মহারাষ্ট্রে জেসিবি দিয়ে ষাঁড় নিকেশের ভিডিও উত্তরপ্রদেশের বলে ছড়াল
বুম দেখে ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্রের পুণের একটি গ্রামে রুগ্ন বৃদ্ধ ষাঁড়কে গ্রামবাসীরা হত্যা করে।
বুলডোজারের (Bulldozer) সাহায্যে একটি ষাঁড়কে মেরে ফেলার অস্বস্তিকর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে একটি ভিডিওতে। যে ক্যাপশন-সহ ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে, তাতে বলা হয়েছে, প্রাণীটিকে সম্প্রতি এই ভাবে হত্যা করা হয় উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh)। এবং সে রাজ্যে বেওয়ারিশ গরু মেরে ফেলার এটি একটি নতুন পদ্ধতি।
বুম দেখে, দাবিটি মিথ্যে। ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের পুণে জেলার একটি গ্রামে ২০১৯ সালে ঘটেছিল। হিন্দি ক্যাপশন সহ ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে।
ক্যাপশনটিতে বলা হয়েছে, "বুলডোজার-বাবা কি মূর্তি ধারণ করেছেন? পুলিশের উচিত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। বেওয়ারিশ প্রাণীদের সরিয়ে দেওয়ার এটা কি এক নতুন উপায়?"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: यह कौन सा रूप धारण कर लिया बुलडोजर बाबा ने. पुलिस आरोपियों की पहिचान कर कड़ी सज़ा दे ল य़ह फिर आवारा पशुओं को खत्म करने का यह नया तरीका हैl)
ভিডিওটিতে, বুলডোজার দিয়ে একটি ষাঁড়কে কোণঠাসা করতে দেখা যাচ্ছে। এবং বুলডোজারটির মাটি তোলার বিরাট যন্ত্রটি দিয়ে ষাঁড়টিকে বীভৎস ভাবে পিষে মারা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথকে 'বুলডোজার বাবা' বলা হয়। তাই ক্যাপশনটিতে তাঁর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সতর্কতা: ভিডিওটির দৃশ্যগুলি কিছু দর্শককে বিচলিত করতে পারে। দেখবেন কিনা তা বিবেচনা করবেন।
পোস্টটি দেখতে এখানে ও এখানে ক্লিক করুন।
অন্য একটি ফেসবুক পোস্টেও একই ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে একটি হিন্দি গান। সেই সঙ্গে ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "এমন নয় যে, বুলডোজার কেবল ভাল কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশের উচিত অভিযুক্তদের শনাক্ত করে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া। বেওয়ারিশ জীবদের সরানোর এ এক নতুন পন্থা। এটা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি। নির্দোষ প্রাণীদের বিরুদ্ধে এই বুলডোজারটি ব্যবহার করা হচ্ছে।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: जरूरी नहीं है बुलडोज़र का इस्तेमाल अच्छे कार्यों के लिये ही हो रहा हो पुलिस आरोपियों की पहचान कर कड़ी सज़ा दे l य़ह फिर आवारा पशुओं को खत्म करने का यह नया तरीका हैl हद हो गई इस बुलडोजर से, निर्दोष बेजुबान जानवर पर भी चलने लगा बुलडोजर सत्ता का नशा.)
আরও পড়ুন: টুইটের ভুয়ো দাবি পুণের নাবালিকা ধর্ষণে অভিযুক্ত আত্মীয়রা মুসলিম
তথ্য যাচাই
'বুল এক্সিকিউটেড বাই বুলডোজার' (বুলডোজার দিয়ে মারা হল ষাঁড়) – এই কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি আমরা। তার ফলে, নভেম্বর ২০১৯-এ 'মুম্বাই মিরর'-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। ভাইরাল ভিডিওটির আরও স্পষ্ট এক সংস্করণ ছিল তাতে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মহারাষ্ট্রের পুণে জেলার ইন্দাপুর শহরে ঘটনাটি ঘটে। ওই রিপোর্টে প্রকাশিত গ্রামবাসীদের বয়ান অনুযায়ী, ষাঁড়টিকে মারা হয়, কারণ কৃষকরা ওই বৃদ্ধপ্রাণীটির দেখভাল করতে পারছিলেন না।
আমরা ওই ঘটনা সংক্রান্ত আরও খবরের সন্ধান করতে থাকি। ওই বীভৎস হত্যার পেছনে অন্য একটি কারণের কথা 'মিড-ডে'তে বলা হয়।
মিড-ডে'র রিপোর্ট অনুযায়ী, রেবিস-আক্রান্ত একটি কুকুর ষাঁড়টিকে কামড়ে দেয়। তারপর থেকে সেটি গ্রামবাসীদের আক্রমণ করতে থাকে। তাই সেটিকে মেরে ফেলা হয়। রিপোর্টটিতে ভাইরাল ভিডিওটি থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট ছিল।
ভিগওয়ান থানার অ্যাসিস্টেন্ট পুলিশ ইনস্পেক্টর জীবন মানে মিড-ডে'কে বলেন, "ষাঁড়টি অসুস্থ ছিল। একটি পাগলা কুকুর তাকে কামড়ে দেওয়ার পর থেকে সে গ্রামে তাণ্ডব চালাচ্ছিল। কুকুরটি ছিল রেবিস-আক্রান্ত,"।
'লেটেস্টলি'তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ষাঁড়টি "বুড়ো হয়ে গিয়েছিল ও অসুস্থ ছিল"। সেই কারণেই মারা হয় সেটিকে। সব ক'টি প্রতিবেদনেই বলা হয় যে, ষাঁড়টিকে মারার জন্য দু'জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ষাঁড়টি রেবিস-আক্রান্ত ছিল কিনা, বুম তা নির্ণয় করতে পারেনি। কিন্তু ঘটনাটি যে মহারাষ্ট্রে ঘটেছিল, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রতিবেদনগুলি থেকে এও স্পষ্ট যে, 'বেওয়ারিশ জীব' সরানোর ঘটনা ছিল না এটি।
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়াল উত্তরাখণ্ডে খুন হওয়া সুটকেস ভরা মহিলার ভিডিও