বাংলাদেশের ভোলায় গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় ছড়ালো বিভ্রান্তিকর পুরনো ছবি
২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতে ইসলাম সংগঠনের বিক্ষোভের ছবিটি ঢাকার পোস্তাগোলার কাছে বাংলাদেশ-চিন মৈত্রী সেতুতে তোলা হয়েছিল।
ফেসবুকে বাংলাদেশের ভোলায় ঘটা সাম্প্রতিক গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা বলে শেয়ার করা হচ্ছে ২০১৩ সালে ঘটা পুরনো ঘটনার ছবি। সঙ্গে পোস্টে শেয়ার করা হয়েছে বিভ্রন্তিকর তথ্য।
রবিবার হজরত মহাম্মদ সম্পর্কিত অবমাননাকর একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ শুরু হয় ভোলা জেলায়। "মুসলিম তৈহিদি জনতা'' এই ব্যনারের নীচে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হয় লোকজন। তারা দোষীকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানায়। এই বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে এপর্যন্ত মারা গেছে ৪ জন। আহতের সংখ্যা ৫০ জন।
এই ঘটনার জেরে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এক ব্যক্তিকে। তিনি অভিযোগ করেন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার। পুলিশ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। বিস্তারিত পড়ুন এখানে ও এখানে।
বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টটিতে লেখা হয়েছে: '''শান্তিপূর্ণ জনগণ'-এর দক্ষিন বাংলাদেশের ভোলা জেলাই তান্ডব 'মিথ্যে ফেসবুক অভিযোগে'। বাংলাদেশ পুলিশ অবস্থা সামাল দিচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডকে পাঠানো হয়েছে। ৬ জন ব্যক্তি মৃত এপর্যন্ত! দয়া করে আমাদের হিন্দু ভাই ও বোনেদের জন্য প্রার্থনা করুন। আজকের রাত বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য হয়ত অন্ধকারতম রাত!''
(মূল বয়ান: "Peaceful people" stormed in Southern #Bangladesh's Bhola district due to "false Facebook accusation". Bangladesh police taken control plus 4 helicopters BGB (Bangladesh Boarder Guard) is sent! 6 people dead so far! 🙏please pray for our Hindu brothers and sisters.🙏 Tonight is may be another darkest night for Bangladesh Hindu community!)
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ১৭৫ জন লাইক ও ৪৯ জন শেয়ার করেছে পোস্টটি।
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটিকে ইমেজ সার্চ করে জনেছে পোস্টে ব্যবহার হওয়া ছবিটি ইন্টারনেটে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে। কখনও বুলন্দশহর দাঙ্গা বা বাংলাদেশের টঙ্গিতে ইজতেমাতের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসা ছাত্রদের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে।
পোস্টে শেয়ার করা ছবিটি ২০১৩ সালের ৫ মে তোলা হয়। বাংলাদেশের ঢাকায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ধর্মদ্রোহীতার কঠোর আইন প্রণয়নের দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হয়। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালালে কমপক্ষে ২৭ জন মারা যায় ও ডজনখানেক বিক্ষোভকারী আহত হন। বিস্তারিত পড়ুন ২০১৩ সালের ৬ মে প্রকাশিত বিবিসি'র প্রতিবেদনে।
পোস্টে ব্যবহৃত ছবিটি দেখা যাবে ২০১৩ সালের ৭ মে প্রকাশিত টাইম টুর্কের প্রতিবেদনে।
ছবিটিতে আলোর খুঁটির ধরণ দেখে ব্রিজের ছবি হতে পারে বলে প্রথমে অনুমান করা হয়। এই সূত্র ধরে 'ব্রিজ','২০১৩','ঢাকা বিক্ষোভ' ইত্যাদি কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে ভিন্ন কোণ থেকে তোলা একই ব্যক্তিদের ছবি খুঁজে পায়।
বাংলাদেশে গণপিটুনিতে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যায় ছাত্রলীগ নেতার ছবি ভাইরাল হয়েছিল জিয়াগঞ্জে বন্ধুপ্রকাশ পালের হত্যাকরীর ছবি হিসেবে। বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
সম্পাদাকীয় নোট: বুম বাংলা প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বিক্ষোভের ছবিটিকে ভুল করে জামাত-এ ইসলামির প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বলে উল্লেখ করে। বাংলাদেশ জামাত-এ-ইসলামি একটি রাজনৈতিক দল এবং অন্যদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের সংগঠন। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। তুর্কি ওয়েবসাইটের সূত্র ধরে ২০১৩ সালের মে মাসের ছবি বলে তথ্য-যাচাই করা হয়েছিল। ২০১৩ সালের ৫ মে তারিখে তোলা অ্যালামির ছবি ও তুলনা ১০ জুলাই ২০২০ সংযোজন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত রিপোর্টিং: কদরুদ্দীন শিশির