টাটা পাওয়ার দিল্লি ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের (ডিডিএল) অভিযোগ—প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া বিজ্ঞাপন তাদের ফেসবুক পেজে অনুমোদন করার পর সেগুলি হ্যাক করে বেআইনিভাবে প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যার পর ফেসবুক ওই পেজগুলি মুছে দিয়েছে ।
ফেসবুক ফাঁস করেছে, এই সংস্থা ২০১৮ সালের অগস্টে নিজের ফেসবুক পেজে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সহ ৭টি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে এবং দর্শকদের বলে, তাঁরা যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন চান, তাহলে যেন এই পেজটিতে ‘লাইক’ দেন ।
পোস্টগুলিতে হিন্দি ও ইংরাজিতে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে—“আপনিও যদি চান যে নরেন্দ্র মোদী ২০১৯ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফিরে আসুন, তাহলে এই পেজে ‘লাইক’ দিন । যদি আপনি মোদীর সমর্থক হন, তাহলেও এই পেজ-এ ‘লাইক’ দিন ।”
বিজ্ঞাপনের আর্কাইভ ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এগুলি রাজনৈতিক চরিত্রের বিজ্ঞাপন হিসাবে শনাক্ত হওয়ার পর ফেসবুক পেজগুলি বন্ধ করে দেয়েছে, যেহেতু কে বা কারা এই বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ জোগাচ্ছে, তার কোনও উল্লেখ নেই ।
তা ছাড়া এই ৭টি বিজ্ঞাপনের মধ্যে অন্তত ৩টি ফেসবুকের বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত নীতিও লঙ্ঘন করেছে ।
বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, এই পোস্টগুলির জন্য ৫০০ থেকে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ।
ফেসবুকের বিজ্ঞাপন লাইব্রেরিতে পোস্টগুলি দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।
বুম লক্ষ করেছে, টাটা পাওয়ারের দিল্লি ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের এই ফেসবুক পেজটি ৩ লক্ষেরও বেশি ব্যবহারকারীর লাইক পেয়েছে, যেখানে সমগ্র টাটা গোষ্ঠীর সরকারি ফেসবুক পেজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ১ লক্ষ ৬০ হাজার ।
রহস্যটা কী?
বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর নাম বা ছবি ব্যবহার করা ১৯৫০ সালের সংশ্লিষ্ট এমব্লেম অ্যান্ড নেমস আইন অনুযায়ী আইনবিরুদ্ধ । এই আইন লঙ্ঘন করে সংবাদপত্রে প্রধানমন্ত্রীর পাতা-জোড়া বিজ্ঞাপন দেওয়ার দায়ে ২০১৭ সালের মার্চে পেটিএম এবং রিলায়েন্স জিও সংস্থাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল । হিন্দু বিজনেস লাইনে এ সংক্রান্ত রিপোর্টটি দেখতে পারেন ।
বুম টাটা পাওয়ার সংস্থার মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান—“এই পোস্টটি ভুয়ো এবং সেটি যে-ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চালনা করে, বেআইনিভাবে প্রচারের স্বার্থে সেটি হ্যাক করা হয়েছিল ।”
“আমরা নিজেরা তদন্ত করে দেখেছি, আমাদের অ্যাকাউন্টটি বেআইনিভাবে হ্যাক করা হয়েছে অপপ্রচারের অভিসন্ধি নিয়ে । আমরা জানিয়ে দিতে চাই যে, টাটা পাওয়ারের দিল্লি ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড কোনও রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর প্রতি কোনও পক্ষপাত পোষণ করে না । আমরা সোশাল মিডিয়ায় কায়েমি স্বার্থ সিদ্ধ করার জন্য কিংবা রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সামাজিক পক্ষপাতিত্ব সৃষ্টি করার জন্য প্রচারিত ভুয়ো খবর কিংবা প্রচারের ঘোর বিরোধী । আমাদের সোশাল মিডিয়া মঞ্চের উদ্দেশ্যই হল কোম্পানির বিভিন্ন খবর, সেগুলির হালতামামি (updates) এবং গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দেওয়া বিভিন্ন সুযোগসুবিধার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া ।”
বুম অবশ্য খেয়াল করেছে, এই ধরনের পোস্টগুলি ২০১৮ সালের অগস্ট মাস থেকে মাঝে-মধ্যেই প্রচার করা হয়েছে । স্বভাবতই সংস্থার মুখপাত্রকে আমরা প্রশ্ন করি, তাঁরা কি লক্ষ্য করেননি যে তাঁদের অনুমোদন ছাড়াই বারবার তাঁদেরই পেজ-এ এই পোস্টগুলি ছাড়া হচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, ব্যাপারটা তাঁদের নজরে আসে তাঁদের ফেসবুকের তথ্য ও বিজ্ঞাপন বিভাগে তাঁদের সংস্থার একটা ভুয়ো ভিডিওর খোঁজ পাওয়ার পর । সেই ভিডিওটির উত্স খুঁজতে গিয়ে তাঁদের ফেসবুক পেজে রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক ওই বিজ্ঞাপনগুলির দেখা মেলে । ইচ্ছাকৃতভাবেই বিজ্ঞাপনগুলি কয়েকদিন ছাড়া-ছাড়া প্রচারিত হচ্ছিল, যাতে চট করে সংস্থার নজরে তা না পড়ে ।
তিনি অভিযোগ করেন, তাঁদের সংস্থার ফেসবুক পেজ ভূতুড়ে বিজ্ঞাপনের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, যার কোনও বিজ্ঞপ্তি তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নেই, টাইমলাইনেও সেগুলি অন্তর্ভুক্ত হয়নি এবং পেজ-এর অনুগামীদেরও সে সব দেখানো হয়নি ।
ফেসবুকের বিজ্ঞাপনের আর্কাইভ কিন্তু ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এই তথআকথিত ভুয়ো বিজ্ঞাপনগুলি যত দিন সক্রিয় ছিল, তত দিন ফেসবুকে তা ভালরকম প্রভাবই ফেলেছে এবং লক্ষ-লক্ষ ব্যবহারকারী সেগুলো শেয়ারও করেছে ।
টাটা পাওয়ার সংস্থার মুখপাত্রটি অবশ্য জানালেন, এর পর থেকে তাঁরা তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের উপর নজরদারি আরও নিশ্ছিদ্র করার এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিবারক ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় ।
“তা ছাড়া, আমরা এটাকে একটা গুরুতর সাইবার অপরাধ হিসাবেও গণ্য করছি এবং সেই মর্মে দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল-এ অভিযোগও জানিয়েছি ।”
বুম দিল্লি পুলিশের সাইবার অপরাধ সেল-এ যোগাযোগ করলেও এ ধরনের কোনও অভিযোগ বা এফআইআর দায়ের হওয়ার খবর কিন্তু পায়নি ।