১৯৯৯ সালে তুরস্কের ভূমিকম্পে সর্বহারা বৃদ্ধের ছবি সাম্প্রতিক বলে ছড়াল
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবিটি ১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর তুরস্কের কাইনাসলি শহরের ভূমিকম্পের পরে তোলা হয়।
অতীতে তুরস্কের (Turkey) বিধ্বংসী ভূমিকম্পে (earthquake) সর্বহারা অঝোরে কাঁদতে থাকা রুটি (old man) হাতে এক বৃদ্ধার মর্মস্পর্শী ছবি বিভ্রান্তিকর (misleading claims) দাবি সহ সাম্প্রতিক বলে ছড়নো হচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবিটি ১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর তুরস্কের কাইনাসলি শহরের ভূমিকম্পের পরে তোলা হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তুরস্ক ও উত্তর সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৫ হাজারের বেশি। প্রাণের আশা ক্ষীণ হওয়ার পরও এখনও ধ্বংসস্তূপের চাপা পড়া স্থান থেকে জীবিত লোকজনকে উদ্ধার করছেন উদ্ধারকর্মীরা।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে দেখা যায় ভাঙা বাড়ির সামনে অঝোরে কাঁদতে থাকা রুটি হাতে এক বৃদ্ধার ছবি। ছবিটিকে তুরস্কের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের মর্মান্তিক দৃশ্য বলে ছড়ানো হচ্ছে।
ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, “১৭ সেকেন্ডের ভূমিকম্পের আগে লোকটি ছিল ৩ টি বাড়ির মালিক। আর সেই লোকটি ১৭ সেকেন্ড পর তিনটি রুটিরও মালিক না। অন্যের দেওয়া রুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মানুষটি। তাই সময়ের সাথে সব ঘুরে যেতে পারে। আল্লাহ চাইলে ১ সেকেন্ডের মধ্যে সব কিছু পরিবর্তন করে দিতে পারেন।”
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
একই ছবি ইংরেজি ক্যাপশন সহ তুরস্কে সাম্প্রতিক ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে টুইট করা হয়।
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স সার্চ করে একাধিক তুরস্কের গণমাধ্যম যেমন হেবার ৬১ ও ইয়ানি সাফাক-এ ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর ও ২০২০ সালের ১৭ অগস্ট ছবিটি প্রকাশিত হতে দেখে।
উভয় প্রতিবেদনেই ১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর তুর্কীর কাইনাসলি শহরে বিধ্বংসী ৭.২ রিখটার স্কেল মাত্রার ভূমিকম্পের কথা বলা হয়েছে।
বুম মূল ছবিটি খুঁজে পেয়েছে স্প্যানিশ গণমাধ্যম এলমুন্ডোতে ১৪ নভেম্বর ১৯৯৯ প্রকাশিত সংস্করণে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে ছবিটির সূত্র হিসাবে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, “তুরস্কের শহর দুজস-এ (Duzce) গতকাল এক বৃদ্ধ মানুষের ক্রন্দন।”
তুরস্কের গণমাধ্যম এ হেবারে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফোটোগ্রাফার আব্দুররহমান আন্তাকইয়ালি এই রুটি হাতে সর্বহারা দাদুর ছবিটি তোলেন। আন্তাকইয়ালি ওই গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। আমি একজন তুতোস্থানীয় ব্যক্তিতে হাতে রুটি নিয়ে কাঁদতে দেখি। আমি দৌড়ে গিয়ে ৬-৭ টি ফ্রেমে তাঁর ছবি তুলি। তাঁর সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি।”
তিনি অঝোরে কেঁদে চলছিলেন বলতে বলতে যে, “অনেক তরুণ মারা গেল।”
চিত্রসাংবাদিক আন্তাকইয়ালি ওই ছবি ১২ নভেম্বর ২০১৪ তাঁর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন। ক্যাপশনের অনুবাদ থেকে জানা যায়, আন্তাকইয়ালি দুজস/কাইনাসলি শহরে ১৫ বছর আগে (১৯৯৯ সালে) ছবিটি তোলার কথা জানান। সম্ভবত, ওই ব্যক্তির প্রয়াণের খবর জানার পরেই আন্তাকইয়ালি ছবিটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন।