"ভুয়ো খবর রুখতে পদক্ষেপ নিন": ইউটিউব সিইওকে চিঠি দিল তথ্য-যাচাইকারীরা
বিশ্বের প্রায় ৮০ টি তথ্য-যাচাইকারী সংস্থা চিঠিতে ইউটিউবে ছড়ানো অনেক ভিডিওর নমুনা পেশ করেছে যা বাস্তব জীবনের ক্ষতি করছে।
বিশ্বের ৪০ টি দেশের ৮০ টি তথ্য-যাচাই (fact-checking) সংস্থা ইউটিউব (Youtube) সিইও সুজান ওয়োজসিংকিকে (Susan Wojcinki) একটি চিঠি পাঠালো। "বিশ্বজুড়ে ইউটিউব যাতে মিথ্যে তথ্য ছড়ানোর একটি মাধ্যম না হয়ে ওঠে" তার জন্য তাঁরা ওয়োজসিংকিকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন ওই চিঠিতে (Letter)।
চিঠিটিতে যে সংস্থাগুলি সই করেছে, তাদের মধ্যে আছে: বুম লাইভ, (boomlive) পলিটিফ্যাক্ট, আফ্রিকা চেক, মালটিডা ও এলইউপিএ। ভারতীয় স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আরও যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন দ্য কুইন্ট, ভিসভাস নিউজ, ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপ, নিউজমোবাইল, নিউজচেকার, টিএইচআইপি (থিপ) মিডিয়া, ফ্যাক্ট ক্রেসেন্ডো, ফ্যাক্টলি, দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়ান, ও ইউটার্ন.ইন।
চিঠিটিতে, ইউটিউবে রয়েছে এমন বেশ কিছু ভিডিওর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলি বাস্তব জীবনে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। বিষয়বস্তু সম্পর্কে ইউটিউবের নির্দিষ্ট নীতি থাকা সত্ত্বেও, সেগুলিকে পাশ কাটিয়ে যেতে পেরেছে ওই ভিডিওগুলি।
গত বছর, ষড়যন্ত্রের গল্প ফাঁদে এমন সব গোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্ত ও তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা লক্ষ করা গিয়েছিল। সেগুলির মধ্যে ছিল একটি বিশেষ আন্দোলন, যেটির সূত্রপাত হয় জার্মানিতে, পৌঁছে যায় স্পেনে ও ছড়িয়ে পড়ে লাতিন আমেরিকায়। আর এ সবই হয়েছিল ইউটিউব'র মাধ্যমে।
তারই মধ্যে, গ্রিক ও আরবি ভাষায় তোলা ভিডিও দেখেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ, যাতে টিকা বর্জন করার পক্ষে সওয়াল করা হয়। বা কোভিড-১৯ সংক্রমণকে নানা ধরনের বাজে চিকিৎসা পদ্ধতির দ্বারা সারিয়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোভিড-১৯ ছাড়াও, কয়েক বছর ধরে ক্যান্সার সারানোর কিছু ভুয়ো ওষুধ সম্পর্কে প্রচার করে যাচ্ছে কয়েকটি ইউটিউব ভিডিও।
ব্রাজিলে, দুর্বল সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে হিংসার বার্তা ছড়ানো হয় ইউটিউবে। এবং তা পৌঁছে যায় হাজার হাজার ইউটিউব ব্যবহারকারীর কাছে।
নির্বাচনও নিরাপদ নয়। ফিলিপাইন্স'এ সামরিক আইন চালু থাকা কালে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির ঘটনাগুলিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মিথ্যে তথ্য ছড়ানো হয় ও ২০ লক্ষ বার দেখা হয় সেই ভুয়ো ভিডিও। প্রয়াত ডিক্টেটরের ছেলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে ওই পন্থা অবলম্বন করা হয়। তিনি ২০২২ সালে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন।
তাইওয়ানে, জালিয়াতির ভিত্তিহীন অভিযোগ গত নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। গত বছর, উত্তেজিত জনতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল বা সংসদ ভবনে চড়াও হলে, মিথ্যে খবরের প্রভাব কী হতে পারে বিশ্ববাসী তা প্রত্যক্ষ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত,নির্বাচনে "জালিয়াতি" হয়েছে দাবি করে ইউটিউব'এ ভিডিও দেখানো হতে থাকে। সেগুলি ৩.৩ কোটি বার দেখা হয়।
তথ্য যাচাইকারীরা ইউটিউবকে অনুরোধ করেছেন যে, বিষয়টিকে যেন ভিডিও বাদ দেওয়া বা না দেওয়ার মতো জোলো বিতর্কে নামিয়ে না আনা হয়। তাঁরা বলেন, ওই ধরনের ভিডিওগুলিকে বন্ধ করে দেওয়ার বদলে তথ্য যাচাই করে সেগুলিকে মিথ্যে বলে ধরিয়ে দেওয়া অনেক বেশি ফলপ্রসু হতে পারে বলে প্রমাণ আছে তাঁদের হাতে।
তথ্য-যাচাইকারীরা বলেছেন, এর ফলে বাকস্বাধীনতা বজায় থাকবে, অথচ জীবন, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।
ওই সংস্থাগুলি ওয়োজসিংকি ও ইউটিউব'এর কাছে চারটি জরুরি দাবি পেশ করেছেন।
- তাঁদের প্ল্যাটফর্ম থেকে কী ভাবে মিথ্যে তথ্য ছড়ায় সে সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজার রেখে, ইউটিউবের নীতি সেগুলির মোকাবিলা করার জন্য কী করতে পারে, তা জনসাধারণকে জানানো।
- ভিডিও বন্ধ করে দেওয়ার বদলে সেগুলির বিষয়বস্তুর সত্যতা যাচাই করে দেখনো। তথ্য-যাচাইকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে যৌথভাবে ওই কাজ করতে পারে ইউটিউব।
- যাঁরা বারবার নিয়ম ভেঙ্গে মিথ্যা তথ্য ছড়াবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া ও কম্পানির অ্যালগরিদম যাতে সেগুলি প্রচার করতে সাহায্য না করে, সেই ব্যবস্থা করা।
- ইংরেজি ছাড়া, স্থানীয় ভাষায় তৈরি ভিডিওর ক্ষেত্রেও ওই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া ও ভাষা-ভিত্তিক তথ্য পরিবেশন করা্। সেই সঙ্গে কার্যকর ট্রান্সক্রিপশন পরিষেবার ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন।
তথ্য-যাচাইকারী সংস্থাগুলি ইউটিউবের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। এবং ওয়োজসিংকি'র সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী, যাতে তাঁদের দাবিগুলি রূপায়ন করা যায় ও ইউটিউব যাতে "একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মিথ্যে ও ভুল তথ্য প্রচার রুখতে পারে, যাতে সেগুলিকে ব্যবহারকারী ও সমাজের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করা যায়।"