২০১৬ সালের ভারত-মার্কিন সামরিক মহড়ার ছবিকে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার অভিযানের ছবি বলে চালানো হচ্ছে
এই ভিডিওটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যে ভারত ও আমেরিকার বাহিনীর যৌথ মহড়ার ছবি।

উত্তরাখণ্ডে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ভারতীয় ও মার্কিন সেনাবাহনীর যৌথ সামরিক বাহিনীর মহড়ার ছবিকে কাটছাঁট করে ভুল ব্যাখ্যা সহ জম্মু-কাশ্মীরে এই মুহূর্তে চলতে থাকা সামরিক অভিযানের দৃশ্য বলে চালানো হচ্ছে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করে এতদিনের ভোগ করা বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার প্রেক্ষিতেই ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে।
৫৭ সেকেন্ডের এই কাটছাঁট করা ভিডিওতে দূরদর্শন নিউজের লোগো লাগানো রয়েছে এবং একজন রিপোর্টার ব্যাখ্যা করছেন কীভাবে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের খোঁজে সেনাবাহিনী বাড়ি-বাড়ি ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছে।

বুম-এর হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও (৭৭০০৯০৬১১১) এই ভিডিও পাঠিয়ে তার সত্যতা জানতে চেয়ে বার্তা এসেছে।
ভিডিওটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে। ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে—কাশ্মীরে সেনা-অভিযানের জীবন্ত ছবি।

তথ্য যাচাই
বুম জম্মু-কাশ্মীর, মহড়া, ডিডি-নিউজ এই শব্দগুলি বসিয়ে ইউ-টিউবে খোঁজ করে দীর্ঘতর একটি ভিডিওর সন্ধান পেয়েছে, যার দৃশ্যগুলো ভাইরাল হওয়া ভিডিওর দৃশ্যের সঙ্গে মেলে। ডিডি-নিউজেরই সরকারি ইউ-টিউব চ্যানেলে এটি আপলোড হয় ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর।
এই মূল ভিডিওটির হিন্দি ক্যাপশন, "ভারতীয় বাহিনী কীভাবে কাশ্মীর উপত্যকায় তল্লাশি অভিযান চালায় জানুন"
ভিডিওতে বলা হচ্ছে,"আপনি কি জানেন কীভাবে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী জম্মু-কাশ্মীরের উপত্যকায় ঘেরাও ও তল্লাশি অভিযান চালায়? গ্রামের একটি বাড়িতে জঙ্গিরা লুকিয়ে আছএ জানতে পারলে কী ভাবে তারা অগ্রসর হয়? আমাদের প্রতিবেদক নন্দিতা দাগার তা ব্যাখ্যা করছেন।"

মূল ভিডিওটি ২ মিনিট ২ সেকেন্ডের, কিন্তু সেটাকে কাটছাঁট করে ৫৭ সেকেন্ডে নামানো হয়েছে, যাতে দূরদর্শনের ভাষ্যকারের বিবৃতিটি (যাতে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদের খোঁজে ভারতীয় বাহিনীর তল্লাশি অভিযান চালানোর পদ্ধতি সম্পর্কে নন্দিতা দাগার-এর প্রতিবেদনের কথা বলা হয়েছে) বাদ দেওয়া হয়েছে।
আমরা ২০১৬ সালের অক্টোবরে সংঘটিত সেনা-অভিযান সম্পর্কে গুগল-এ খোঁজ করে দেখি, ইন্ডিয়া টুডে-র একটি প্রতিবেদনে উত্তরাখণ্ডের রানিক্ষেতে ভারত-মার্কিন যুদ্ধ অভ্যাস নামে একটি যৌথ সামরিক মহড়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

২০১৬-র 'যুদ্ধ-অভ্যাস'-এর কেন্দ্রে ছিল সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা যা সেপ্টেম্বর মাসের ১৪ তারিখ থেকে শুরু হয়ে ২৭ তারিখ পর্যন্ত চলে।
এটা ছিল এ ধরনের 'যুদ্ধ-অভ্যাস'-এর দ্বাদশ সংস্করণ, যার সূচনা হয় ২০০৪ সালে এবং যাতে এবার ২২৫ জন মার্কিন সেনা এবং সমসংখ্যক ভারতীয় সেনা অংশগ্রহণ করেছিল।
দ্য হিন্দু সংবাদপত্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদক দিনকর পেরি অভিযানস্থল থেকেই তোলা কয়েকটি ছবি টুইটও করেন। টুইটের চতুর্থ ছবিতে যে ৩ নম্বর বাড়িটি দেখা যাচ্ছে, সেটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও ৫০ সেকেন্ডের মাথায় দেখা যায় এবং দূরদর্শনের তোলা ভিডিওয় ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের মাথায়।
বুম ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর পাঠানো একটি টুইটেও যুদ্ধ-অভ্যাস-এর দৃশ্য খুঁজে পেয়েছে।
একটি আকস্মিক ঘোষণায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার কথা জানান এবং রাজ্যটিকে লাদাখ ও জম্মু-কাশ্মীর এই দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভাজিত করার জন্য বিল আনেন।
আরও পড়ুন: ৩৭০ নং ধারা বাতিল, জম্মু ও কাশ্মীর দ্বিখন্ডিত: আমরা যা জেনেছি
আরও পড়ুন: না, এই ছবিটি পাকিস্তানি সেনার সাময়িক যুদ্ধবিরতির ছবি নয়
Updated On: 2020-02-27T16:37:04+05:30
Claim : সরাসরি কাশ্মীরে সেনা অভিযানের দৃশ্য
Claimed By : FACEBOOK POSTS
Fact Check : False
Next Story