চিনে দ্রুত গতির ভাসমান ট্রেন বলে ছড়াল Video Game-এর দশ্য
বুম দেখে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি কম্পিউটারে তৈরি ভিডিও গেম এটি চিনের ম্যাগলেভ ট্রেন নয়।
চিনে দ্রুততম প্রযুক্তির ম্যাগলেভ ট্রেন (Maglev) উদ্ভাবনের খবরের সঙ্গে সম্পর্কহীন ভিডিও গেমের দৃশ্য (simulation video game) জুড়ে বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করা হচ্ছে।
৪ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায় ভাসমান অবস্থায় প্রায় উড়ে যাচ্ছে ট্রেন। ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ''চীনের ভাসমান ট্রেন৷ ড্রাগনের দেশের নতুন ট্রেন।'' (বানান অপরিবর্তিত)
একই ভিডিও শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ''ভাসমান ট্রেন। ভাবা যায়!!''
ভিডিওটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এই ভিডিওর পাশাপাশি কিছু নেটিজেন একটি সংবাদের ক্লিপ ও শেয়ার করেছেন যার শিরোনাম, ''ভাসমান ট্রেন যাত্রা শুরু চিনে।''
ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ''কিন্তু এই নয়া ট্রেন বা ফ্লোটিং ট্রেনের গতি হবে ঘন্টায় ৬২০ কিমি। একেবারেই চাকাবিহীন এই হাই স্পিড ম্যাগলেভ ট্রেনের প্রথম যাত্রায় আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা হল বুধবার চেংদু শহরে।... এইচ টি এস (হাই টেম্পারেচর সুপার কান্ডাকটিং) প্রযুক্তিতে চলে ট্রেনটি। শক্তিশালী চুম্বকের বাক্সগুলিই ট্রেনটিকে রেল ট্রাকের উপর ভেসে থাকতে সাহায্য করবে।''
বুমের হেল্পলাইনে বিষয়টির তথ্য যাচাইয়ের জন্য ওই সংবাদ ক্লিপিং ও ভিডিওটি এক সঙ্গে পাঠানো হয়েছে।
তথ্য যচাই
বুম ভিডিওটির কয়েকটি মূল ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে দেখে, এটি চিনের উচ্চ প্রযুক্তির ভাসমান ট্রেন বা ম্যাগলেভ ট্রেনের ভিডিও নয়।
বুম 'ফ্লাইং ট্রেন' লিখে কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখে এই ধরণের একাধিক ভিডিও রয়েছে ইউটউবে। এরকম একটি ভিডিও দেখা যাবে এখানে। এই ভিডিওতে উল্লেখ করা হয় 'ডেন্ডি কোমারা'-এর।
ডেন্ডি কোমারা রেলফ্যান্স আইডি (Dendi Komara Railfans Id) নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে আরেকটি এরকম ভিডিওটি আপলোড করা হয় ১১ অগস্ট ২০২০।
মালয় ভাষায় লেখা ভিডিওটির শিরোনাম লেখা হয়, "আকাশ থেকে আসা প্লেন শুধুমাত্র খেলা।" (মূল মালয় ভাষায় শিরোনাম: Kereta Api Turun dari Langit) ১৮ সেকেন্ড সময়ের পর থেকে দেখা যাবে ওই ভিডিওটি।
ওই ভিডিওর পরিচিতিতে লেখা রয়েছে 'ট্রেনজ রেলরোড সিমুলেটর ২০১৯', (Trainz Railroad Simulator 2019) যা একটি ভিডিও গেম।
চিনের ম্যাগলেভ ট্রেন ও খবর
বুম দেখে ভাইরাল হওয়া সংবাদ পত্রের ক্লিপিংটি ২০ জানুয়ারি সংবাদ প্রতিদিনের ৮ পাতায় প্রকাশিত খবরের অংশ। ওই প্রতিবেদনে চিনের ম্যাগলেভ ট্রেনের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পড়া যাবে এখানে।
১৫ জানুয়ারি ২০২১ প্রকাশিত স্কটিশ সানের প্রতিবেদন অনুযায়ী চিনের সাউথওয়েস্ট জিয়াটং ইউনিভার্সিটির একদল গবেষেক চালকবিহীন এই ট্রেন তৈরি করেছেন। চেংদু (Chengdu)-তে পরীক্ষামূলক ভাবে বিশেষ লাইনের উপর ওই ট্রেনের প্রাথমিক রূপের (Prototype) পরীক্ষা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।
চিন জিনহুয়া নিউজ এই ট্রেনটির ভিডিও টুইট করে ১৬ জানুয়ারি ২০২১।
Superfast! A domestically developed maglev train prototype has been unveiled in Chengdu, China. The superconductor technology the train employs could make it faster and lighter than its peers pic.twitter.com/51waWPX66E
— China Xinhua News (@XHNews) January 16, 2021
কারিগরি দিক
বুম এই উচ্চ গতি সম্পন্ন ট্রেনের ক্রিয়া পদ্ধতি জানতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুশান্ত রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি জানালেন, ''সব উচ্চপ্রযুক্তির ম্যাগলেভ ট্রেন চলে ভাসমান অবস্থাতেই। ট্রেনের পাত ও বগির মধ্যের দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সেন্সর থাকে। সুপার কন্ডাক্টার বেশি পরিমান বিদ্যুৎ পরিবহনের মাধ্যমে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তরিৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে যার ফলে আরও দ্রুত অগ্রসর হয় সংশ্লিষ্ট যানটি। এই ক্ষেত্রে শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার দুটি কারণে, প্রথমত ট্রেনটিকে ভাসাতে পারবে এবং দ্বিতীয়ত দ্রুত গতি দিতে পারবে।''
''উচ্চ প্রযুক্তিতে তৈরি সুপার কন্ডাক্টরকে যদি ঘরের তাপমাত্রায় কার্যকরি করা যায়, তাহলে তা অত্যন্ত ভালো যা তাপমাত্রা কম রাখার জন্য খরচ ও জটিলতা কমাবে।
আরও পড়ুন: ২০১১ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসে বিহারের মানের শরিফের ট্যাবলোকে বলা হল টিপু সুলতান