চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মন্দিরে কোরান পোড়ানো হয়নি, ভাইরাল ভিডিও অসম্পর্কিত
বুম দেখে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ একটি বিবৃতিতে নিশ্চিত করে কোরান পোড়ানোর ভাইরাল ভিডিওটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মন্দিরের নয়।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দুর্গা প্রতিমার সামনে মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরান (Quran) পুড়িয়ে ফেলার একটি ভিডিও শেয়ার করে ব্যবহারকারীরা ভুয়ো দাবি করেছেন ভিডিওতে বাংলাদেশের (Bangladesh) চট্টগ্রামের (Chittagong) হাটহাজারীর মন্দিরে (temple) হিন্দুত্ববাদীরা এই কাজটি করেছে।
বুম দেখে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ একটি বিবৃতিতে নিশ্চিত করে কোরান পোড়ানোর ভাইরাল ভিডিওটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মন্দিরের নয়।
ভাইরাল দাবি
ভাইরাল ভিডিওয় দুর্গা প্রতিমা রয়েছে এমন একটি ঘরের মধ্যে এক ব্যক্তিকে কোরানে লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে মেঝেতে ফেলে দিতে দেখা যায়। এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে ঘটনাটি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মন্দিরের দাবি করে লেখে, "আজকে চট্টগ্রাম হাটহাজারীতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি'রা তাদের মন্দিরে পবিত্র কুরআন শরীফকে পুড়িয়ে ফেলেছে। কতটা মুসলিম বিদ্বেষী উগ্রপন্থী হলে এমন কাজ করে আবার তাদের উগ্রবাদী বিভিন্ন গ্রুপে আপলোড করে। দিন দিন এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি'রা সীমালঙ্ঘন করেই যাচ্ছে। ছাড় দিতে দিতে এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছেনা।এদের কে যদি আজ-কালের মধ্যে উপযুক্ত শাস্তি না দেওয়া হয় তাহলে এরা আরো উগ্রবাদী হয়ে যাবে।'
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অনুসন্ধানে আমরা কী পেলাম
১. ঘটনা সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদন: বুম সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে ঘটনা সংক্রান্ত বাংলাদেশী গণমাধ্যমের প্রকাশিত একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন পায় যেখানে পুলিশকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে ভিডিওটি হাটহাজারী মন্দিরের নয়। স্বদেশ প্রতিদিনের ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর প্রতিবেদন অনুসারে, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল বলেন, "ভিডিওটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং অসৎ উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছে। সবাইকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মাঠে ও অনলাইনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বিভ্রান্তিকর প্রচারণা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
২. চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিবৃতি: আমরা চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে গত ২২ সেপ্টেম্বরের একটি পোস্ট পাই। পোস্টের ক্যাপশন অনুসারে, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ কিছু স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে ভাইরাল দাবির তদন্ত করতে ওই মন্দির পরিদর্শনে যান। তারা জানান, মন্দিরে একটি স্থায়ী দেবী কালীর প্রতিমা রয়েছে এবং তাদের যাওয়া অবধি কোনও দুর্গা প্রতিমা সেখানে ছিল না। এছাড়াও, ভিডিওতে দৃশ্যমান মেঝেতে টাইলস দেখা যায় যা বাস্তবে হাটহাজারীর মন্দিরে নেই। ওই বিবৃতিতে পুলিশের তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে, হাটহাজারী থানার অধীনে কোনও মন্দিরই ভাইরাল ভিডিওর সদৃশ নয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস শাখার তরফ থেকেও একটি ফেসবুক পোস্টার মাধ্যমে ভাইরাল দাবিটি খণ্ডন করা হয়েছে। দেখুন এখানে।
যদিও বুম স্বাধীনভাবে ভিডিওটির উৎস নিশ্চিত করতে পারেনি তবে, ঘটনাটি যে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মন্দিরের নয় তা আমাদের অনুসন্ধানে স্পষ্ট হয়েছে।