ভারতীয় কিশোরী ও তার দাবি নাসার প্যানেলে অন্তর্ভুক্তি: পড়ুন আসল কাহিনী
নাসা বুমকে জানায় ১৪ বছরের ওই মেয়ে এক তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্যানেলে স্থান পায়, তবে তার পটভূমি ও কৃতিত্বের দাবিগুলি অসত্য।
সম্পাদকীয় নোট: এই রিপোর্টটি আমরা স্বেচ্ছায় আপডেট করেছি, কারণ আমরা ওই নাবালিকার পরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছি।
গত সপ্তাহে, ভারতের সংবাদ মাধ্যমে একটি অবিশ্বাস্য প্রাতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, মহারাষ্ট্রেরে ঔরঙ্গাবাদের এক ১৪ বছরের মেয়েকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা (NASA) তাদের একটি বিশেষ প্যানেলে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ওই প্যানেলের কাজ হল, নাসার 'মাইনরিটি সার্ভিং ইনস্টিটিউশনস ফেলোশিপ প্রোগ্রাম'-এর জন্য যে সব প্রস্তাব আসে, সেগুলির পর্যালোচনা করা।
ওই প্রতিবেদনে যা অবিশ্বাস্য ঠেকে তা হল, মেয়েটি দশম শ্রেণীর ছাত্রী। অথচ সে তাঁর চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে। ওই প্রতিবেদনগুলিতে এও বলা হয় যে, 'কৃষ্ণগহ্বর ও ভগবান' সংক্রান্ত ওই ছাত্রীর একটি লেখার ভিত্তিতে তাঁকে মনোনীত করা হয়। এবং তাঁর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার খরচ দিচ্ছে নাসা।
সোশাল মিডিয়ায় এই খবর ভাইরাল হওয়ায়, অনেক সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকরী ওই কিশোরীর দাবিটি খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলে, তাঁরা বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ করেন। অনেকে জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন, অনেকে আবার দুর্নীতি জড়িত এক কেলেঙ্কারির গন্ধ পান। কিন্তু তা সত্ত্বেও, ভারতের বেশ কিছু মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যম, ওই অসঙ্গতিগুলি যাচাই না করেই খবরটি ছাপে।
নাসা বুমকে বলে যে, এটা ঠিক যে, এক তৃতীয় পার্টির সহায়তায় ওই কিশোরীকে একটি 'এক্সপার্ট প্যানেলের' সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড ও কৃতিত্ব সংক্রান্ত মিথ্যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া, সংবাদ মাধ্যমে দাবি করা হলেও, তাঁর কাছ থেকে কোনও গবেষণা পত্র গ্রহণ করা, তাঁকে চাকরি দেওয়া, ফেলোশিপ দেওয়া, ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য খরচ বহন করার কথা অস্বীকার করে নাসা।
নাসার মুখপাত্র বুমকে বলেন, "নাসার এসটিইএম অফিস, তাদের মাইনরিটি সার্ভিং ইনস্টিটিউশনস-এর ফেলোশিপের প্রস্তাব পর্যালোচনা করার জন্য একটি এক্সপার্ট প্যানেল গঠন করতে চাইছিল। তার জন্য, মে ২০২১-এ, এক তৃতীয় পার্টির মারফত, তারা ওই প্যানেলের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদনপত্র চায়। ওই ব্যক্তিকে [নাম বাদ দেওয়া হল] তাঁর মিথ্যে ব্যাকগ্রাউন্ড ও কৃতিত্ব তালিকার ভিত্তিতে মনোনীত করা হয়। সম্ভাব্য প্যানেলিস্টদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করার পদ্ধতিটি নাসা এখন খতিয়ে দেখছে।"
আরও পড়ুন: 'ইমপিচমেন্ট টাইম'? বাইডেন ও হ্যারিসের ছবি সমেত এই প্রচ্ছদ ভুয়ো
