না, সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদের সমালোচনাকারী ববিতা ফোগাট কুস্তিগিরদের প্রতিবাদে শামিল হননি
বুম যাচাই করে দেখে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদে ববিতা ফোগাট আদৌ শামিল হননি, ভাইরাল ছবিটি ভিনেশ ফোগাট এবং সাক্ষী মালিকের।
ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের কর্তা ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংহের (Brij Bhushan Saran Singh) বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির যন্তর-মন্তরে সংগঠিত প্রতিবাদে শামিল ভিনেশ ফোগাট (Vinesh Phogat) এবং সাক্ষী মালিকের (Sakshee Malikkh) ছবি ভাইরাল করে ভুয়ো দাবি তোলা হচ্ছে, যে-কুস্তিগিররা একদিন শাহিন বাগে (Shaheen Bagh) সিএএ-বিরোধী (Anti CAA Protest) প্রতিবাদের নিন্দায় মুখর হয়েছিলেন, তাঁরাই এখন বিজেপির বিরুদ্ধেই আন্দোলন সংগঠিত করছেন। এই ছবিটির সঙ্গেই ভাইরাল করা হয়েছে বিজেপি সদস্য ববিতা ফোগাটের একটি টুইটও, যাতে তিনি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে শাহিন বাগের সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সমালোচনা করেছিলেন।
বুম দেখে এই দাবি ভুয়ো, কেননা ভিনেশ ফোগাট কিংবা সাক্ষী মালিক কেউই শাহিন বাগের প্রতিবাদ আন্দোলনের নিন্দা করেননি। তাঁদের ছবির পাশে ববিতা ফোগাটের টুইটটি পোস্ট করার উদ্দেশ্য হলো, ববিতাও কুস্তিগিরদের এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন, এটা বোঝানো। কিন্তু সেটা সত্য নয়।
কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা এবং দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ভিনেশ ফোগত, সাক্ষী মালিক এবং বজরঙ পুনিয়া সহ বহু কুস্তিগির নতুন করে তাঁদের প্রতিবাদ শুরু করেছেন। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ফৌজদারি শাস্তির দাবির প্রেক্ষিতে দিল্লি পুলিশ ২৮ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে ২টি এফআইআর দায়ের করেছে।
প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের ছবি শেয়ার করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, “শাহিন বাগে অভিযোগের অধিকাংশ আঙুল উঠেছিল ধর্নায় বসা মুসলিম মা-বোনেদের দিকে। আজ দ্যাখো, তারা কোথায় বসে রয়েছে! আমরা এমনি-এমনিই ৫০০ টাকার বিরিয়ানি স্যালাড সহ পেটে পুরে নিই, তার জন্যে আমাদের কোথাও ধর্নায় বসতে হয় না। মনে রাখা ভালো, সকলের সময় সমান যায় না, সবারই একদিন-না-একদিন সময় আসে। তাই অধিকারের দাবিতে আওয়াজ তোলো। আজ তুমি আওয়াজ তুললে, একদিন তোমার অধিকারের জন্যও অন্যরা আওয়াজ তুলবে!”
