অনুব্রতর ভাইরাল অডিও AI দিয়ে তৈরির ভুয়ো দাবি করল তৃণমূল কর্মীরা
Contrails AI-এর ডিপফেক যাচাইকারী বিশেষজ্ঞরা অডিও ক্লিপটি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন সেটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা হয়নি।



গরু পাচার মামলার পর, পুলিশকে ফোন করে কদর্য ভাষায় আক্রমণের (verbal abuse) অভিযোগে ফের খবরের শিরোনামে বীরভূমের প্রভাবশালী তৃণমূল (TMC) নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)।
প্রথমে, তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশে তার কাজের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি। এমতা অবস্থায় হঠাৎই, কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন অনুব্রত মণ্ডল ফোন করেননি এবং ভাইরাল অডিও এআই (AI) অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) প্রয়োগে তৈরি।
বুম দেখে অনুব্রত মণ্ডলের ভাইরাল অডিওয় কোনও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নেই। Contrails AI-এর বিশেষজ্ঞরা অডিও ক্লিপটি পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেছেন সেটিতে কোনও প্রকৃত মানুষের কণ্ঠস্বরই শোনা যায়।
কেষ্ট ঘনিষ্ঠ ও পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস শিক্ষা বন্ধু সমিতির সভাপতি গগন সরকার বীরভূমের এসডিপিও অফিসের সামনে সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, অনুব্রত পুলিশকে ফোন করেননি এবং ভাইরাল অডিও এআই দিয়ে তৈরি। ১ জুন, ২০২৫-এ রিপাব্লিক বাংলার ভিডিও রিপোর্টে গগন সরকারের বক্তব্য শোনা যাবে।
তথ্য যাচাই: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নেই ভাইরাল অডিওয়
বুম অনুব্রত মণ্ডলের ভাইরাল অডিওর সত্যতা ও সেটিতে কোথাও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ রয়েছে কিনা যাচাই করতে তাদের সহকারী ডিপফেকস অ্যানালিসিস ইউনিটের (ডিএইউ) কাছে অডিওটি পাঠায়।
ডিএইউ অডিওটি পরীক্ষা করতে Contrails AI-এর ডিপফেক যাচাইকারী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অডিওটি শেয়ার করে। তারা বিভিন্ন সরঞ্জাম ও বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে অডিওটিকে পরীক্ষা করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের প্রয়োগের কোনও প্রমাণ পায়নি। এভাবেই তারা নিশ্চিত হয় অডিও ক্লিপটি আসল এবং কোনও প্রকৃত মানুষের কণ্ঠস্বরের।
নীচে Contrails AI-এর করা পরীক্ষার ফলাফল দেখা যাবে।
এই ফলাফলের মাধমে বুম নিশ্চিত হয় গগন সরকারের ভাইরাল অডিওয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ থাকার দাবিটি ভুয়ো।
অনুব্রতর ফোনে পুলিশকে গালিগালাজ ও পরবর্তী:
গত ৩০মে, ২০২৫ তারিখে অনুব্রত মণ্ডলের বোলপুর থানার ইন্সপেক্টর-ইন-চার্জ লিটন হালদারকে ফোন করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়ার একটি অডিও ভাইরাল হয়। শুধু ওই পুলিশ আধিকারিককেই নয়, ভাইরাল অডিওয় তার মা ও স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করেও কদর্য ভাষার ব্যবহার শোনা যায়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে অডিওটি পোস্ট করে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানান।
অনুব্রত মণ্ডলকে চার ঘন্টার মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় সর্ব ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলের একটি পোস্টে। তৃণমূলের তরফ থেকে বলা হয় এর অন্যথায় তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হবে। তৃণমূলের নির্দেশ মেনে নিয়ে একটি চিঠির মাধ্যমে ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি। যদিও তিনি চিঠিতে চক্রান্তের ইঙ্গিত করেছিলেন।
আইসি লিটন হালদারের দায়ের করা এফআইআরের পরিপ্রেক্ষিতে অনুব্রত মণ্ডলকে ৩১ মে ও ১ জুন পরপর দুবার তলব করা হয় থানায়। তবে, তিনি এখনও পর্যন্ত সেই তলব এড়িয়ে গেছেন। ইতিমধ্যেই, তদন্তের স্বার্থে আইসি হালদারের ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।