ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি ও ভিডিওর সাহায্যে মধ্যপ্রদেশে ছেলেধরা গুজব ছড়ানো হচ্ছে
অনেকগুলো সম্পর্কহীন ভিডিও ও ছবির সাহায্যে রাজ্য জুড়ে শিশু অপহরণের গুজব ছড়ানো হচ্ছে
ভারতের হিন্দি বলয়ের হৃদয়পুরে বেশ কিছু পুরনো ভিডিও এবং ছবি ব্যবহার করে ছেলেধরার গুজব সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে চলেছে, যার পরিণামে ২০১৭ সাল থেকে বহু মানুষকে গণপ্রহারে হত্যা করা হয়েছে ।
বিশেষ করে হোয়াট্স্যাপে ছড়ানো বার্তার বাস্তব পরিণাম হয়েছে খুবই নির্মম এবং হিংস্র । পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সাল থেকে এই গুজবের বলি হয়েছেন ৩০ জন নিরীহ মানুষ। সর্ব ক্ষেত্রেই নিছক সন্দেহবশে এই মানুষগুলিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে এবং পুলিশ কোনও একটি ঘটনাতেও নিহতদের ছেলেধরা হবার প্রমাণ খুঁজে পায়নি ।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া যে পোস্টগুলি নতুন করে গুজব ছড়াচ্ছে, বুম সেগুলির তালিকা বানিয়েছে ।
পাকিস্তানের করাচিতে ছেলেধরা সন্দেহবশে এক ব্যক্তিকে কিছু লোক ঘিরে ধরেছে, এমন একটি ভিডিওকে বেমালুম মধ্যপ্রদেশে ছেলেধরার হাত থেকে শিশুকে বাঁচানোর গণপ্রয়াস বলে চালানো হচ্ছে ।
বুম দেখেছে, ভিডিওটি পাকিস্তানে অবস্থিত করাচির বালুচ কলোনিতে তোলা, ভারতের কোনও ঘটনার ছবিই নয় ।
ইন্টারনেটে খোঁজখবর করে আমরা দেখেছি এই ভিডিওটি গত বছর ডিসেম্বর থেকে সোশাল মিডিয়ায় রয়েছে ‘বালুচ কলোনিতে হারিয়ে যাওয়া শিশু’ এই শিরোনামে ।
আমরা দেখেছি যে ভূপালের পুলিশ সুপারের নামে আরও অনেক ভুয়ো বার্তা ও বক্তব্য সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে ।
ভূপাল অঞ্চলের আইজি যোগেশ দেশমুখ বুমকে জানান—“বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় পুলিশের তরফ থেকে এই হুঁশিয়ারি বার্তা প্রচার করা হচ্ছে যে, ছেলেধরার গুজবটি ভুয়ো, অসার এবং ভিত্তিহীন ।”
“বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় আমরা টহল দিচ্ছি, যাতে গুজব ছড়ানো এড়ানো যায় এবং একটি ক্ষেত্রে একটা মামলাও রুজু করেছি । বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে আমরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছি এবং যে বা যারাই গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের পরামর্শ দিয়ে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করছি ।”
মধুচক্র ফাঁস হওয়ার ছবিকে ছেলেধরা ধরা পড়ার ছবি বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে
মধ্যপ্রদেশের রাটলামে পুলিশ একটি মধুচক্রে হানা দিয়ে জড়িতদের গ্রেফতার করলে তাকে ছেলেধরা চক্র ধরা পড়ার ঘটনা বলে সোশাল মিডিয়ায় বর্ণনা করা হচ্ছে ।
বুম রাটলাম পুলিশ বিষয়ে খোঁজখবর চালিয়ে হিন্দি সংবাদপত্র পত্রিকা.কম-এ একটি রিপোর্টের সন্ধান পেয়েছে, যাতে রাটলামে গত সপ্তাহে একটি মধুচক্র ফাঁস হওয়ার খবর বের হয়েছে ।
দিল্লি রেল-স্টেশন থেকে শিশু চুরি হওয়ার দায় মিছিমিছি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে
দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন স্টেশনে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া এক ভারতীয় দম্পতির শিশু চুরির ঘটনাকে বেমালুম ভূপালের রোহিঙ্গা মুসলিমদের অপকর্ম বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছিল “পশ্চিমবঙ্গের মধ্যমগ্রাম রেল-স্টেশনে শিশু অপহরণের ছবি” ক্যাপশন দিয়ে । বুম তখনই সেই ভুয়ো ভিডিওর পর্দাফাঁস করে ।
আরও পড়ুনঃ দিল্লির রেল-স্টেশনে শিশু চুরির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পশ্চিমবঙ্গের বলে চালানো হচ্ছে ।
ব্রাজিলের জেল-দাঙ্গার বীভত্স ছবি গুজব ছড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে
ব্রাজিলের জেলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত দাঙ্গার বীভত্স দৃশ্যের ভিডিওকে হোয়াট্স্যাপ ও অন্যান্য সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে ভারতে ছেলেধরা ও প্রত্যঙ্গ পাচারকারীদের বিষয়ে গুজব ছড়াতে ।
মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে মিছিমিছি ছেলেধরা সন্দেহে অভিযুক্ত করা হয়েছে
অল্টনিউজ-এর পর্দাফাঁস করা অন্য একটি ভিডিওতে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ছেলেধরা সন্দেহে হেনস্থা করা হয় । ভিডিওতে দেখাই যাচ্ছে, ক্রুদ্ধ জনতার প্রশ্নের জবাবে লোকটি প্রলাপ বকছে ।
'ছেলেধরার' পুরনো ছবি নতুন করে শেয়ার হচ্ছে
হোয়াট্স্যাপে চারটি ছবি (যার মধ্যে তিনটিকে বুম আগেই ভুয়ো প্রমাণ করেছে) ব্যবহার করে নতুন করে ছেলেধরা গুজব ছড়ানো শুরু হয়েছে ।