বাংলাদেশে ধর্ষণ-অভিযুক্তর গণপিটুনির ভিডিও পশ্চিমবঙ্গের দাবি করে ভাইরাল
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত এক কিশোরকে গণপিটুনি দেওয়ার। ভিডিওর সাথে পশ্চিমবঙ্গের কোনও যোগ নেই।



বিক্ষুব্ধ জনতার একটি ছেলেকে গণধোলাই (mob lynching) দেওয়ার বিব্রতকর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) হিন্দু (Hindu) নির্যাতন বলে ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবির সাথে ভাইরাল হয়েছে।
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিও বাংলাদেশের এবং এটি পশ্চিমবঙ্গের কোনও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ঢাকার খিলক্ষেতে ধর্ষণে অভিযুক্ত এক কিশোরকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেওয়ার দৃশ্য দেখা যায় ভিডিওতে।
সম্প্রতি সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার পর, গত ১১ ও ১২ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থেকে ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও অশান্তি। ঘটনায় নিহত হন তিন জন এবং মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আতঙ্কিত বাসিন্দারা মালদায় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। মুর্শিদাবাদের অবস্থা নিয়ে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রীকে বিরোধীরা কটাক্ষ করলে, মমতা বন্দোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করেন।
বুম ভিডিওটির বিব্রতকর বিষয়বস্তুর জন্য প্রতিবেদনে ভাইরাল পোস্টটি অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে
২৪ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিও শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লেখেন, "যেসব হিন্দুরা এখনো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে জেগে আছো এই ভিডিওটী শুধু তাদের জন্য ভাববেন না এটা বাংলাদেশের ঘটনা এটা পশ্চিমবঙ্গে মুশিদাবাদের ঘটনা ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন এবং সকলের কাছে পৌঁছে দিন অনুরোধ করছি।"
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ভাইরাল ভিডিওর কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২৫ মার্চে এক বাংলাদেশী ব্যবহারকারীর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ভিডিওটির একটি দীর্ঘতর সংস্করণ দেখতে পায়। এর থেকে বোঝা যায়, ভিডিওটির সঙ্গে মুর্শিদাবাদে এপ্রিল মাসে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির সঙ্গে এটি সম্পর্কিত নয়।
এরপর, আরও একবার রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম সময় নিউজ টিভির ২০২৫ সালের ১৯ মার্চের প্রতিবেদনে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট দেখতে পাই।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ঘটনাটি ১৮ মার্চ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের খিলক্ষেত এলাকার। একটি শিশুকে ধর্ষণ করার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কিশোর গণপিটুনিতে আক্রান্ত হয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে, খিলক্ষেত থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন অভিযুক্ত কিশোরকে মারধর করার খবর পেয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের উপর আক্রমণ করে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে এবং অভিযুক্ত কিশোরকেও ফের মারধর করে।
ঘটনায় খিলক্ষেত থানার ওসি আশিকুর রহমান সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মীও আহত হন। অভিযুক্ত কিশোর গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
একুশে টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ১৮ মার্চ, ২০২৫-এ এই ঘটনা সংক্রান্ত প্রকাশিত ভিডিও রিপোর্টেও ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ দৃশ্য দেখা যায়।