সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়াল উত্তরাখণ্ডে খুন হওয়া সুটকেস ভরা মহিলার ভিডিও
উত্তরাখণ্ড পুলিশ বুমকে জানিয়েছে অভিযুক্ত এবং খুন হওয়া মহিলা দুজনেই একই ধর্মের, ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই।
উত্তরাখণ্ডে (Uttrakhand) সুটকেসে (suitcase) মহিলার দেহ সমেত এক ব্যক্তিকে আটক করার অস্বস্তিকর ভিডিও মিথ্যা দাবির সঙ্গে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। ভিডিওর সঙ্গে সাম্প্রদায়িক দাবি (communal claims) করা হচ্ছে, দেহটি এক হিন্দু মহিলার, যিনি তার মুসলমান প্রেমিকের হাতে খুন হয়েছেন।
বুম উত্তরাখণ্ড পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ঘটনাটির সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক ব্যাপার জড়িত নেই বলে জানায়। তারা জানিয়েছে যে, অভিযুক্ত এবং মৃতা দু'জনে একই সম্প্রদায়ের। দু'জনেই মুসলমান।
ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে এক মহিলাকে খুন করার বিষয়ে জেরার সম্মুখীন হতে দেখা যাচ্ছে। একটি হোটেলে এই ব্যক্তির সুটকেসে মৃতদেহটি পাওয়া যায়।
ভিডিওটির সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "যে সব হিন্দু মেয়েরা আবদুলের স্বপ্ন দেখে, তারা আরও এক বার শিক্ষা পেল। গুলশের খান তার বান্ধবী কাজলের মৃতদেহ খালে ফেলে দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু #উত্তরাখণ্ডের একটি হোটেলের বাইরে সুটকেসে দেহসমেত ধরা পড়ে যায়। #নির্লজ্জ # লাভজিহাদ #পুষ্করসিংধামি।"
অস্বস্তিকর বলে বুম ভিডিওটি এখানে দেয়নি।
ভিডিওটিও সোশাল মিডিয়ায় মিথ্যে দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে যে, মৃত মহিলার নাম কাজল এবং তিনি হিন্দু।
তথ্য যাচাই
বুম অনুসন্ধান করে দেখতে পায় যে, মৃতা এবং অভিযুক্ত দু'জনে একই সম্প্রদায়ের, এবং এই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই, যেমনটা সোশাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া পোস্টের সূত্র ধরে আমরা কিছু বাছাই কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি, এবং ওই ঘটনার উপর অনেকগুলো সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই। ওই প্রতিবেদনগুলিতে অভিযুক্তের নাম গুলজেব এবং নিহতের নাম রামশা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইটিভি ভারতের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ উত্তরাখণ্ডের পিরান কালিয়ার অঞ্চলে একটি সুটকেস থেকে এক মহিলার মৃতদেহ পাওয়া যায় এবং ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে ওই মহিলার সম্পর্ক ছিল। প্রতিবেদনটিতে হরিদ্বারের এস পি রুরাল প্রমেন্দ্র ডোভালের মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয় যে, অভিযুক্ত যুবক মেয়েটিকে খুন করে এবং তাঁর দেহ একটি সুটকেসে ভরে ফেলে দিতে যাচ্ছিল।
ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, পুলিশ জানতে পেরেছে, মেয়েটির যে আইডি দেখিয়ে হোটেলে ঘর বুক করা হয়েছিল, সেটি ভুয়ো ছিল এবং মেয়েটি ম্যাঙ্গালোরের ও অভিযুক্তের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
ইটিভি ভারতের ভিডিও প্রতিবেদনে আমরা দেখতে পাই, উত্তরাখণ্ড পুলিশ যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, ভাইরাল ভিডিওতেও সেই একই ব্যক্তিকে দেখা গেছে।
বুম উত্তরাখণ্ডের কলিয়ার শরিফ থানার স্টেশন অফিসার ধর্মেন্দ্র রাঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক ব্যাপার জড়িত থাকার অভিযোগটিকে উড়িয়ে দেন, এবং জানান যে, অভিযুক্ত এবং নিহত দুজনেই মুসলিম ও তারা পরস্পরের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
এস ও রাঠী বলেন, "ভিডিওতে যে অভিযুক্তকে দেখা যাচ্ছে তার নাম গুলজেব হুসেন, তার বাবার নাম সানাওয়ার, এবং নিহতের নাম রমশা, বাবার নাম রশিদ। দু'জনেই মুসলিম। তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন সম্পর্ক ছিল। তাঁরা পরস্পরের দূর সম্পর্কের আত্মীয়ও বটে। মেয়েটি যুবককে বিয়ে করতে অস্বীকার করার পরই ওই যুবক তাঁকে খুন করে।
আরও পড়ুন: টুইটের ভুয়ো দাবি পুণের নাবালিকা ধর্ষণে অভিযুক্ত আত্মীয়রা মুসলিম