"বিষয়টি ওই এজেন্সির ইন্সপেক্টর জেনারেল-এর অফিসকে জানানো হয়েছে। [নাম বাদ দেওয়া হয়েছে] ওই ব্যক্তিকে নাসা চাকরি দেয়নি। তাঁকে কোনও ফেলোশিপও দেওয়া হয়নি। যা কেবল একজন মার্কিন নাগরিকই পেতে পারেন। তাছাড়া তাঁর কাছ থেকে [নাম বাদ দেওয়া হয়েছে] কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্রও গ্রহণ করা হয়নি। বা তাঁর কোনও প্রশংসাও করা হয়নি। তাঁর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসার খরচ আমরা বহন করছি, সেই খবরও মিথ্যে," বলেন ওই মুখপাত্র।
অন্য এক নাসা অধিকারিক বুমকে বলেন, 'কৃষ্ণগহ্বর ও ভগবান'র মতো বিষয় নাসার কাছে অপ্রাসঙ্গিক। এবং ওই ধরনের গবেষণা পত্র তাঁরা গ্রহণ করেন না।
অনলাইন অনুসন্ধান, ওই কিশোরী ও তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা এবং ইমেইলের মাধ্যমে নাসার আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বুম এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
এএনআই থ্রেড থেকে সূত্রপাত
১৯ অগস্ট, সংবাদ এজেন্সি এএনআই, ওই কিশোরী সম্পর্কে একটি টুইটার থ্রেড প্রকাশ করে। তাতে বলা হয় যে, নাসার এমএসআই ফেলোশিপ রিভিউ প্যানেলের সদস্য মনোনীত হয়েছেন ওই কিশোরী। এবং ইতিমধ্যেই তিনি জুলাই মাসে ওই প্যানেলের বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
তাঁর দেওয়া বয়ান এএনআই উদ্ধৃত করে: "'কৃষ্ণগহ্বর ও ভগবান', এ বিষয়ে আমি একটি তাত্ত্বিক লেখা লিখি। তিন বার চেষ্টা করার পর, সেটি নাসা গ্রহণ করে। তাঁরা আমাকে তাঁদের ওয়েবসাইটে লেখার জন্য অনুরোধ করেছেন।"
টুইটার থ্রেডটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ওই কিশোরীকে দেওয়া নাসার তথাকথিত শংসাপত্রের ছবিও প্রকাশ করে এএনআই।
এজেন্সির প্রতিবেদন হিসেবে লেখাটি প্রকাশ করে ইকনমিক টাইমস। নিউজ-১৮, মিন্ট, টিভি১৯ ভারতবর্ষ, লোকমত, এনডিটিভি ইন্ডিয়া, টাইমস নাও, অমর উজালা ও ফ্রি প্রেস জার্নাল সহ অন্যান্য গণমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করে। প্রাথমিক ভাবে, তারা ওই কিশোরীর দাবি সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন তোলেনি। তিনি যা দাবি করেন, তারা সেটাই হুবহু ছাপে।
কিন্তু খবরটি সোশাল মিডিয়ায় যতই ভাইরাল হতে থাকে, ততই সন্দেহ প্রকাশ করতে থাকেন অনেকে।
তার ফলে, এএনআই একটি স্ক্রিনশট প্রকাশ করে। দাবি করা হয়, সেটি নাকি নাসার এমএসআই টিমের সঙ্গে ওই কিশোরীর ইমেইলে বাক্যালাপের স্ক্রিনশট।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এএনআই-এর সম্পাদক স্মিতা প্রকাশ পরে টুইট করে জানান যে, তাঁদের প্রতিবেদনটি সঠিক বলেই তাঁরা মনে করেন।
টুইটটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
সন্দেহজনক বিষয়গুলি
কিশোরীর দাবির মধ্যে যে অসঙ্গতিগুলি লক্ষ করা যায়, সেগুলি একত্রিত করে একটি থ্রেড তৈরি করেন জিশান মহাস্কর (@MhaskarChief) নামের এক টুইটার ব্যবহারকরী।
থ্রেডটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
প্রথমটি হল নাসার দেওয়া 'শংসাপত্রটি' সংক্রান্ত। (নিচে প্রদত্ত) শংসাপত্রটি আদৌ স্পষ্ট নয়। এবং সেটিকে 'নাসা প্রোপোজাল রিসার্চ ২০২০' আওয়ার্ড বা পুরস্কার আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