পোস্টটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এই পোস্টটি টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে।
টুইটটি দেখুন এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ছবিটিতে ভিনেশ ফোগাট এবং সাক্ষী মালিককে দেখা যাচ্ছে, যাঁরা যৌন হেনস্থা বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখ এবং যাঁদের কেউই শাহিন বাগের সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে শামিল হননি।
খোঁজখবর করে আমরা দ্য ট্রিবিউন পত্রিকায় ২৪ এপ্রিল, ২০২৩ দুই কুস্তিগিরের একটি ছবি সহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে দেখি, যার শিরোনাম ছিল—“ন্যায়বিচারের দাবিতে কুস্তিগিররা ধর্নায় ফিরলেন”। ছবির তলায় ক্যাপশন—‘নয়াদিল্লির যন্তর-মন্তরে রবিবার প্রতিবাদে শামিল ভিনেশ ফোগত ও সাক্ষী মালিক। ছবি, ট্রিবিউন, আলোকচিত্রী: মানসরঞ্জন ভুঁই’।
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
আমরা আরও দেখলাম যে ববিতা ফোগাটের করা ভাইরাল টুইটটি ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারির, যখন শাহিন বাগের সিএএ-বিরোধী আন্দোলন পুরো মাত্রায় চলছিল।
আমরা এটিও লক্ষ করেছি যে, ববিতা ফোগাট যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে মহিলা কুস্তিগিরদের বর্তমান আন্দোলন সমর্থন করেননি, যদিও ভাইরাল পোস্টে সে রকমই দাবি করা হয়েছে। তবে গত জানুয়ারি মাসে সরকারের তরফে তিনি প্রতিবাদের জায়গায় গিয়েছিলেন। কুস্তিগির বজরঙ পুনিয়াকে উদ্ধৃত করে এএনআই জানায়, “ববিতা ফোগাট সরকারের তরফে এসেছিলেন মধ্যস্থতা করতে। আমরা ওঁর সঙ্গে কথা বলব, তার পরেই বিস্তারিত জানাব।”
বস্তুত, ববিতা ফোগাট উল্টে প্রতিবাদীদের সমালোচনাই করেছিলেন, ওঁদের সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী উপস্থিত থাকায়। ২৯ এপ্রিল করা এক টুইটে ববিতা লেখেন, “মহিলা কুস্তিগিরদের ন্যায় বিচার পাওয়াতে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী যন্তর-মন্তরে পৌঁছেছেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব সন্দীপ সিংহকে নিয়ে, কিন্তু এই লোকটি নিজেই মহিলাদের শ্লীলতা হানির দায়ে অভিযুক্ত এবং এক দলিত মহিলাকে দু-পয়সার মেয়েছেলে বলে উল্লেখ করেছিল।”
হিন্দিতে লেখা টুইটটি পড়ুন এখানে।
টুইটটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভিনেশ ফোগাট এমনকী এই টুইটের জবাবও দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “বোন ববিতা! তুমি যদি ক্ষুব্ধ মহিলা কুস্তিগিরদের অধিকারের সমর্থনে নাও দাঁড়াও, তবু হাত জোড় করে তোমায় মিনতি করছি, তাদের আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা কোরো না। যৌন হেন্স্থাকারী ও দুর্ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে মহিলা কুস্তিগিরদের বহু বছর লেগে গেছে। তুমিও একজন মহিলা। নারী হিসাবে আমাদের বেদনাটুকু বোঝার চেষ্টা করো।”
ভিনেশ ফোগাটের হিন্দিতে লেখা টুইট নীচে দেওয়া হলো।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এর বাইরে আমরা ববিতা ফোগাটের আর কোনও টুইট দেখিনি যাতে মনে হয় যে তিনি প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের সমর্থন করছেন। নিজের নাম গোপন করে জনৈক কুস্তিগির বরং সংবাদসংস্থা আইএএনএস-কে জানিয়েছেন—মহিলা কুস্তিগিররা ববিতার দ্বারা কতটা প্রতারিত বোধ করছেনঃ “ও প্রথমে আমাদের ধর্নায় বসতে বাধ্য করে, নির্দেশ দেয় যে কোনও রাজনৈতিক নেতা যেন এখানে প্রতিবাদের মঞ্চে না আসে। আমরা ওর প্রতিটা নির্দেশ মেনে চলি। সব রাজনীতিক নেতাদের বারণ করে দিই আমাদের মঞ্চে আসতে। কিন্তু তার পর ববিতাই ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধ করতে এতে রাজনীতির রঙ লাগায়। ও আমাদের পিছন থেকে ছুরি মারে। অন্যদের কথা ভুলে যান, আমাদের বোন ববিতাই আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে।”
সিএএ-বিরোধী আন্দোলন কিংবা শাহিন বাগ নিয়ে ভিনেশ ফোগাট ও সাক্ষী মালিকের টুইটেরও আমরা খোঁজ করি, কিন্তু সে রকম কিছু আমাদের নজরে পড়েনি।