সেটা কি অনেক জন্তু-জানোয়ার দিয়ে সাজানো একটি বিভ্রান্তিকর ছবির মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটা ছোট্ট উটের চেহারা দেখতে পাওয়া বা না-পাওয়ার উপর নির্ভর করে? সোশাল মিডিয়া বিশেষত হোয়াটসঅ্যাপ যারা নিয়মিত ব্যবহার করেন, তাদের অনেকেরই তেমন ধারণা।
হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়া একটি বার্তায় দাবি করা হচ্ছে যে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ভ্রমাত্মক একটি জন্তু-জানোয়ারের ছবিতে লুকিয়ে থাকা একটি ছোট্ট উটকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন, তাহলে সেই ব্যক্তিটির ভবিষ্যতে অ্যালঝাইমার রোগে আক্রান্ত হওয়াপ আশঙ্কা প্রবল। বুম-এর হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও (৭৭০০৯০৬১১১) এই মর্মে একটি বার্তায় বিষয়টির সত্যতা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এই ছবিটি একটি দৃষ্টিবিভ্রমের সম্পাদিত সংস্করণ, যাতে বিভিন্ন প্রাণিকে এমন কৌশলে সাজানো হয়েছে, যা একটি মানুষের মুখের আদল তৈরি করে।
মূল ছবিটি ২০০৯ সাল থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মূল ছবির মধ্যেই একটি ছোট্ট উটকে গুঁজে দেওয়া হয়েছে এই বার্তাটি সৃষ্টি করার অভিপ্রায়ে। বুম এই মূল ছবিটি এবং তার সম্পাদিত সংস্করণ, দুটোই খুঁজে পেয়েছে। সম্পাদিত সংস্করণটি ২০১২ সাল থেকে ঘুরছে।
ভাইরাল বার্তাটির দাবি, কোনও লোক যদি ছবিটির ভিতর উটটিকে খুঁজে না পায়, তাহলে সে ভবিষ্যতে অ্যালঝাইমারের শিকার হতে পারে। দাবিটি ভুয়ো।
বুম এ বিষয়ে একজন নিউরোলজিস্ট এবং একজন নিউরো-সাইকোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলেছে।
স্যর এইচ এন রিলায়েন্স হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত এবং মস্তিষ্ক স্বাস্থ্য ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমতি শ্রদ্ধা শাহের সঙ্গে কথা বললে তিনি এই বার্তাটিকে সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন।
“এই ধরনের বার্তা ছড়ানোর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, মানুষের মনে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করা। চিত্তভ্রংশ বা ডিমেন্সিয়া, যার অন্যতম লক্ষণ হলো আলঝাইমার, সেটাকে আরও সুবিবেচনার সঙ্গে বোঝবার চেষ্টা করা উচিত এ ব্যাপারে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার উপর নির্ভর না করে আমাদের আরও শিক্ষিত হতে হবে।”
অ্যালঝাইমার অসুখটি কী?
অ্যালঝাইমার হলো এমন একটি অসুখ, যাতে মস্তিষ্কের কোষগুলি ক্রমশ নষ্ট হয়ে যায়।
বাঙ্গালোরের ফর্টিস হাসপাতালের নিউরোলজি বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ পি আর কৃষ্ণনের সঙ্গে বুম কথা বলেছে।
তার মতে, “অ্যালঝাইমার স্মৃতিভ্রংশের সবচেয়ে প্রচলিত কারণ। শতকরা ৬৫ জন স্মৃতিভ্রংশের রোগী আলঝাইমারে আক্রান্ত।”
ডঃ শাহের মতে, অ্যালঝাইমার নিয়ে মানুষের ভুল বোঝার কোনও শেষ নেই।
“স্মৃতিলোপ অ্যালঝাইমারের প্রধান লক্ষণ হলেও এর অন্যান্য কারণ বা উপসর্গও রয়েছে। এ ব্যাপারে নিঃসংশয় হতে গেলে বোধ ও ধারণাগত অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাও যাচাই করে দেখা দরকার।”
ডঃ শাহের মতে এই সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল থেকেই কারও অ্যালঝাইমার হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
ডঃ কৃষ্ণনও মনে করেন, “স্মৃতিভ্রংশের পাশাপাশি এ ধরনের রোগীদের মধ্যে মনসিক বিশৃঙ্খলা, আত্মপ্রবঞ্চনা, মনঃসংযোগের অভাব, অস্থিরতা, আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা এবং অন্যান্য আচরণগত পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়।”
“অ্যালঝাইমার প্রাথমিকভাবে বংশগত, জীবনযাপনের পদ্ধতিগত এবং পরিবেশগত বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ের পরিণাম। তাই যারা এ ধরনের রোগীর পরিচর্যা বা শুশ্রূষা করবে, তাদের অনেক যত্নশীল হওয়া জরুরি”, জানালেন ডঃ কৃষ্ণন।
বর্তমানে ভারতে প্রায় ৪০ লক্ষ লোক স্মৃতিভ্রংশজনিত অসুখে ভুগছেন এবং সারা বিশ্বে এই সংখ্যাটা ৪ কোটি ৪০ লক্ষ।