যাই হোক, আমরা জানতে পারি ওই নামে কোনও পুরস্কার নেই।
তাছাড়া, মানপত্রটিতে দু'জনের সই আছে। একজন হলেন জিম ব্রাইডস্টাইন, যাঁর পদ হল সিইও ও প্রেসিডেন্ট। অন্যজন হলেন জেমস ফেডেরিক, দফতরের প্রধান।
মহাস্কর দেখিয়েছেন যে, নাসায় সিইও বা প্রেসিডেন্ট বলে কোনও পদ নেই।
আমরা নাসার সাংগঠনিক কাঠামো খুঁটিয়ে দেখি। দেখা যায়, অ্যাডমিনিস্ট্রেটার বা প্রশাসকই হলেন ওই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান। সংগঠনের কোনও পর্যায়ে সিইও বা প্রেসিডেন্টের উল্লেখ নেই।
তাছাড়া, নাসার সঙ্গে যুক্ত জিম ব্রাইডস্টাইন ও জেমস ফেডেরিক নামের কোনও ব্যক্তির হদিস পাইনি আমরা। ইন্টারনেট সার্চ করে আমরা এক ব্যক্তির নাম পাই তিনি হলেন, জেমস ফ্রেডেরিক ব্রাইডেনস্টাইন। তাঁকে জিম ব্রাইডেনস্টাইন বলেও সম্বোধন করা হয়। স্পস্টতই, একজন ব্যক্তির নামকে ভেঙ্গে দু'টি নাম করা হয়েছে। তার ওপর, নামের বানানেও ভুল আছে।
দেখা যায়, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি ২০২১, ট্রাম্পের শাসনকালে, ব্রাইডেনস্টাইন ছিলেন নাসার ত্রয়োদশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটার।
তাছাড়া, কানভা টেমপ্লেট ও এএনআই-এর প্রকাশিত ওই কিশোরীর শংসাপত্রের ডিজাইন ও বয়ানের মধ্যে এক অদ্ভুত মিল লক্ষ করেন মহাস্কর।
'শংসাপত্রে' লেখা হয়, "নাসার প্রোপেজাল রিসার্চ ২০২০-২০২১ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে" ওই কিশোরী। অথচ, সারা আন্তর্জালে তার কোনও উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
কিশোরীটি দাবি করেন যে, তিনি একটি গবেষণা পত্র লিখেছেন, যার শিরোনাম হলো 'আমরা কি একটি কৃষ্ণগহ্বরে বাস করি?' (We Live In A Black Hole?)। উনি আরও দাবি করেন যে, তাঁর ওই গবেষণা পত্রটি মে ২০২১-এ 'ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সায়েন্টিফিক রিসার্চ'-এ (আইজেএসইআর) প্রকাশিত হওয়ার জন্য মনোনীত হয়।
অ্যাস্ট্রনমিকক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া'র 'পাবলিক আউটরিচ অ্যান্ড এডুকেশন কমিটি' ওই দাবি সরাসরি উড়িয়ে দেয়। তারা একটি বিবৃতিতে, বিজ্ঞানের জার্নাল হিসেবে আইজেএসইআর-এর নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
'প্রিডেটারি জার্নাল' (টাকার বিনিময়ে, পিয়ার রিভিউ ছাড়াই যে সব জার্নাল গবেষণা পত্র ছাপে) সম্পর্কে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, "এটা ঠিক যে আপনার গবেষণা একটি অ্যাকাডেমিক জার্নালে পাঠাতে হয়। সেই জার্নাল আপনার গবেষণা পত্রটি ছাপার আগে সেটিকে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের কাছে যাচাইয়ের জন্য পাঠায়। দুর্ভাগ্যের কথা হল, কিছু কিছু জার্নাল গবেষণা পত্র ছাপার জন্য লেখকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে। অ্যাকাডেমিক প্রকাশনার অলি-গলিতে অনেক নিম্নমানের জার্নাল রয়েছে। তারা অনেক লেখকের অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে তাদের শোষণ করে। তাদের যাই দেওয়া হোক না কেন, তা তারা কোনও রকম যাচাই না করেই নির্বিচারে ছেপে দেয়। লেখকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কেবল অর্থ উপার্জন করতেই ব্যস্ত তারা। অ্যাকাডেমিক মহলে একেই বলে 'প্রিডেটারি পাবলিশিং'।"
