দিল্লি হিংসার ভিডিও ছড়াল কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার মুসলিমদের নিগ্রহ বলে
বুম দেখে ২০২০ সালের ভিডিওটিতে দিল্লি পুলিশ পাঁচ ব্যক্তিকে মারধর করে তাঁদের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করে।
একটি ভিডিও, যাতে দেখা যাচ্ছে যে পাঁচ জন আহত ব্যক্তি রাস্তার উপর পড়ে আছেন এবং নিরাপত্তা কর্মী তাঁদের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করছেন, সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে মিথ্যা দাবি করা হয়েছে যে, জম্মু কাশ্মীরে (Jammu and Kashmir) নিরাপত্তা কর্মীরা রাজস্থানের (Rajasthan) কয়েকজন মুসলিম (Muslim) যুবককে ভারত-বিরোধী স্লোগান দেওয়ার জন্য মারধর করে।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটির এই দাবি মিথ্যে। ভিডিওটি আসলে ২০২০ সালের এবং ভিডিওটিতে দাঙ্গার সময়ে দিল্লির পুলিশকর্মীকে কিছু যুবককে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটির সঙ্গে হিন্দিতে লেখা যে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে তার অনুবাদ, "রাজস্থানের কয়েকজন যুবক কাশ্মী্রে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে তারা পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে শুরু করে! তারা বলতে থাকে যে, ভারতকে কিছুতেই হিন্দু রাষ্ট্র হতে দেব না। ভারতীয় সেনাকর্মীরা এই বিশ্বাসঘাতকদের এমন মার দিয়েছে যা তারা সারা জীবন মনে রাখবে। এর পর থেকে এরকম স্লোগান দেওয়ার আগে এরা একশো বার ভাববে।"
(হিন্দি: राजस्थान से कई मुसलमान लङके कश्मीर घूमने गये।वहां ये लोग जोर शोर से नारे लगाने लगे पाकिस्तान जिंदाबाद!भारत को हिंदू राष्ट्र नहीं बनने देंगे! नारा लगाने वाल लफंगेे देशद्रोहियों को भारतीय सैनिकों ने ऐसे ठोका कि हालत खराब कर दी।अब लुच्चे लफंगे ऐसे नारें लगाने से पहले सौ बार सोचेंगे)
পোস্টটির আর্কাইভ দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: "প্রয়োজনে বিজেপিকে সমর্থন": মিথ্যে দাবিতে ছড়াল মায়াবতীর পুরনো বিবৃতি
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, এবং কিছু পুরানো টুইটে এই একই ক্লিপ দেখতে পায়। সেখানে দাবি করা হয়েছে যে, এই ক্লিপগুলি ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গার যে ঘটনার ভয়াবহতায় গোটা রাজধানী কেঁপে উঠেছিল।
এই সূত্র ধরে আমরা টুইটারে কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং ওই ঘটনার উপর টিওআই প্লাসের একটি ভিডিও রিপোর্ট দেখতে পাই যা ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা হয়েছিল।
ওই সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে ভিডিওতে যে যুবকদের দেখা যাচ্ছিল, তাঁদের মধ্যে এক জন পরে ওই ঘটনায় মারা যান।
আমরা ২০২০ সালের ২৮ মার্চ স্ক্রোলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও দেখতে পাই, সেখানেও ঘটনাটির কয়েকটি ছবি দেওয়া হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "এই ক্লিপে পাঁচ গুরুতর আহত ব্যক্তিকে রাস্তার উপর পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশ তাঁদের মারধর করছে এবং জোরে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে আদেশ করছে। ফৈজান নামে এই পাঁচ যুবকের এক জন রাস্তার পাশে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে আছেন। এই আক্রমণের দু'দিন পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।"
ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, "ঘটনার এক সপ্তাহ পরে পেশায় রঙের মিস্ত্রি কৌসর আলি জানান যে, নিয়তির পরিহাসই তাঁদের পাঁচ জনকে এই অতি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় এক সূত্রে বেঁধেছে। তিনি বলেন, 'আমরা সবাই কর্দমপুরিতে থাকলেও পরস্পরকে চিনতাম না।'" "আমাদের সবাইকে পুলিশ মোটামুটি একই সময় ধরে। তার পর আমাদের টানতে টানতে নিয়ে যায় এবং মারধর করতে শুরু করে। আমরা কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারিনি। ওই ঘটনার পর আমরা যে বেঁচে আছি তা বিশ্বাস করতে পারছি না।"
২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে পুলিশ ফৈজানের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় এক কনস্টেবলকে শনাক্ত করেছে। যে কনস্টেবলের ফোনে ওই ভিডিওটি তোলা হয়েছিল তাঁকে পুলিশ বহু বার জেরা করেছে।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফৈজানের মৃত্যু সংক্রান্ত মামলাটি শুনছেন বিচারপতি মুক্তা গুপ্ত। এই মামলার তদন্তে বিলম্বের জন্য তিনি দিল্লি পুলিশের সমালোচনা করেছেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "কোর্ট পুলিশকে আদেশ দিয়েছে ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (ডিসিপি) রাজেশ দেও'র সই সমেত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পুলিশকে জমা দিতে হবে এবং ২২ ফেব্রুয়ারি বিষয়টির পরবর্তী শুনানি হবে।"
আরও পড়ুন: না, আপ নেতা রাঘব চাড্ডা ভগবন্ত মান সম্পর্কে এই মন্তব্য করেননি