রোহিঙ্গাদের সীমান্ত টপকানোর পুরনো দৃশ্যকে বলা হল বাংলায় অবৈধ অনুপ্রবেশ
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওটি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাখাইন-বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাঁটাতার টপকানোর দৃশ্য।
মায়ানমার (Myanmar) থেকে শিশু ও নারী সহ রোহিঙ্গাদের (Rohingyas) তৈজসপত্র নিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে (crossing border) বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ২০১৭ সালের ভিডিওকে বলা হল পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) সহস্রাধিক অবৈধ অনুপ্রবেশের (immegration) দৃশ্য।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য যেমন পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা বাংলাদেশের স্থল সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় অনুপ্রবেশ একটি বাস্তাবিক সমস্যা। অনুপ্রবেশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নানা বিষয় নিয়ে চাপানউতোর চলতে থাকে। এবছরের জুন মাসে ভারতের সীমান্তরক্ষীরা এক চিনা নাগরিককে গ্রেফতার করে। অর্থনৈতিক জালিয়াতির সঙ্গে ওই ব্যক্তির যোগসাজস রয়েছে বলে খবরে প্রকাশ।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে শিশু ও নারী সহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে বিপজ্জনকভাবে কাঁটাতার (steel fence) টপকাতে দেখা যায়। ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "বাঙালির পেটে লাথি মেরে হাজার হাজার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা বাংলায় ঢুকছে এতে বাঙালির বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই। কিন্তু দু-চার টাকা পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়লেই বাঙালীর অন্তরে বিদ্রোহী চিন্তা জাগে!! শ্যামা প্রসাদ মুখপাধ্যায় লড়াই করে এই বাংলাকে বাংলাদেশের হাত থেকে রক্ষা করে ছিলেন। তাই আজ ২০ শে জুন বাঙালীরা #পশ্চিমবঙ্গ_দিবস পালন করতে পারছে। এখনো হিন্দু বাঙালীরা যদি না জাগে এই বাংলা বাংলাদেশের সাথে অন্তভুক্ত হবে!! #জয়_বঙ্গ #জয়_শশাঙ্ক"। (সম্পাদিত)
ভিডিওটিকে দেখা যাবে এখানে। ভিডিওটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভাইরাল ভিডিওটি নিচে দেখুন।
আরও পড়ুন: গলি রাস্তায় ট্যাক্সি জলে ডুবে যাওয়ার ছবিটি আমপানের সময়ের
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল কাঁটাতার টপকে সীমান্ত পেরনোর ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশের দৃশ্য নয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে কাঁটাতার টপকানোর দৃশ্য।
বুম ভিডিওটির মূল কি-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তুর্কি ভাষায় করা টুইট খুঁজে পায়। তুরস্কের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'সাদাকা তাশি'র চেয়ারম্যান কোমাল ওজদাল (Kemal Ozdal) ওই টুইটটি করেন। 'সাদাকা তাশি' সংস্থা রোহিঙ্গা সংকটের সময় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় একাধিক ত্রাণ-কাজে অংশ নেয়।
তুর্কি ভাষায় করা ওই টুইটের অনুবাদ, "রোহিঙ্গা মুসলিমরা মায়ানমারের সেনার আক্রমণের ও গণহত্যার পর দেশ ছাড়ছে।"
(মূল তুর্কি ভাষায় টুইট: Myanmar ordusu tarafından saldırıya uğrayan Arakanlı Müslümanlar katliamdan kaçarak anayurtlarından hicret ediyorlar)
এই সূত্র ধরে তুর্কি ভাষায় কিওয়ার্ড সার্চ করে তুর্কির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদলু এজেন্সির ২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওর খুঁজে পায়। ওই ভিডিওর শিরোনামের বাংলা অনুবাদ, "রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।" (মূল তুর্কি ভাষায় শিরোনাম: Arakanlı Müslümanların Bangladeş'e kaçışı sürüyor)
ভিডিওটির বর্ণনায় লেখা হয়েছে, "মায়ানমারের বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী ও সেনাদের হাত থেকে বাঁচতে আরাকানের বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্ত টপকাচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি"।
ভিডিওটির ৫১ সেকেন্ড অংশ থেকে ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড অংশে ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাবে।
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ প্রকাশিত বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৫ অগস্ট রোহিঙ্গা জঙ্গিরা পুলিশ চৌকি আক্রমণ করে ১২ জনকে হত্যা করলে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। প্রবল জাতিবিদ্বেষের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের উপর মায়ানমার সেনা কঠোর দমন-পীড়ন অভিযান রোহিঙ্গারা রাখাইন প্রদেশ থেকে পালাতে শুরু করে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সে সময়ের তথ্য অনুযায়ী ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সে সময়। পারাপারের সময় কয়েক ডজন মানুষ নাফ নদিতে তলিয়ে যায় বলে বিবিসির ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপুঞ্জের আধিকারিকরা সেসময় পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশ সরকারকে নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অনুরোধ করে। রোহিঙ্গাদের সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষের বসবাস ছিল বাংলাদেশের চট্টোগ্রাম জেলায় সীমান্ত লাগোয়া মায়ানমারের রাখাইন বা আরাকান প্রদেশ।
দেশের সর্বোচ্চ নেত্রী নোবেল শান্তিপুরস্কার জয়ী নেত্রী সুচি রহিঙ্গা সংকট নিয়ে কঠোরভাবে সমালোচিত হল আন্তর্জাতিক আঙিনায়। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর গৃহবন্দী রয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: মনগড়া কাহিনী সমেত ভাইরাল চিতাবাঘের শিকারের দৃশ্যের এই ছবি