ওই বিবৃতিতে প্রিডেটারি জার্নালের একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে। তাতে আইজেএসইআর-এর নাম রয়েছে।
তাদের বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রনমিক্যাল সোসাইটি জানায়,
"এটা অসম্ভব যে, নাসা বা অন্য কোনও বিশ্বাসযোগ্য এজেন্সি, ১৩-১৪ বছরের, এক অ-নাগরিক ও শিক্ষাগত যোগ্যতাহীন ছাত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রস্তাবের মান নির্ণয় করার জন্য আমন্ত্রণ জানাবে। নাসার কোনও কর্মী যদি ছাত্রীটি ও যাঁকে তাঁরা আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছিলেন, তাঁদের নাম গুলিয়ে ফেলে থাকেন, তাহলেই এমন অঘঠন ঘটতে পারে । অন্য দিকে, ছাত্রীটি নাসার সঙ্গে সম্পর্কহীন কোনও ব্যক্তির তামাশার শিকারও হয়ে থাকতে পারেন। এএনআই-এর শেয়ার করা ইমেইল (নীচে দেখুন) অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের উদ্দেশ্যে লেখা বলেই মনে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এটা মেনে নিতে অসুবিধে হয় যে, আমন্ত্রণটি একজন ১৪ বছরের ছাত্রীর কাছে পাঠানো হয়।"
বুম ওই কিশোরীকে তাঁর লেখা গবেষণা পত্রটির প্রতিলিপি দেখানোর অনুরোধ করে। কিন্তু বেশ কয়েক বার মনে করিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও, তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
লিঙ্কডইন অ্যাকাউন্ট – দৃষ্টি ঘোরানোর উপায়
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত দাবিটির সব ক'টি অসঙ্গতি খুঁটিয়ে দেখা ছাড়াও, নেটিজেনরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। ওই কিশোরী তাঁর লিঙ্কডইন অ্যাকাউন্টেও যে সব দাবি করেন, সেগুলিকেও যাচাই করেন নেটিজেনরা।
প্রথমত, দেখা যায় যে, দশম শ্রেণীর ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও, ওই কিশোরী নিজের নামের সামনে 'ডঃ' ব্যবহার করেন। 'ডঃ' ব্যবহার করা সম্পর্কে বুম তাঁকে প্রশ্ন করলে, ওই কিশোরী প্রথমে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে নিজের দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করেন। উনি বলেন, ওই অ্যাকাউন্টটিতে তিনি প্রবেশ করতে পারছেন না।
তাঁর মা কিন্তু বলেন যে, ডঃ ব্যবহার করায় কোনও ভুল হয়নি। তিনি বলেন, তাঁর মেয়েকে আগেও 'ডঃ' বলে সম্বোধন করা হয়। কিন্তু কি করে দশম শ্রেলীর একজন ছাত্রীকে 'ডক্টর' বলা যায়, আমাদের এই প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।
পরে ওই লিঙ্কডইন অ্যাকাউন্টটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের কাছে এই স্ক্রিনশটটি রয়েছে।
আরেকজন সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী দেখান যে, লিঙ্কডইনে ওই ছাত্রীর পরিচিতিটি লিঙ্কডইনের পরিচিতি লেখার টেমপ্লেট থেকে তৈরি।
ওই টুইটের আর্কাইভ দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
আমেরিকান অ্যাস্ট্রনমিক্যাল সোসাইটি ২৫,০০০ মার্কিন ডলারের স্কলারশিপের জন্য তাঁকে মনোনীত করেছে, এই মর্মে একটি শংসাপত্রও তিনি পোস্ট করেন।
এ ক্ষেত্রেও, সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ছাত্রীটির পোস্ট করা শংসাপত্র ও কানভা টেমপ্লেটের মধ্যে সাদৃশ্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ওই কিশোরী ও তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁরা জোরের সঙ্গে দাবি করেন যে, ওই ছাত্রীকে সত্যিই ওই শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত করা হয়। নিশ্চিত হওয়ার জন্য, ওই শংসাপত্রে যাঁর স্বাক্ষর আছে, সেই ডঃ জ্যাকেলিন ফ্যাহারটির সঙ্গে যোগাযোগ করি আমরা।
ডঃ ফ্যাহারটি বুমকে বলেন যে, শংসাপত্রটি ভুয়ো। তিনি এও বলেন যে আমেরিকান অ্যাস্ট্রনমিক্যাল সোসাইটি ওই ধরনের কোনও শিক্ষাবৃত্তি দেয় না। "এটা আসল নয়। ওই ধরনের স্কলারশিপের কোনও অস্তিত্ব নেই। আমি জানি না আমার নাম কেন ব্যবহার করা হল," উনি বলেন।
কিশোরীর বক্তব্য
আমাদের কথোপকথনের সময়, ওই কিশোরী ও তাঁর মা, আগাগোড়া নিজেদের অবস্থানে অবিচল থাকেন। এবং নিজেদের দাবি প্রমাণ করার জন্য তাঁরা আরও ২০টি স্ক্রিনশট দেখান।ওই স্ক্রিনশটগুলিতে, নাসা আধিকারিক ও উচ্চপদস্থ গবেষকদের সঙ্গে ইমেইলে কথোপকথনের নমুনা ছিল। কয়েকটিতে ওই কিশোরীর ইমেইল ঠিকানাও দেখা যায়।
ছাত্রীটি আরও কিছু স্ক্রিনশট পাঠান। যেগুলি দেখে মনে হয়, সেগুলি অন্যান্য পদস্থ গবেষকদের সঙ্গে তাঁর জুম-এর মাধ্যমে আলোচনার স্ক্রিনশট। যে ১৪ জনের মুখ আমরা দেখতে পাই, তার মধ্যে ১১ জন যে অ্যাকাডেমিক গবেষক, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হই। ইমেইল আলোচনার স্ক্রিনশটে যে সব ইমেইল ঠিকানা দেখা যায়, সেগুলির সঙ্গে তাঁদের অনেকেরই নাম মিলে যায়।
আমরা ৬৭৫ মার্কিন ডলার (৫০,০০০ টাকা) ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের একটি স্ক্রিনশটও আমাদের দেখানো হয়। ছাত্রীটি দাবি করেন যে, প্যানেল বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য ওই টাকা তাঁকে দেওয়া হয়।
এএনআই ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে যে দাবিগুলি করা হয়, বুমের সঙ্গে কথা বলার সময়, ওই কিশোরী ও তাঁর মা সেই দাবিগুলিরই পুনরাবৃত্তি করেন।
তিনি বলেন যে, ২০ অগাস্ট থেকে তিনি তাঁর 'গবেষণা সংক্রান্ত বৈঠকে'-এ অংশ নিচ্ছেন। সেই সময়েই বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে আসে। এক বছর আগের ঘটনা এখন খবরে কেন?" তবে ওই বৈঠকগুলিতে সাম্প্রতিক বিতর্কটি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
পরিশেষে, এটা বলা যেতে পারে যে, ইমেইলের স্ক্রিনশটগুলি আসল। কারণ, ওই কিশোরীকে যে মনোনীত করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে নাসা আমাদের নিশ্চিত করেছে। যদিও তারা এও বলেছে যে, কিছু ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
নাসার বক্তব্য জানাতে বুম ওই কিশোরী ও তাঁর পরিবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেই সঙ্গে, যে তৃতীয় পার্টির মাধ্যমে তিনি আবেদন করেছিলেন, সেই সংস্থা সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়। তাঁদের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর এই প্রতিবেদনটি আপডেট করা হবে।
অতিরিক্ত রিপোর্টিং: সুজিত এ
আরও পড়ুন: না, দলবীর ভাণ্ডারি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে প্রধান বিচারপতি হননি